বিপদে পড়লে অর্থাৎ সিবিআই-ইডি’র তৎপরতা বাড়লে চটজলদি দিল্লি গিয়ে মোদী-শাহ’দের সঙ্গে সেটিং করে তদন্ত শীত ঘুমে পাঠানোর পাকাপাকি ব্যবস্থা গোড়া থেকেই আছে। রাজ্য পুলিশও পুরোপুরি হাতের মুঠোয়। দলদাসত্বে অভ্যস্ত পুলিশ এখন শাসক দলের নেতাদের কথায় ওঠে আর বসে। পঞ্চায়েত পৌরসভা থেকে শুরু করে খোদ নবান্ন পর্যন্ত গোটা রাজ্য প্রশাসন নেতাদের হুকুম তামিল করতে এক পায়ে খাড়া। একমাত্র বিচার ব্যবস্থাকে এখনও পুরোপুরি কব্জা করতে পারেনি রাজ্যের শাসক তৃণমূল। তাই বারে বারে হামলার ঘটনা ঘটছে বিচার ব্যবস্থার ওপর। আদালতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, বিচারপতির এজলাসের দরজা আটকে বিচার প্রক্রিয়া স্তব্ধ করে, হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে, বিচারপতির বাসভবনে পোস্টার দিয়ে এমন এক ভয়ের, আতঙ্কের, হাড় হিম করা পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে যাতে বিচারপতিরা সন্ত্রস্ত হয়ে শাসক দলের পছন্দ মতো রায় দিতে বাধ্য হয়। তেমনি শাসকের বিরুদ্ধে সওয়ালকারী আইনজীবীরা যাতে সংযত হয় তারই পরিকল্পিত প্রয়াস চলছে এই রাজ্যে। আদালতে তৃণমূলপন্থী আইনজীবী বলে যারা পরিচিত প্রধানত তারাই বিচার ব্যবস্থার ওপর এই ধরনের নিকৃষ্টমানের হামলার ঘটনায় জড়িত।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সাম্প্রতিক কিছু রায় শাসক দলের পছন্দ হয়নি। দুর্নীতি বেনিয়ম সংক্রান্ত এইসব মামলায় শাসক দলের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে গেছে রায়। তারপরই দেখা গেছে ভাইপো সাংসদ একাধিক প্রকাশ্য সভায় কিছু বিচারপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিচারপতি তথা বিচার ব্যবস্থার নিয়ে এমন দলীয় অসহিষ্ণুতা, কটাক্ষ, সমালোচনা দলের কর্মীদের বিশেষ করে আইনজীবী কর্মীদের হামলায় বিশৃঙ্খলায় উৎসাহিত করেছে। তারই পরিণতি দেখা গেছে হাইকোর্টের এজলাসে তৃণমূলী আইনজীবীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভ। আইনজীবীদের তরফে এমন অসভ্যতা বিশৃঙ্খলা অতীতে কোনোদিন লক্ষ্য করা যায়নি। মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমন নিন্দনীয় লজ্জাজনক সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাহীন নিয়োগ দুর্নীতিতে বেসামাল রাজ্য সরকারকে স্বস্তি দিতে এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সন্ত্রস্ত করতে একইভাবে এজলাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিচার প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার চেষ্টা করে। আসলে তৃণমূল নামক দলটাই একটা উচ্ছৃঙ্খল দল। এরা আইন মানে না, নীতি মানে না, যুক্তি মানে না। সর্বগ্রাসী ক্ষমতা এদের লক্ষ্য। ক্ষমতার জোরে সর্বত্র লুট করতে চায়। সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতী, চোর-জোচ্চোর সকলের নিরাপদ আশ্রয় তৃণমূল। চুরি, দুর্নীতি করলে কোনও না কোনও সময় ধরা পড়বেই। ধরা পড়লে বিচার হবে, সাজা হবে। কিন্তু তৃণমূল কোনও অবস্থাতেই চায় না চুরি-দুর্নীতিতে আদালত বাধা দিক। চোর-দুর্নীতিবাজদের সাজা দিক। তাই অন্য সব ক্ষেত্রের মতো বিচার ব্যবস্থাকেও তারা তাদের দখলে আনতে চায়। বিচার ব্যবস্থাকে হাতের মুঠোয় আনা সম্ভব হলে অবাধে যত খুশি চুরি-দুর্নীতি করা যাবে। লুটের টাকায় গোলা ভরানো যাবে। অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া যাবে। ধরা পড়ার ভয় নেই। আর ধরা পড়লেও সাজা পাবার ভয় নেই। বেকসুর খালাস।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বিচার বব্যস্থা। আইন ও সংবিধানকে রক্ষা করা বিচার ব্যবস্থার কাজ। এখানে দল বা ব্যক্তির স্বার্থ মূল্যহীন। সংবিধান ও আইনের চোখে এখানে সবকিছুর মূল্যায়ন হয়। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাই আদালতের কাজ। কিন্তু শাসকের কাছে সত্য ও ন্যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসহ্য। তারা আত্মস্বার্থ বা গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে। বাধা এলেই ক্ষিপ্ত হয়। বাধা হটাতে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলতেও দ্বিধা করে না। নির্বাচনে পরাজয় না মেনে জোর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা বা আদালতের রায়কে বলপূর্বক নিজের পক্ষে আনার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ফ্যাসিবাদেরই প্রকাশ।
Comments :0