বীরভূমের আহমেদপুরের নোয়াপাড়ার গরিব ভাগচাষি পান্ডু হেমব্রম ও তাঁর স্ত্রী পার্বতী হেমব্রমকে বাড়ির সামনেই বাঁশ দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাতে খুন করা হয়। গোটা শরীর আঘাতে হয় ক্ষতবিক্ষত। গাঁয়ের মোড়ল তথা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সোম মুর্মুর কাছে খবর পেয়ে ছুটে আসে আক্রান্তদের ভাইপো। তাঁকে দিয়েই দেহ দুটিকে পাঠানো হয় বোলপুর হাসপাতালে।
মিস্ত্রি হেমব্রমের কথায়, ‘‘মোড়লই ডেকে পাঠায় আমাকে। আমি গিয়ে দেখি কাকা-কাকির রক্তাক্ত দেহ গাড়িতে চাপানো। মোড়ল বলে হাসপাতাল নিয়ে যেতে। হাসপাতাল নিয়ে দেখি কাকি মারা গেছে আগেই। কিছুক্ষণ বাদে কাকাও মারা যায়। পুলিশ আসে। দুপুরে পোস্টমর্টেম হয়। তারপর সন্ধ্যায় দেহ দুটি নিয়ে গাঁয়ে ফিরে আসি। তখন গাঁয়ের থাকা রুবই বেসরা সহ অন্যান্যরা এবং পুলিশ তাড়াতাড়ি পাশের গ্রাম বেনেডাঙায় নিয়ে গিয়ে দেহগুলি দাহ করতে বলে।’’
ঘটনাক্রমে স্পষ্ট, গ্রামের তৃণমূল সদস্য, তাঁর অনুগামী প্রাক্তন মোড়ল এবং পুলিশ চেয়েছিল নিহত আদিবাসী দম্পতির দেহ শেষকৃত্য দ্রুত সম্পন্ন করে নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুনের জেরে এলাকায় উত্তেজনা গোড়াতেই দমিয়ে দিতে। কিন্তু সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয় ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের গ্রাম থেকে জড়ো হওয়া শ’য়ে শ’য়ে মানুষের আপত্তি, ক্ষোভ। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় কুড়ি ঘণ্টা ধরে দেহ দুটি বেনেডাঙার শ্মশানেই রেখে দেন এলাকার মানুষ। তাঁরা পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আদিবাসী রীতিতে মোড়লের উপস্থিতিতেই শেষকৃত্য হয়। কিন্তু মোড়লই তো পলাতক। কেন তিনি পালালেন? কারা এই খুন করল? সবাইকে আগে ধরতে হবে। সাজা দিতে হবে। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর দোষীদের গ্রেপ্তারের নিশ্চিত আশ্বাসে রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ সমাধিস্থ করা হয় দেহ দুটি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘গ্রামে অবৈধভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ ছিল মৃত দম্পতিদের বিরুদ্ধে। গ্রামের বাকিরা তাদের বারংবার বারণ করলেও তারা শোনেনি। সেই থেকেই বিবাদ। তার জেরেই এই ঘটনা। ধৃত রুবইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মিলেছে এমন তথ্য। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
সোমবার সেলিম বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় থাকাকালিন বিজ্ঞান মঞ্চ তৈরি করা হয়। সাধারণ ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হন। বিজ্ঞান মনস্কতা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এই সংগঠন কাজ করতো। কিন্তু তৃণমূল শাসনে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে জাত পাত, দাঙ্গা, ডাইনি প্রথা ফিরে আসছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগররা যেই নবজাগরনের মধ্যে দিয়ে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তা আজ তৃণমূল শেষ করে দিচ্ছে। তৃণমূল এবং আরএসএস বাংলাকে পিছিয়ে দিতে চাইছে।’’ বীরভূমের ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যে প্রান্তিক পিছিয়ে পড়া মানুষদের পিটিয়ে মারার ঘটনা তুলে ধরেন।
এই ঘটনায় অভিযোগের তীর গ্রামের প্রাক্তন মোড়লের দিকে, যিনি তৃণমূলের পঞ্চায়ের সদস্য। এই প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামের প্রান্তিক মানুষ গ্রামের সরকার তৈরি করেন। তৃণমূল বিজেপি পঞ্চায়ের ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়ে ফের গ্রামের রাশ মোড়লদের হাতে তুলে দিয়েছে। যেই জমিদার মোড়লদের হাত থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছিল বামফ্রন্ট।’’
Comments :0