(প্রথম পর্ব)
দানবীয় আগ্রাসন চলছে সর্বত্র! রাজ্য জুড়ে, দেশ জুড়ে, পৃথিবী জুড়ে.. মুক্ত চিন্তার ওপর, পড়াশোনার ওপর, নিরাপত্তার ওপর। ‘হ্যাভস’-দের আক্রমণ চলছে ‘হ্যাভ নটস’-দের ওপর।
বাদ নেই পরিবেশও!
কিন্তু চলছে তার বিরুদ্ধে চলছে সংগ্রাম,তীব্র সংগ্রাম।
পুঁজিবাদ বনাম পরিবেশ, দ্বন্দ্ব মুখোমুখি।
আমরা যারা মার্কসবাদের ছাত্র, তারা জানি যে মূল কথা- শ্রম বনাম পুঁজির দ্বন্দ্ব। এর ওপর ভিত্তি করে আরো ৪টি দ্বন্দ্ব যার মধ্যে দিয়ে সমাজ চলেছে। মালিক বনাম শ্রমিক, উন্নত পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশ বনাম উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের দেশ, পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর নিজেদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব, সাম্রাজ্যবাদ বনাম সমাজতন্ত্র!
এতো কথা আজ বলছি তার কারণ এতো মৃত্যু এতো ক্ষয়ক্ষতি, এতো ধ্বংস চারিদিকে.. ভালো নেই আমরা কেউ, তখন আরো একটি দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে প্রতিদিন। পুঁজি বনাম পরিবেশ! খুব স্পষ্ট ভাবে এই কথাটি আসে একেবারে সামনে চলে আসে ২০১৪ এ নাওমিক্লেইন তাঁর এক বই তে ‘পুজিবাদ বনাম পরিবেশ কথাটি সাবটাইটেল হিসেবে ব্যবহার করেন।
কখনো ব্রাজিলের বোলসেনারো পোড়াচ্ছেন আমাজন অরণ্য, যাকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়! কখনো ট্রাম্প জানিয়ে দিচ্ছেন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ কমানোর প্যারিস চুক্তিতে তারা শরিক থাকবে না। আবার কখনো 'সৌন্দার্যায়ন'-এর নামে ধ্বংস করা হচ্ছে মালদ্বীপের নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আইপিসিসি’র রিপোর্ট অনুযায়ী গত এক শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ১.৫০% এবং প্রতি এক দশকে টা ০.০১-০.০৩% হারে বেড়েই চলেছে।
‘এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স’ সূচকে এ দেশের স্থান সবার নিচে।
এই অতিমারির সময়ে, আরো দাঁত নখ বের করে নিজের স্বরূপ দেখাচ্ছে মোদি সরকার! ট্রাম্প, বোলসেনারোর মতোই নিজের ফ্যাসিস্ট চেহারা দেখাচ্ছে বিজেপি সরকার! এই আগ্রাসনের শিকার হতে বাদ নেই পরিবেশ!
অতিমারির সুযোগ নিয়ে পেশ হলো ‘ইআইএ ২০২০’! তৈরি হলো পরিবেশকে কর্পোরেটদের হাতে বেচে দেওয়ার ব্লুপ্রিন্ট! অযোধ্যা থেকে লাক্ষাদ্বীপে আদিবাসীরা হারাচ্ছেন জল-জঙ্গল-জমির অধিকার! বাজারের কাছে আরাবল্লী থেকে হিমালয় নিলাম করার রাস্তা খুলে গেল! বেআইনি ভাবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে খনিজ সম্পদ। বেড়েই চলেছে পরিবেশ ধ্বংসের শিকার উদ্বাস্তু।
আমরা জানি গত ৫০ বছরে রাজস্থানের আরাবল্লি পার্বত্য অঞ্চলের ১২০টি পর্বতের মধ্যে ৩১টি উধাও হয়ে গেছে! ধ্বংস হয়ে গেছে দেশের ৯০ শতাংশ ‘বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট’। ২০২২’র পরিবেশ রক্ষা জনিত সূচক বা ইপিআই’র নিরিখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আমাদের দেশকে এনে দাঁড় করিয়েছে ১৮০’র মধ্যে ১৮০-তে! ভারত একদম শেষেই!
সবুজায়নের নামে ‘কার্বন ভান্ডার’ নির্মাণের যে পদক্ষেপ নেওয়াহয়েছে, তা আরো বিপদজনক। একদিকে যেমন বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। পাশাপাশি অরণ্যবাসীরা অরণ্যের সাধারণ অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। অরণ্য সম্পদের বাণিজ্যিকীকরণের রাস্তা আরো মসৃণ করতে ও কর্পোরেটের অনুপ্রবেশ সুনিশ্চিত করতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি অর্থাৎ বন বিষয়ক পরামর্শদাতা কমিটি প্রকল্প নিয়েছে; নাম ‘গ্রিন ক্রেডিট স্কিম’। এর মাধ্যমে অরণ্যকেও অন্য যে কোন পণ্যের মতো সরকার চাইলে বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করতে পারে। প্রকল্প শুরুর জন্য পরিবেশবিধি মানার দায়িত্ব কার্যত তুলে নেওয়া হলো। আদিবাসীদের নিজেদের জল জঙ্গল জমির ওপর কার্যত আর কোনও অধিকার থাকবেনা।
পরিবেশ ভাবনা নেই রাজ্য সরকারেরও!
আমাদের রাজ্য সরকারেরও আছে গালভরা প্রতিশ্রুতি, নানান দপ্তর কিন্ত নেই কোন পদক্ষেপ। বরং দিনের পর দিন ধরে সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে খাল, বিল, নালা। পুকুর,খোলা মাঠ বুজিয়ে তৈরি হয়ে চলছে বাড়ি। পূর্ব কলকাতার জলাভূমি, যাকে কলকাতার ফুসফুস বলা হয়, যা কিনা ‘রামসার সাইট’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত, সেটিকেও প্রোমোটিংয়ের জন্য ছেড়ে দিতে পিছপা নয় এই সরকার। ধ্বংস হচ্ছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল! আমাফান, ইয়াস ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মূলত দক্ষিণবঙ্গ ও ছোট নাগপুর অঞ্চলের পরিবেশের যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে,তা নিয়েও কোন রা নেই সরকারের। খর্ব হচ্ছে আদিবাসীদের জল জঙ্গল জমির অধিকার। মুনাফার লোভে ধ্বংস হয়ে চলেছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। কৃষকদের ফলনের জন্য মাটির গুণমান বাড়াতে না আছে কোনও সহায়তা,না আছে মৎসজীবীদের জীবিকার সুরক্ষা!
দেউচাপাঁচামির খোলা মুখ কোল মাইন যা স্থাপিত হলে উচ্ছেদ হবেন ওই অঞ্চলের বহু শ্রমজীবী মানুষ, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হবে পরিবেশের তার দায়িত্ব সঁপেদেওয়াহয়েছেকর্পোরেটের হাতে রাজ্য সরকার তরফে।
Comments :0