MD SALIM

এখন সাধু সাজার চেষ্টা’, কটাক্ষ সেলিমের

রাজ্য


২৫ জুন দেশে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ 
পালনে কেন্দ্রের ফতোয়া রাজ্যগুলিকে
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ১৮ জুন—সংবিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলা মোদী সরকারই গোটা দেশে ২৫ জুন ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে সব রাজ্য সরকারকে!
কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সচিব বিবেক আগরওয়াল সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে ২৫ জুন সংবিধান হত্যা দিবস পালন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এরাজ্যেও মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের কাছে এসেছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের পাঠানো চিঠি। রাজ্যকে পাঠানো চিঠিতে সংস্কৃতি মন্ত্রক ২৫ জুন কী ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত ২০২৪ সালের ১১ জুলাই একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে ২৫ জুন দিনটিকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নেওয়া নির্দেশিকাকে ভিত্তি করে চলতি বছরে জরুরি অবস্থা জারির ৫০ বছর পালন করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। চলতি বছরের ২৫ জুন থেকে আগামী ২০২৬ সালের ২৫ জুন— এক বছর ধরে রাজ্যে রাজ্যে কীভাবে পালন করতে হবে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ তার বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রক। 
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানান, ‘‘সংবিধানকে যারা হত্যা করছে, তারাই এখন সাধু সাজার চেষ্টা করছে। সংবিধানের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে জারি করা জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে গোটা দেশ সোচ্চার হয়েছিল। অথচ ওই সময় আরএসএস প্রধান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে গিয়ে আপসবার্তা দিয়ে এসেছিল। আরএসএস জরুরি অবস্থাকে ‘অনুশাসন পর্ব’ বলেছিল। আমরা জরুরি অবস্থার বিরোধী। জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে অনেকে জেল খেটেছেন, এলাকাছাড়া হয়েছেন। আমাদের রাজ্যে তো অঘোষিত জরুরি অবস্থা তার কয়েক বছর আগেই চালু হয়ে যায়। কিন্তু এখন গোটা সাংবিধানিক ব্যবস্থাকেই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি আক্রান্ত।’’
নিশ্চিতভাবেই ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি এদেশের গণতন্ত্রের কালো অধ্যায়। ২০২১ সালেই লোকসভায় বর্তমান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্তকে ভুল বলে জানান। গোটা দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ ২৫ জুন দিনটিকে এদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের কালো দিন হিসাবে পালন করে। কিন্তু গত ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অতীতের জরুরি অবস্থা থেকেও যে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছে তার জন্য ২৫ জুন নতুন করে সংবিধান রক্ষার শপথ গ্রহণ করতে হয় দেশের মানুষকে। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, ‘‘জরুরি অবস্থার কালো দিনগুলিকে মাথায় রেখে রাজ্যের মানুষকে তাই এখন শপথ নিতে হবে, সাংবিধানিক অধিকার, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, গণতন্ত্র বজায় রাখতে পারি। কিন্তু মোদী সরকারের হাতে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সংবিধান নিরাপদে নেই।’’  
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে চিঠি আসার পর বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রের এই কর্মসূচি এরাজ্যে পালিত হবে না। নবান্নে মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, ‘‘সংবিধান হত্যা দিবস কথাটিতে আমার আপত্তি আছে। জরুরি অবস্থা এদেশের মানুষ মেনে নেননি। ওই সময় আমরা ছাত্র পরিষদ করতাম। কিন্তু আজকেও কী দেশে গণতন্ত্র আছে? গোটা দেশের গণতন্ত্র এখন যেভাবে আক্রান্ত তাতে প্রতিদিন একবার করে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করা উচিত।’’ 
২৫ জুন কীভাবে সংবিধান হত্যা দিবস পালন করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক উল্লেখ করেছে। প্রদর্শনী, মিছিল, সভা থেকে শুরু করে মশাল মিছিলের পর্যন্ত আয়োজন করার কথা বলা হয়েছে। মিছিল, প্রদর্শনী  থেকে ট্যাবলোতে কী বয়ান লেখা হবে তারও বিস্তারিত বিবরণ সরবরাহ করবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। রাজনৈতিক মহলের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ইন্ডিয়া মঞ্চ’র অন্যতম ইস্যু ছিল দেশের সংবিধান রক্ষা। ভোটপর্বে রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে তাবড় বিরোধী নেতারা হাতে সংবিধান নিয়ে ভোট প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে দেশের সংবিধান রক্ষার এই লড়াই জনমানসে এতটাই প্রভাব তৈরি করে যে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। এক ধাক্কায় ‘মোদী সরকার’ থেকে ‘এনডিএ সরকার’ বলতে বাধ্য হয় বিজেপি নেতারা। ১১ বছর সরকার চালিয়ে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে নামা বিজেপি এখন ৫০ বছর আগের জরুরি অবস্থার স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে।

Comments :0

Login to leave a comment