আগামী সোমবার কলকাতা কর্পোরেশনের অসংগঠিত ক্ষেত্রের সমস্ত কর্মীদের ২৬ হাজার টাকা নূন্যতম মজুরি, পিএফ, ইএসআই, গ্র্যাচুইটি সহ স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে কর্পোরেশনের সদর দপ্তরে অভিযান করে মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেবে সিআইটিইউ অনুমোদিত কলকাতা কনট্র্যাক্টরস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং কলকাতা জেলা সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস ওয়ার্কম্যানস ইউনিয়ন। একইসঙ্গে ১০০দিনের কর্মী, মিড ডে মিল কর্মী ও কর্পোরেশনের আওতায় থাকা মিলেনিয়াম পার্কে কর্মরতদের মৌলিক অধিকারগুলিকেও তুলে ধরবেন সংগঠনের নেতৃত্ব। গত তিনমাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কর্পোরেশনের ৩০০জন মালি। তাঁদের দাবিও তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ।
তাঁরা বলছেন, কলকাতা কর্পোরেশনের চুক্তিভিত্তিক ও ক্যাজুয়াল কর্মীরাই কেএমসি’র পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসছেন। তাঁদের ছাড়া কর্পোরেশন অচল। অথচ তাঁদেরই অন্ধকারে রেখেছে প্রশাসন। কর্মচারীদের পিএফ থেকে শুরু করে কোনোরকম সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করা হচ্ছে না। উলটে তাঁদের মাস মাইনে দেওয়া ক্ষেত্রেও বঞ্চনা করছে। তৃণমূল পরিচালিত কর্পোরেশনের অমানবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সিআইটিইউ তাঁদের হকের লড়াইয়ে পাশে থাকবে। আগামী সোমবার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক কর্মীদের দাবি নিয়ে মেয়রের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হবে। একইসঙ্গে মিলেনিয়াম পার্কের ৩৯জন কর্মীর কোনোরকম মাইনে দেওয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে তাঁদের বেতন প্রক্রিয়া চালুর দাবি করা হবে।
নজিরবিহীনভাবে গত ৩ মাস ধরে কোনোরকম বেতন দেওয়া হচ্ছে না কলকাতা কর্পোরেশনের মালিদের। কর্পোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন পার্ক মিলিয়ে মালিদের সংখ্যা ৩০০। তাঁরা শেষ বেতন পেয়েছেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। তারপর থেকে বারংবার কর্তৃপক্ষের দারস্থ হওয়া সত্ত্বেও কোনোরকম সুরাহা মেলেনি তাঁদের। কেবল হোলির সময় কর্মচারীদের চরম বিক্ষোভের মুখে পড়ে তাঁদের অ্যাকাউন্টে ৩০০০ টাকা পাঠায় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সিআইটিইউ অনুমোদিত অসংগঠিত কর্মচারীদের সংগঠন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায় যে ব্যাঙ্কের সমস্যার কারণেই নাকি মাইনে দেওয়া যাচ্ছে না কর্মীদের!
যদিও সিআইটিইউ নেতাদের অভিযোগ, আমরা জানতে পেরেছি যে ইডির নির্দেশ অনুযায়ী কর্পোরেশন নিযুক্ত ঠিকাদারদের সমস্ত অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার ফলেই কোনোরকম লেনদেন চালানো যাচ্ছে না। আগে থেকে অবগত থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে এবং কর্মচারীদের স্বার্থে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এইসব কাণ্ডের সম্পূর্ণ খেসারত দিয়ে যাচ্ছেন খেটেখাওয়া কর্মচারীরাই।
কর্পোরেশনের চুক্তিভিত্তিক এক মালি বলছেন, ‘কোনোসময়েই ঠিকমতো প্রাপ্য দেওয়া হয় না আমাদের। বিগত বছরের ঠিকাদার আমাদের দিয়ে সারাবছর কাজ করিয়ে কেবল ছয় মাসের পিএফ দেন। বাকি টাকা আজও আমরা পায়নি। এরপর জানুয়ারি মাস থেকে আমাদের মাস মাইনেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোলির আগে আমাদের বিক্ষোভের চাপে পড়ে ৩০০০টাকা দেয় কর্তৃপক্ষ। ব্যস এইটুকুই! তারপরও দুবার আমরা বিক্ষোভ দেখিয়েছি। বহুবার মেয়র পারিষদের সদস্যের কাছে গেছি। কিন্তু বরাবরই বিভিন্ন ভনিতা করে কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের। এখন আমরা জানতে পারছি যে আমাদের ঠিকাদারদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাইন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের সংসার চালানো, ঘরের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাব ভেবে রাতে ঘুমোতে পারছি না।’
সিআইটিইউ’র কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৌম্যজিৎ রজক জানিয়েছেন, ‘কর্মচারীদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছে কর্পোরেশন। একজন অফিসারের মাইনে একদিন দেরি হলে তুলকালাম শুরু হয়। আর তিনমাস ধরে ৩০০জন অসংগঠিত কর্মীর বেতন বন্ধ, কিন্তু প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই! একে তো কোনোরকম সামাজিক সুরক্ষা এঁদের দেওয়া হয় না। তার ওপর মাস মাইনেও আটকে রেখেছে। কোনোমাসেই ঠিকমতো সময়ে বেতন দেওয়া হয় না তাঁদের। বছর বছর ঠিকাদার বদল হয়, আগের ঠিকাদার কর্মীদের পিএফ’র টাকা নিয়ে চলে যায়। সবকিছু জানা সত্ত্বেও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না কর্পোরেশন। আগামী সাতদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
Comments :0