sitaram yechury interview

উপরে উপরে না, বিরোধী ঐক্য হতে হবে রাজ্য স্তরে মাটিতে বললেন ইয়েচুরি

জাতীয়

sitaram yechury interview

উপার উপার কা (উপর উপরে) কোনও বিরোধী ঐক্য গড়ে ওঠে না। কোন নেতা কোন নেতার সঙ্গে বৈঠক করল তা দিয়ে কোনও বিরোধী ঐক্য গড়ে উঠবে না। বিরোধী ঐক্য ঘটবে নির্দিষ্ট রাজ্যে, সেখানের নিচু তলায়। শুধু ভোটের আগে একটা বোঝাপড়া নয়, একটি ঐক্যবদ্ধ বিরোধী হিসাবে রাজ্য স্তরে কাজ করে যেতে হবে। লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় স্তরে একটা ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মঞ্চ প্রসঙ্গে এমনই মত সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির। একটি সর্বভারতীয় দৈনিকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইয়েচুরি বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মঞ্চ গড়ার সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনগুলি সেটাকে গতিশীল করেছে। তিনি আশাবাদী, এই বছর আমরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছি যা এ প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করবে।

এই সাক্ষাৎকারে ইয়েচুরি একগুচ্ছ প্রশ্নের অকপট জবাব দিয়েছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ত্রিপুরায় ফল থেকে কী শিক্ষা পেলেন? ভোট ভাগাভাগির প্রসঙ্গ তুললেও ইয়েচুরির মতে, ত্রিপুরার ফলাফল মূলত গত পাঁচ বছরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন কারণের দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর ভয়ানক আক্রমণ হয়েছে। আসলে কোনও বিরোধী দলই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি, তাঁদের কাছে যেতে পারেনি। গোটা পর্ব জুড়ে সেখানে এমন একটা সন্ত্রাস কায়েম হয়েছিল যা স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কার্যকলাপে বাধা তৈরি করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটি নিজেই একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই বদ্ধ পরিবেশের পাশপাশি। দ্বিতীয়ত ইয়েচুরি মনে করেন, নির্বাচনের সময় অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যাপক প্রভাব ছিল। ইয়েচুরি আরও বলেন, তৃতীয়ত, সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিকে একত্রিত করাই ছিল আমাদের মূল চেষ্টা। এই লক্ষ্যে কংগ্রেসের যোগদানের মাধ্যমে আমরা আংশিকভাবে সফল হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিপরা মথা নানা কারণে বাইরে থেকে যায়। এর উত্তর ওদের দিতে হবে। তাই ভোটের সেই বিভাজনও সাহায্য করেছে বিজেপি’কে।



সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদকের মতে, গতবার ছিল মেরুকরণের ভোট। আর সেখান থেকে এবার হলো ত্রিমুখী বিভাজন। আর সেই ভোট বিভাজন বিজেপি’কে সাহায্য করেছে। তবুও, এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও, বিপুল সংখ্যক আসন হারিয়ে, প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ হার কমে গিয়ে বিজেপি কেবলমাত্র নামমাত্র  সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পেরেছে। 
ইয়েচুরিকে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। সিপিআই(এম) কি তিপরা মথার সঙ্গে জোটে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিনা। জবাবে ইয়েচুরি বলেন, আমরা ওদের কাছেও আবেদন জানিয়েছিলাম যে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করতে  সবার আগে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। পৃথক আদিবাসী রাজ্যের ইস্যুতে ইতিমধ্যেই বিজেপি’র সঙ্গে আলোচনার মধ্যে ছিল মথা। আমি জানি না তাদের মধ্যে কী চুক্তি হয়েছে… এব্যাপারে আমাদের কোনও ধারণা নেই। কিন্তু ওরা আলাদাভাবে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
ত্রিপুরার ফলের সঙ্গে মেঘালয়ের ফলাফলও বিরোধী দলগুলির কাছে একটি বাস্তবতা যাচাই। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য, এটা স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যে কোনও সম্প্রসারণ করাটা করা সহজ। বাম ও কংগ্রেসও প্রভাব ফেলতে পারেনি। এখন যখন ২০২৪ সালের নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি, আপনি কীভাবে এই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে চান? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেন, একটি ঐক্যবদ্ধ বিরোধী হিসাবে রাজ্য স্তরে কাজ করে যেতে হবে, শুধু নির্বাচনের আগে নয়। এটাও একটা শিক্ষা যা খুবই স্পষ্ট। ত্রিপুরায় এটা (কংগ্রেসের সাথে বন্দোবস্ত) হয়েছিল নির্বাচনের মাত্র মাস দু’য়েক আগে... তখনই এই সব আলোচনা ইত্যাদি শুরু হয়েছিল। নির্বাচনের ছয় মাস আগে আমরা আমাদের পার্টির দপ্তরও খুলতে পারেনি… এমনই ছিল সন্ত্রাসের মাত্রা। তাই এই সবের মুখোমুখি হতে ও মোকাবিলা করতে এবং এই সব শক্তিকে পরাস্ত করতে… ভারতীয় সংবিধান, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন রক্ষার লক্ষ্যে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।



প্রতিটি বিরোধী দলই ঐক্যের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা আলাদা হয়— এই প্রসঙ্গে ইয়েচুরি বলেন, ঐক্য হতে হবে মাটিতে, রাজ্য স্তরে। সবাই, বিশেষ করে মিডিয়া, শুধু ঐক্যের কথা বলে ‘উপার উপার কা (উপরের স্তরে)’… কোন নেতা কোন নেতার সঙ্গে বৈঠক করছেন, কে কোন বিবৃতি দিচ্ছেন। এভাবে ঐক্য হয় না; এটি নির্দিষ্ট রাজ্যে মাটিতে ঘটে। সেই প্রক্রিয়া, আমি মনে করি, ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং এই নির্বাচনগুলি সেটাকে গতিশীল করেছে। এই বছর আমরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছি যা এ প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করবে।
খানিকটা খোঁচার ভঙ্গিতেই সাংবাদিক প্রশ্ন রেখেছিলেন, কেরালার পিনারাই সরকারের মালয়ালম নিউজ চ্যানেল এশিয়ানেট নিউজের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কীভাবে দেখছে? বিবিসি’র অফিসে তল্লাশির সময় আপনার পার্টি মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছিল। জবাবে ইয়েচুরি বলেন, ‘দু’টো কি একই মামলা? এশিয়ানেটের ঘটনাটি কি বিবিসি’র মতোই? দয়া করে, বিভ্রান্ত করবেন না। বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না। মোদ্দা কথা হলো, কিছু সমস্যা রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছে। তাই সেটা করতে দিন।’


ইয়েচুরির কথায়, প্রশ্নটা হলো স্বাধীনতা কিসের জন্য। অবশ্যই, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আমরাই সকলের আগে এবং দৃঢ়ভাবে এর রক্ষক ছিলাম, এবং আমরা তেমনটাই থাকব। তবে এই মামলার সাথে জড়িত প্রকৃত সমস্যাগুলি কী… যা কেবল কেরালা সরকারই উত্তর দিতে পারবে… আমি পুরোপুরি অবগত নই। যা-ই হোক না কেন, সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা মেনেই চলা হচ্ছে। আর আমাদের ব্যাপারে বলতে পারি, আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অত্যন্ত দৃঢ় এবং অবিচল রক্ষক, এবং আমরা এমনটাই থাকব। 

Comments :0

Login to leave a comment