ঘটনার পরপরই তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া ভুলে যাওয়ার নয়। ঘটনা হালকা করতে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘টিভি বাস্ট করে আগুন লেগেছে।’’
ঘটনার ৬০ ঘন্টা পর হেলিকপ্টারে করে বগটুই গ্রামে যান মুখ্যমন্ত্রী। ভাদুর পরিবারের সাথে দেখা করার কথা থাকলেও তিনি তা এড়িয়ে যান।
প্রাথমিক ভাবে বগটুই গণহত্যাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা হলেও বগটুইয়ে দাঁড়িয়ে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সামনে এনেছিলেন তিনি। আর্থিক সাহায্য থেকে চাকরি, সব কিছুর ঘোষণাও তিনি করেছিলেন।
সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যও ভোলার নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে পুলিশকে বলা হয়েছে যে এমনভাবে কেসটা সাজাতে হবে যাতে ছাড়া না পায়। ‘কেস সাজানো’-র সঙ্গে তাঁর মন্তব্য ছিল, আনারুল কেন পুলিশ পাঠায়নি গ্রামে। আনারুল কে? প্রশাসনের কেউ নন, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি। মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে রেখে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল একঝাঁক ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশকে বলেছিলেন, ‘‘সূচপুরের মতো কেসটা সাজিয়ে নেবেন।’’
তারপর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে আট মাস। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত জেলে। বিচার হয়নি আনারুলের। এক এক করে অভিযুক্তরা ধরা পড়েছে। সিআইডির হাত থেকে তদন্ত ভার গিয়েছে সিবিআই’র হাতে। ভাদু খুনের মূল অভিযুক্ত এবং বগটুই গণহত্যার সাক্ষী লালন শেখও ধরা পড়ে সিবিআই এর হাতে। কিন্তু সিবিআই হেফাজতেই মৃত্যু হয়েছে লালন শেখের।
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাংলায় সব অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। অপরাধীদের মাথায় প্রশাসনের হাত থাকছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যখন বিচার চাইতে যাচ্ছেন তখন তাদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।’’
বাথরুম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে লালনের দেহ। আত্মহত্যা না অন্য কিছু তা বিচার্য বিষয়। কিন্তু এরই মধ্যে রাজ্যের কারা মন্ত্রী অখিল গিরি দাবি করেছেন যে, লালন অসুস্থ ছিল। তাই তার মৃত্যু হয়েছে।
সুজন চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘বগটুই গণহত্যার শিকার পরিবার গুলির সুবিচার পাওয়ার জন্য দরকার ছিল লালন শেখের বয়ান। কিন্তু হঠাৎ করে তার রহস্য মৃত্যু।’’
লালন শেখের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রীর সেই ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব যেন বার বার সামনে উঠে আসছে। না। এই তত্ত্বটা একটু আলাদা। মূল অভিযুক্ত। যে সব কিছু জানে। যার সামনে গোটা ঘটনাটর ঘটেছে। তাঁর মৃত্যু। তাও আবার সিবিআই হেফাজতে থাকাকালিন। লালনের পরিবার দাবি করছে যেই লালনের মৃত্যু হয় সেইদিন ভাদুর ভাই বগটুইয়ের অন্যতম অভিযুক্ত বীরভুমে সিবিআই’র অস্থায়ী ক্যাম্পে ছিল। তাকেও সেদিন জিঞ্জাসাবাদ করেন তদন্তকারি আধিকারিকরা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ফরেন্সিক দল নিয়ে সিবিআই ক্যাম্পে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। রাজ্য পুলিশ মামলাও দায়ের করেছে।
আসল প্রশ্ন হলো দোষী কে? কেন মারা হলো ভাদুকে? আনারুল, ভাদুর মতো নেতাদের রাজপ্রাসাদ কী করেই বা তৈরি হলো? কারা রয়েছে এর পিছনে? আর বৃহত্তর ষড়যন্ত্রই বা কী?
সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘এই মৃত্যুর দায় কার তা কি কোনোদিন প্রকাশ হবে? নাকি এই মৃত্যুর পিছনেও কোন অপরাধকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে।’’
Comments :0