Gangasagar Mela 2024

সাগর সৈকতে কুসংস্কার বিরোধী কর্মসুচি কিশোর বাহিনীর

রাজ্য জেলা

শুক্রবার সাগর সৈকতে কিশোর বাহিনীর কুসংস্কার বিরোধী কর্মসুচি।

অনিল কুণ্ডু – গঙ্গাসাগর
সাগর সৈকতের সমান্তরাল সেই চিরাচরিত চিত্রটাই এবার আরো বদলে গেছে। ভাঙনের চিহ্ন সর্বত্র। সমুদ্র গ্রাস করছে। ক্রমশ এগিয়ে আসছে। ফলে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনের পরিসর কমছে। মেলা প্রাঙ্গনের পরিসর কমতে থাকায় সাগর মেলার ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। ভাঙন রোধে সমস্তরকম প্রয়োজনীয় চেষ্টা করা হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না সমুদ্র ভাঙন। পরিস্থিতি এমনই যে এবারে ২নম্বর, ৩ নম্বর রাস্তায় সাগর সৈকতে যাত্রীদের স্নানপর্ব বন্ধ করা হয়েছে। এই দুই রাস্তায় আসা যাত্রীদের স্নানের ব্যবস্থা থাকছে এবার ১ এ  রাস্তায় সৈকতের একদিকে। এছাড়াও ৪, ৫, ৬ নম্বর রাস্তার সৈকতে স্নানের ব্যবস্থা থাকছে। 
তবে মেলা প্রাঙ্গনে আসা সাগরদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা  পূর্ণেন্দু ভুঁইঞা’র কথায়, এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন তথা রাজ্য সরকার দায়ী। কংক্রীটের বাঁধ তৈরি না করে মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষা করতে গিয়েই এই ক্ষতি হয়েছে। কোটাল ও জোয়ারের প্রবল স্রোতে সাগর গ্রাস করেছে বাঁধের মাটি। কন্যাকুমারী পারলে আমরা পারছি না কেন। তাঁর কথায়, যেহারে ভাঙন, গ্রাস চলছে অচিরেই বর্তমান কপিল মুনির আশ্রম তলিয়ে যাবে সাগরের জলে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোস্টাল রেগুলেশন জোন আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সমুদ্র ভাঙনের জেরে গঙ্গাসাগর মেলার ভবিষ্যত এক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে। গত এক বছরে প্রায় ২০০ ফুট ভাঙনের কবলে পড়েছে। প্রশাসনের তরফে বোল্ডার দিয়ে, শালবল্লীর ব্যারিকেড দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। জোয়ারের জল আটকাতে এবার মেলার আগে উঁচু বাধের ব্যবস্থা করা হলেও জোয়ারে জল ঢুকছে। 
শুক্রবার বহু যাত্রী মেলা প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেছেন। অনেকেই মকর সংক্রান্তির আগে সাগর স্নান সেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আনাগোনা চলছে যাত্রীদের। ভাটায় মুড়িগঙ্গা নদী পারাপারে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়ে আশঙ্কা ছিলই। মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে। নদীর নাব্যতা কমায় ভেসেল চলাচলে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ড্রেজিংয়ের কাজে ব্যয় করা হলেও ড্রেজিংয়ের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাগরদ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দারাও। এদিন দুপুরে ভাটার সময় মুড়িগঙ্গা নদীর চরে আটকায় যাত্রী বোঝাই দুটি ভেসেল। একটি ভেসেল যাত্রীদের নিয়ে লট এইট থেকে কচুবেড়িয়া যাচ্ছিল। অপরটি কচুবেড়িয়া থেকে যাত্রীদের নিয়ে কাকদ্বীপের লট এইটে জেটি ঘাটে ফিরছিল। যাত্রী বোঝাই ভেসেল দুটি চরায় আটকালে এনডিআরএফ’র টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। উদ্বিগ্ন যাত্রীদের পানীয় জল, শুকনো খাবার দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। কয়েক ঘন্টা তাঁদের জোয়ারের জলের অপেক্ষায় থাকতে হয় ভেসেলের মধ্যেই। 
শীতের ঠান্ডা সেরকম নেই গঙ্গাসাগরে। কুয়াশায় আচ্ছন্ন মেলা প্রাঙ্গনের আকাশ। ভিন রাজ্য থেকে এসেছেন যাত্রীরা। এরাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকেও যাত্রীরা আসতে শুরু করেছেন। রয়েছেন খোলা আকাশের নীচেই। 
স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিবস উপলক্ষে এদিন এনজিও কো-অর্ডিনেশন কমিটির উদ্যোগে মেলা অফিসে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। এই শিবিরে মোট ৮৪ জন রক্ত দেন। এর মধ্যে কিশোর বাহিনীর তরফে ১০ জন শিবির সাথী রক্ত দেন। বিকালে সাগর সৈকতে কিশোর বাহিনীর উদ্যোগে কুসংস্কার বিরুদ্ধে অলৌকিক নয় লৌকিক অনুষ্ঠান প্রদর্শন করা হয়। 

Comments :0

Login to leave a comment