TMC BJP Seat Settlement

নন্দীগ্রামের সমবায়ে তৃণমূল বিজেপির আসন সমঝোতা

রাজ্য জেলা

নন্দীগ্রামের দীনবন্ধুপুর সমবায়।

রামশংকর চক্রবর্তী- তমলুক

কোথায়? নন্দীগ্রামে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে লড়াই যে আসলে লোক দেখানো তা রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনায় প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। কিন্তু আসলে সবটাই মুখোশ যে তা নন্দীগ্রামের সমবায় নির্বাচনে স্পষ্ট। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের দীনবন্ধুপুর সমবায় সমিতির নির্বাচনে ভোট হওয়ার কথা ছিল ৫ জানুয়ারি। মোট আসন ৫০টি। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে তৃণমূল ৩২ ও বিজেপি ১৮টি ডেলিগেট নিয়েছে। ফলে নির্ধারিত দিনে আর নির্বাচন হবেনা। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের এই সমবায় ভেকুটিয়া ও মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা নিয়ে। সদস্য সংখ্যা ১২৫৮। ডেলিগেট নির্বাচনে আসন সংখ্যা ৫০টি। ৯ ও ১০ ডিসেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়া ও ১২ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের দিন ছিল। বিজেপি ও তৃণমূল পরস্পর বোঝাপড়া করে ৫০টি আসনে একটি করে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৯টি আসন তৃণমূলের। ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৩১টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৮টি ও তৃণমূল ১৩টি। 
প্রসঙ্গত ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। অন্যদিকে মহম্মদপুর তৃণমূলের দখলে। এই নন্দীগ্রামেই এক সপ্তাহ আগে এক তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছিল এলডিবি সমবায় নির্বাচনের সময়। তৃণমূলের রাজ্য নেতারা নন্দীগ্রামে এসে বিজেপিই দায়ী বলে দাবি করেছিলেন। নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। এই ঘটনায় ভেকুটিয়ার বিজেপির মন্ডল সভাপতি ধনঞ্জয় ঘড়া সহ কয়েকজন বিজেপি নেতা অভিযুক্ত। অথচ সেই ভেকুটিয়া মহম্মদপুর এলাকার সমবায়ের ভোটে আসন সমঝোতায় অবাক নন্দীগ্রামের মানুষ। তবে আশ্চর্যের বিষয় বিজেপি ও তৃণমূল উভয়েই এই আসন সমঝোতাকে নিজেদের জয় বলে দাবি করছে। এখানকার এক বাসিন্দা বলেন,‘‘এরা গিরগিটি। মুহূর্তে মুহূর্তে রং পাল্টায়। দলের কর্মী খুনে যারা অভিযুক্ত তাদের সাথে আসন সমঝোতা করছে তৃণমূল। মনে হয়না এই দুই দলের মধ্যে কোনও পার্থক্য আছে।’’
আরএসএস, মাওবাদীদের সহায়তায় তৃণমূলের চক্রান্তে ২০০৭ সাল থেকে একমাত্র বামপন্থীরাই আক্রান্ত হচ্ছে। নন্দীগ্রাম সহ পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সিপিআই(এম)কে শেষ করার ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত গড়ার প্ররোচনায় ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছিল। একতরফা ক্ষমতা দখল করে পঞ্চায়েত গুলিতে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে তৃণমূল। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়েছেন কিন্তু তার প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ তৃণমূল ও বিজেপি উভয়েই। ২০১১ সালের পর থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়েছে সারা রাজ্যেই। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে থাকাকালীন এই নন্দীগ্রামে সবথেকে বেশী আরএসএস এর শাখা বৃদ্ধি হয়েছে। এখন তিনি নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের বিধায়ক। একসপ্তাহ আগে সমবায়ের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কর্মী খুনে বিজেপির নেতাদের অভিযুক্ত করার বিরুদ্ধে সভা মিছিল করেছিল বিজেপি। উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ইতিপূর্বে আসন সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। অর্থাৎ একটি সমবায়ের ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগে একদিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে সভা করছে তৃণমূল ও বিজেপি। অন্যদিকে সেই দিনেই আর একটি সমবায়ের ভোটে নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতা চলছে।
নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা বাপ্পাদিত্য গর্গ স্বীকার করেছেন এই সমঝোতার কথা। তিনি বলেছেন,‘‘এই সমবায়ে নির্বাচন হচ্ছেনা। ৫০টি আসনের ৩২টিতে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হয়েছে। বাকিগুলোতে বিজেপি। দুই দলের আলোচনায় এটা হয়েছে।’’ বিজেপির এক নেতা জানান,‘‘ভোট করে কি হবে? তাই দুই দলের মধ্যে একটা আলোচনা হয়েছিল। সেখানে সমঝোতা হয়েছে।’’
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম তৃণমূল ও বিজেপি আলাদা দল নয়। এরা আরএসএস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নন্দীগ্রামের মানুষ সবটা বুঝছেন, দেখছেন। এদের বাইরের লড়াই আসলে লোক দেখানো।’’

Comments :0

Login to leave a comment