2024 ELECTION YECHURY

জয়ের বিষয়ে বিজেপি নিজেই নিশ্চিত নয়, বললেন ইয়েচুরি

জাতীয়

তিরুবনন্তপুরমে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি এবং মানিক সরকার।

রামমন্দির বা তিন রাজ্যে জয়ের পরও বিজেপি কিন্তু ২০২৪’র ফলাফল নিয়ে অনিশ্চিত। মুখে চারশো আসনে জয়ের স্লোগান দিলেও ভয়ে রয়েছে বিজেপি। সে কারণেই ঝাড়খণ্ডে বিরোধী নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের পিছনে ছুটছে ইডি। সে কারণেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিষয় তোলা হচ্ছে ভোটের মুখে। লক্ষ্য আসলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ।
মঙ্গলবার তিরুবনন্তপুরমে সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন এবং বিজেপি প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপি জিতছে বলে প্রচার হলেও বাস্তব তা নয়। বিজেপি নিজেই নিশ্চিত নয়। প্রচারের জন্য ‘চারশো পার’ বলা হচ্ছে।’’ 
তাঁকে প্রশ্ন করা হয় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন প্রসঙ্গে। বিজেপি বলছে মুখ্যমন্ত্রী ‘পালিয়ে গিয়েছেন।’ ইয়েচুরি বলেন, ‘‘বিজেপি একটি প্রধান প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না। ২০১৯’র পর থেকে ইডি ৫৫০০’র বেশি অভিযোগ দায়ের করেছে। তার মধ্যে মাত্র ২৫টিতে বিচার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। অপরাধী ঘোষিত হয়েছে ২৩টি অভিযোগে। এই অপরাধীরা কেউ রাজনীতির লোক নন। তা’হলে পালিয়ে যাওয়ার প্রচার কেন? ইডি’র মাধ্যমে বিজেপি কেবল হেনস্তা করাচ্ছে এবং বোঝাপড়া করা হচ্ছে। ইডি কারও বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার পর তিনি বিজেপি’তে যোগ দিলেই কেন তদন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? তখন আর তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত নন! একনাথ শিণ্ডে বা অজিত পাওয়ারদের ক্ষেত্রে তো তা-ই হয়েছে। আসামের হিমন্ত বিশ্বশর্মাও বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার পরই সব তদন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ‘পালিয়ে যাচ্ছে’ না, আসল কথা হলো ‘কেন আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছ না!’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বস্তুত হত্যা করছে বিজেপি।’’
কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, বিহারের পর এখন ঝাড়খণ্ডে উদাহরণ দেন ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, ‘‘ইডি এখন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইডি’র গুরুতর অপব্যবহার হচ্ছে। অন্যের দল ভাঙানো, বিধায়ক ভাঙিয়ে নেওয়া গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। কিন্তু বিজেপি’র কার্যধারার প্রধান বৈশিষ্ট্য এই প্রক্রিয়া।’’
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সিপিআই(এম) প্রতিটি ধর্মকে সম্মান করে। সম্ভ্রম করে প্রত্যেক ব্যক্তি নাগরিকের নিজের পছন্দের ধর্মকে বেছে নেওয়ার অধিকারকে। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগকে রাজনীতি স্বার্থে ব্যবহারের বিরোধী সিপিআই(এম)। অযোধ্যায় ঠিক তা-ই হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক গণরাজের চরিত্র ভারতের। তার ভিত্তিকেই ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লড়াই প্রতিফলিত হবে নির্বাচনী সংগ্রামেও। এই লড়াইয়ে জনতার ধর্মীয় ভাবাবেগ অপব্যবহারের  সরাসরি বিরোধিতা করবে সিপিআই(এম)।’’
রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফলও পর্যালোচনা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। ইয়েচুরি বলেছেন, শেষ পর্বে বড় রাজ্যগুলির মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছে মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে। কংগ্রেস জয়ী হয়েছে তেলেঙ্গানায়। তার আগের পর্বে জয়ী হয়েছে হিমাচল প্রদেশ এবং কর্ণাটকে। বিজেপি জয়ী হচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভোট এককাট্টা করে। সিপিআই(এম) এই ধর্মীয় মেরুকরণের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। 
ইয়েচুরি মধ্য প্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস নেতাদের অবস্থান তুলে বলেছেন, ‘‘নরম হিন্দুত্ব এই রাজনীতিকে প্রতিহত করতে পারে না। হালকা করে হিন্দুত্বের কথা বলার মানে মানুষ হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িকতার দিকেই আকৃষ্ট হবে। বিজেপি’র শক্তির প্রধান উৎস এই উপাদান। সব ধর্মনিরপেক্ষ দলের কাছেই শিক্ষা নেওয়ার। এই বিপদের মোকাবিলা করতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকেই সামনে রেখে।’’

Comments :0

Login to leave a comment