আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের দলবদ্ধ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর ৯ মাস কেটে গেছে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা আজও ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় সরকার তথা রাষ্ট্রের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজ্য পুলিশের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছে বহুকাল আগেই। এখন দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই-ও একই পথের পথিক। রাজ্য পুলিশের দ্বারা ন্যূনতম কোনও তদন্ত হবে না এটা জানাই ছিল। কারণ, তারা একেবারে শুরু থেকে ধর্ষক খুনি সহ গোটা ষড়যন্ত্রকারী চক্রকে ধরার বদলে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ চিরতরে ধ্বংস করে দেবার কাজেই সবচেয়ে বেশি দক্ষতা ও তৎপরতা দেখিয়েছে। অর্থাৎ অপরাধীদের ধরা, কঠোরতম সাজা নিশ্চিত করার জন্য নিচ্ছিদ্র তদন্তের মাধ্যমে সমস্ত ধরনের তথ্য প্রমাণ হাজির করার দায় তারা নেয়নি। শাসক নির্দেশে তারা উলটো পথেই হেঁটেছে। অতএব কোনোদিন অভয়াকে ন্যায় বিচার দেবে না এটা অভয়ার বাবা মায়ের মতো গোটা বঙ্গবাসী হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছেন। কিন্তু তাই বলে সিবিআই’ও সেই পথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে? সিবিআই সরাসারি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীন। উচ্চ আদালত রাজ্য পুলিশে আস্থা হারিয়ে ভরসা করেছিল সিবিআই’র উপর। এখন দেখা যাচ্ছে রাজ্য পুলিশ আর সিবিআই’র বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। ঘুঁটের এপিঠ ওপিঠ মাত্র।
দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অতন্তকারী সংস্থা ৯ মাস ধরে তদন্ত চালিয়ে অশ্ব ডিম্বও প্রসব করতে পারেনি। শুরুতে রাজ্য পুলিশ যাকে একমাত্র অভিযুক্ত খাড়া করে দিয়ে গিয়েছিল সিবিআই ৯ মাস ধরে তাকেই ধরে বসে আছে। আর একপাও এগতে পারেনি। এমনকি তাদের তদন্ত প্রক্রিয়াও ক্রমশ সন্দেহজনক হয়ে উঠছে। তারা আদৌ কি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে নাকি সবকিছু ফাইল বন্দি করে অন্য কাজে মনোযোগী হয়েছে। সিবিআই’র উদ্দেশ্য নিয়েই রীতিমতো ধন্দ তৈরি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই সিবিআই’র এ ধরনের কাজকর্মে অভয়ার বাবা-মা হতাশ। আদৌ ঠিকঠাক তদন্ত হবে কিনা, ন্যায় বিচার মিলবে কিনা তা নিয়ে তারা যথেষ্ট সন্দিহান। এমতাবস্থায় সঠিক পথে তদন্তের গতি বাড়াতে এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর শরণাপন্ন হতে চেয়েছিলেন। এই মর্মে তাঁদের সাক্ষাতের সময় চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। দুর্ভাগ্যে ও অত্যন্ত হৃদয় বিদারক হলেও এটা নির্মম সত্য দু’জনের কেউই সাক্ষাতের সময় দিতে সম্মত হননি। রাষ্ট্রপতি প্রত্যুত্তরে জানিয়েছেন ঘটনায় তিনি ব্যথিত। তবে বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলার মতো সময় তাঁর নেই। আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সন্তানহারা বাবা-মাকে ই-মেল করে জানানো হয়েছে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দপ্তর অর্থাৎ অমিত শাহ’র দপ্তর দেখে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর দেখে না। অতএব দেখা করা বা কথা বলার দরকার নেই। ই-মেল বার্তায় স্বরাষ্ট্র দপ্তরে একটি ফোন নম্বর দিয়ে সেখানে ফোন করতে বলা হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও এটা মানতেই হবে এই হলো মহান ভারতের দুই সর্বোচ্চ প্রধানের সংবেদনশীলতা। ময়ূরকে দানা খাওয়াতে বা গোরুকে ঘাস খাওয়াতে তাদের সময়ের অভাব হয় না। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় দলবদ্ধ ধর্ষণের পর খুন হওয়া চিকিৎসক তরুণীর অসহায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দু’দণ্ড কথা বলার মানবিকতাই নেই। তার চেয়েও মর্মান্তিক ঘটনা হলো স্বরাষ্ট্র দপ্তরে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে সেখানে বাবা মা ইতিমধ্যে অন্তত হাজার বার ফোন করার পরও কেউ ফোন ধরেনি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সত্যিকারের নম্বর দেওয়া হয়েছিল কি, নাকি রসিকতা করা হয়েছিল।
editorial
এ কেমন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর

×
Comments :0