Adeno virus

রোজ অন্তত ৬০০ শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে

রাজ্য জেলা কলকাতা

Adenovirus child death kolkata bengali news বিসি রায় হাসপাতালে শিশুকে ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছে তার মা। বৃহস্পতিবারের তোলা ছবি।

অ্যাডিনোর দাপটে প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে শ’য়ে শ’য়ে শিশু। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছে মৃত্যু মিছিল। জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে এই মুহূর্তে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুর সংখ্যা ৪৫০০ ছাড়িয়েছে।  দৈনিক অন্ততপক্ষে ৬০০ শিশুকে নতুন করে ভর্তি করতে হচ্ছে হাসপাতালে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরই বৃহস্পতিবার এই রিপোর্ট দিয়েছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত ১৩ হাজারের ওপর শিশু অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন রোগে আক্রান্ত। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী এই সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজারের কম নয়। অন্যদিকে বেসরকারি মতে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসাধীন শিশুর সংখ্যাও সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানের থেকে অনেকটাই বেশি বলে জানা যাচ্ছে। কারণ স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া ওই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালগুলির। এর সঙ্গে যোগ হবে বেসরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যানও। 


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য এই পরিসংখ্যান আদৌ বাস্তব চিত্রকে প্রতিফলিত করছে না। অন্যদিকে মৃত্যু নিয়েও তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠছে সরকারের বিরুদ্ধে। সরকারি পরিসংখ্যানে মৃতের সংখ্যা মাত্র ১৯ বলে জানানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র মারফৎ গোটা রাজ্য জুড়ে গত জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে গেছে। 

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ১০ দিন আগে রাজ্যে শিশু মৃত্যুর মোট সংখ্যা ১৯ বলে জানিয়েছিলেন। সেই থেকে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে এই সংখ্যাটিই নির্ধারিত হয়ে গেছে বরাবরের জন্য! গত ১০ দিনে গড়ে ৫-৬টি করে শিশু মারা গেলেও তার কোনো উল্লেখ নেই স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্টে। রাজ্যে মোট মৃত্যু ১৫০ ছাড়াতে চললেও সেই তথ্য কোনোভাবেই সামনে আসছে না বলে অভিযোগ অসংখ্য ভুক্তভুগী পরিবারগুলিরও। এই ১৫০টি শিশুর মধ্যে বহু  শিশু অ্যাডিনো ভাইরাসের শিকার হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা নিউমোনিয়া বলে চালানো হয়েছে- এই অভিযোগও জোরালো হয়েছে হাসপাতালগুলিতে। কোমর্বিডিটিজ তত্ত্ব সামনে খাড়া করেছে নবান্ন। 


সরকার একদিকে মুখে বারবার বলছে, অ্যাডিনো কমে এসেছে। আর অন্যদিকে হাই লেভেল টাস্ক ফোর্স গঠন করে নির্দেশিকার পর নির্দেশিকা জারি করছে ক্রমাগত। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাঁদের বক্তব্যেই এই উদ্বেগ ঝরে পড়েছে। কলকাতার বিসি রায় শিশু হাসপাতাল সহ বিভিন্ন শিশু হাসপাতালগুলিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেড না পাওয়ার অভিযোগ যেমন তীব্র হয়েছে তেমনই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার উপকরণ বা সরঞ্জামের অভাবের কথা উঠে এসেছে ভুক্তভুগী পরিবারগুলির মধ্যে থেকে। দিনের পর দিন তীব্র হয়েছে হাহাকার। তড়িঘড়ি একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে এবার পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে নবান্ন।

এদিকে অ্যাডিনো ভাইরাস বেশ ভালোই থাবা বসিয়েছে রাজ্যে। ইতিমধ্যে নাইসেড পরিস্কারভাবেই বলেছে পশ্চিমবঙ্গ অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণে দেশের মধ্যে প্রথম। শুধু তাই নয়, জানা গেছে, বিভিন্ন আইসিএমআর ল্যাবে যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাতে ৩৮ শতাংশ অ্যাডিনো ভাইরাস মিলেছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ১৭০৮টি স্যাম্পেলের মধ্যে ৬৫০টি স্যাম্পেলে অ্যাডিনো ভাইরাস মিলেছে যা শতাংশের দিক থেকে গোটা দেশে প্রথম স্থানে। 


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের এক বড় অংশের মতে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এখন কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় তা বোঝাচ্ছেন রাজ্যবাসীকে। প্রথম থেকে সতর্ক হলে এত মায়ের কোল খালি হয়ে যেত না। শুধু মনিটরিং করে কি লাভ হবে? যদি আরও পর্যাপ্ত ক্রিটিক্যাল বেড, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা না করা যায়, আইসিইউ-এর জন্য প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্সের যোগান না দেওয়া যায় তাহলে প্রতিদিন একটি করে নির্দেশিকা বার করলেও হাসপাতালের পরিকাঠামো সেই বেহালই থাকবে, নিয়ন্ত্রণে আসবে না শিশুমৃত্যুও।                        

Comments :0

Login to leave a comment