২০১১ সালের মে মাসের পরেই অক্টোবর মাসে জয়পুর ব্লকের হিজলডিহা গ্রামে খুন হন বলরাম সিং। বিষ্ণুপুরের যন্তা গ্রামে খুন হন সীতারাম কুন্ডু, কতুলপুর ব্লকের শ্রীহর গ্রামে খুন হন হিমঘর শ্রমিক অলোক দেওড়া। ২০১৬ সালে শালতোড়া অঞ্চলে খুন হন যুবকর্মী অরুণ সর্দার। সরাসরি খুন করা ছাড়াও তালড্যাংরা, শালতোড়া, মেজিয়া, সারেঙ্গা, গঙ্গাজলঘাঁটি, ইন্দাস, পাত্রসায়র, বাঁকুড়া সদর, কতুলপুর, জয়পুর, বিষ্ণুপুর- গোটা জেলা জুড়ে শুরু হয় সীমাহীন সন্ত্রাস। এলাকা দখলের নামে একেকটি বিধানসভা এলাকা থেকেই কয়েক’শো বামপন্থী কর্মী সমর্থককে ঘরছাড়া করা শুরু হয়। তারসঙ্গে যুক্ত হয় লক্ষ লক্ষ টাকার জরিমানা। ২০১১ থেকে ২০২২, এই ১১ বছরে স্রেফ বাঁকুড়া জেলা থেকেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা জরিমানার নামে আদায় করেছে কয়েক কোটি টাকা! এবং বামপন্থীদের গায়ের জোরে উৎখাত করা জমিতে শুরু হয় নজিরবিহীন দুর্নীতি। আবাসের টাকা, ১০০ দিনের টাকা, বিধবা ভাতার টাকা- এমন কোনও সরকারি প্রকল্প নেই, যার টাকা উপভোক্তাদের বদলে তৃণমূলী মাতব্বরদের অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি।
কিন্তু সন্ত্রাসের মাধ্যমেই কী বিরুদ্ধ মতকে চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে রাখা যায়? জেলার ২৩টি ব্লকেই নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস জুড়ে পদযাত্রা সংগঠিত করতে পেরেছেন বামপন্থীরা। লাল মাটির মেঠো আলপথ ধরে ক্রমেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে সিপিআই(এম)’র মিছিল। জেলার রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল, ২০১৮’র পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০১৯’র লোকসভায় যেই জেলায় কার্যত বিজেপির ঝড় বয়েছিল, সেখানে নতুন করে এত লালঝান্ডা উড়তে শুরু করল কী করে?
সিমলাপাল ব্লকের দুবরাজপুরে মহিলারা সিপিআই(এম)’র কার্যালয়ে এসে পতাকা চেয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তারপর নিজেরাই মিছিল করে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে কাজের দাবি জানিয়েছেন, ফর্ম পূরণ করেছেন। কিছুদিন আগেও শুভেন্দু অধিকারীর সভায় যোগ দেওয়া পরিবারের মহিলারাও সামিল হয়েছেন তাতে। দূর থেকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পুরুষরাও। তৃণমূল পাড়াগুলো থেকেও এসেছে পাশে থাকার প্রতিক্রিয়া। তালড্যাংরার পূর্ব এবং পশ্চিম পাড়ের বিবরদাতেও রয়েছে এমনই ছবি। প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই ভেজা বেড়ালে পরিণত হয়েছে গামছায় মুখ ঢাকা তৃণমূলী বাহিনী। তাঁদের অনেকেই এইবার নমিনেশনের দিন ব্লক অফিস পাহারা দিতে নিমরাজি।
১০ বছরের তৃণমূলী শাসনে জেলার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেই এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে। গোটা জেলা জুড়েই ১০০ দিনের কাজের মজুরি দিনেদুপুরে চুরি করেছে তৃণমূল। জেলার বহু পঞ্চায়েতের নামে এই মর্মে মামলাও হয়েছে। গ্রামবাসীদের চাপে ব্লক কিংবা এসডিও অফিস থেকে ব্যবস্থাও নিতে হয়েছে বহু ক্ষেত্রে। তৃণমূলী দুর্নীতির মাশুল হিসেবে ব্লকে ব্লকে ৫০-৬০ কোটি টাকার রেগার মজুরি বকেয়া রয়েছে। বাঁকুড়া জেলায় এমনিতেই কাজের সুযোগ কম। বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ জনতার কাছে ১০০ দিনের কাজ দিন গুজরাণের একটা বড় অবলম্বন। সেখানে আঘাত আসায় জেলার একটা বড় অংশে ভিত আলগা হয়েছে তৃণমূলের।
গ্রামের পর গ্রামে লালঝান্ডার মিছিলে পা মেলাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
Comments :0