বিকাশ ভট্টাচার্য এবং মধুচ্ছন্দা দেব জানাচ্ছেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করছেন মেয়র।
শুক্রবার ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই বাজেট অনুযায়ী, আগামী দিনে ৪৫৪০.৭৯ কোটি টাকা আয় হবে কলকাতা কর্পোরেশনের। ব্যায়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬৮৬.৭৯ কোটি টাকায়। আনুমানিক ঘাটতির পরিমাণ থাকবে ১৪৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেটে এই ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১৭৭ কোটি টাকা। বছর শেষের সংশোধিত বাজেটে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২১৮ কোটিতে। মেয়র স্বীকার করেছেন, কর্পোরেশনের প্রারম্ভিক ঘাটতি ২০২৫.৯৬ কোটি থেকে বেড়ে হবে ২১৭১.৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, চলতি বছরের আনুমানিক ঘাটতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
মেয়রের যদিও দাবি, কলকাতা কর্পোরেশন সম্পত্তি কর থেকে আয় বাড়িয়েছে। মেয়রের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এর আগে সম্পত্তি কর থেকে কর্পোরেশনের আয় ছিল ৮৯০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি অবধি কর্পোরেশন সম্পত্তি কর বাবদ সংগ্রহ করেছে ৯৭৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মার্চ মাসের হিসেব ধরলে সেই পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১১০০ কোটিতে। ফিরহাদ জানিয়েছেন, সম্পত্তি কর ছাড়াও পার্কিং, বিজ্ঞাপন, লাইসেন্স বিভাগ থেকেও আগের তুলনায় বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে কর্পোরেশনের।
কর্পোরেশনের তহবিলে ঘাটতি থাকার জন্য মেয়র সরাসরি দায়ি করছেন পে কমিশনকে। তাঁর বক্তব্যের অভিমুখ, কর্মচারীদের বেশি বেতন দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে কর্পোরেশন। কিন্তু মেয়রের এই দাবি কতটা সঠিক?
কর্পোরেশনের অ্যাকাউন্টস বিভাগের আধিকারিকদের বক্তব্য, কর্মচারীদের মাসিক বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা দেয় কর্পোরেশন। বাকিটা দেয় রাজ্য সরকার। আর কর্মচারীদের পেনশনের ৩৫ শতাংশ টাকা দেয় কর্পোরেশন। যদিও পে-কমিশনের ফলে বর্ধিত টাকার পুরোটাই দিতে হয় কর্পোরেশনকে। কারণ রাজ্য গত ২ বছর ধরে এই খাতে কোনও সাহায্য করছে না। এছাড়া চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতনের পুরো দায়িত্ব কর্পোরেশনের। সব মিলিয়ে স্থায়ী কর্মচারীদের বেতন, পেনশন এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের বেতন খাতে প্রতি মাসে ১২০ কোটি টাকা খরচ করে কর্পোরেশন। যদিও তার মধ্যে ৭৫-৮০ কোটি টাকার রাজ্যের থেকে ফেরত পায় কর্পোরেশন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে কর্পোরেশনের মোট খরচ দাঁড়ায় ২৮-৩০ কোটিতে।
প্রতি মাসে ৩০ কোটি। বছর শেষে সেই পরিমাণ খুব বেশি হলে ৩৬০ কোটি। এই অঙ্ক থেকে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের অংশ বাদ দিলে পরিমাণ দাঁড়ায় ১২০ কোটিতে। অর্থাৎ, প্রতি বছর পে-কমিশনের জন্য কর্মাচরীদের বর্ধিত বেতন দিতে কর্পোরেশনের খরচ হয় ১২০ কোটি টাকা। তারপরেও বাজেট অধিবেশনের ‘ফ্লোরে’ দাঁড়িয়ে কার্যত মিথ্যাচার করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বললেন, বর্ধিত বেতন দিতে কর্পোরেশনের খরচ ১০০০ কোটি।
কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘তৃণমূল দল সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের সংঘাত বাঁধাতে চায়। তাই বাস্তবে ৩৬০ কোটি খরচ হলেও সেটাকে ১ হাজার কোটি বলা হচ্ছে। যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য আমরা পরিষেবা পাচ্ছি না। এটা একটা সংগঠিত অপরাধ।’’
ঘাটতি কমাতে ভট্টাচার্যের দাওয়াই, ‘‘তৃণমূল পরিচালিত কর্পোরেশন সরকারি টাকায় দলীয় বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করুক।’’
বাকি টাকাটা যাচ্ছে কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তরে কর্পোরেশন অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারপার্সন তথা ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট কাউন্সিলর মধুচ্ছন্দা দেবের অভিমত, ‘‘চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরাও তো কর্পোরেশনেরই কর্মচারী। তাঁরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। স্থায়ী কর্মচারীদের পেনশন এবং অবসরকালীন প্রাপ্য অর্থেও হাত পড়ছে। আমাদের আশঙ্কা, লক্ষীর ভান্ডারের মতো রাজ্য সরকারের প্রকল্পের ভার বইতে হচ্ছে কর্পোরেশনকে। তারফলে কর্পোরেশনের তহবিলের একটা অংশ সেইদিকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর প্রভাব কলকাতা শহরের নাগরিক পরিষেবায় পড়তে বাধ্য।’’
Comments :0