Farmer suicide

ঋণের দায়ে ফের আত্মঘাতী আলুচাষি

রাজ্য

ঋণের চাপে আবার আলুচাষির আত্মহত্যা। মৃতদেহ ফেরত পেতে স্ত্রীকে দিয়ে মুচলেকা লেখানো হলো অবসাদে মৃত্যু, এই অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে কৃষকদের মধ্যে এবং পাড়া প্রতিবেশীদের। 
গড়বেতা ২নম্বর ব্লকের গোয়ালতোড় থানার জোগার ডাঙ্গা মৌজার ভাটমৌদি গ্রামে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আত্মঘাতী কৃষকের নাম বাপ্পা দাস (৪৫)।  শুক্রবার ভোর চারটা নাগাদ বাড়ির শৌচালয়ে গলায় গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ দেখতে পান বাড়ির লোকজন। এত ভোরে সবার অজান্তে বসতবাড়ির একটু দূরে শৌচালয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান তাঁর দাদা রাজু দাস। বিছানায় না দেখতে পেয়ে তাঁর স্ত্রী প্রতিমা খোঁজ নিতে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান। তখন বাড়ির লোকজন শৌচালয়ে গিয়ে দেখেন দেহ ঝুলছে।
দাদা রাজু দাস এদিন বলেন, আমার ভাই গত তিন বছর ধরে নিজের দশ কাঠা জমি সহ চুক্তিতে পরের আরো দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছে। চুক্তির প্রতি বিঘাতে অগ্রিম দশ হাজার টাকা দিতে মহাজনী ঋণ নেয়। গত দুইবারের ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিল। চুক্তিচাষে অপরের জমি নিয়ে চাষ করায় সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। 
বাপ্পা দাস এবারেও সমবায় থেকে ও মহাজনী ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন, একথা জানান তাঁর জ্যাঠতুতো দাদা সৌমেন দাস। তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মোট কত ঋণ তা খোঁজ না নিলে বলা সম্ভব নয়। তবে মহাজনী ও সমবায় মিলে পুরানো ঋণ ও এবছরের ঋণ মিলে দেড় লক্ষাধিক টাকা হবে। এই চাষের উপর নির্ভর করেই ভাই সংসার চালাতো বলে জানান সৌমেন দাস।
তাহলে তাঁর মৃত্যু অবসাদে বলে দেহ চাইলেন কেন ওঁর স্ত্রী প্রতিমা দাস? সৌমেন দাস পরিষ্কার করে বলেন, যে যাবার সে তো চলে গেলো। শোকস্তব্ধ পরিবার। বাড়িতে বৃদ্ধ মা সহ তাঁর স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তান রয়েছে। দেহ ফেরত নিয়ে গিয়ে যত তাড়াতাড়ি দেহ দাহ করা যায়, তার জন্য এমন বয়ান লিখতে হয়েছে।  নইলে নানান ঝামেলা, উলটে নানা অজুহাত খাড়া করে দেহ আটকে রেখে হেনস্তা হতে হবে। কে আর বিপদে পড়তে চায়? সৌমেন দাস এদিন বলেন, বয়ান যা লেখানো হোক না কেন, ঋণের চাপ তো আছে। তা তদন্ত করলেই পাওয়া যাবে। কাগজ তো সমবায় ও মহাজনের কাছেই আছে। 
জানা গেছে, যারা মহাজনী ঋণ নেয় তাদের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে, বড়জোর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঋণ শোধ করার জন্য চাপ থাকে। নইলে সুদের উপর সুদ দিতে হয়। সেই জন্য প্রায় ৭২ প্যাকেট আলু বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ৫৬০ টাকায় প্রতি কুইন্টালে। এখন দাম বেড়ে ৭২০-৭৮০ টাকা কুইন্টাল দর উঠেছে। ডাহা লোকসান হওয়া, তার উপর ঋণের চাপ, সংসার চালানোর চিন্তায় শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে জানান গ্রামবাসীরা।

 

Comments :0

Login to leave a comment