Biman Basu

মুক্তমনাদের ওপর আক্রমণ দু’পারে, সজাগ বামপন্থীরা: বিমান বসু

রাজ্য

মঙ্গলবার জ্যোতি বসু নগরে (নিউ টাউন) জ্যোতি বসু সমাজ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ঘোষণা করছেন বিমান বসু। রয়েছেন রবীন দেব এবং সুখেন্দু পানিগ্রাহি।

আগামী শুক্রবার জ্যোতি বসু সমাজ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী নাম নিয়ে যারা বিদ্বেষপ্রচার করছে তাদের বিরোধিতা করে সম্প্রীতি ও মিলনের ঐতিহ্য তুলে ধরার কথা বললেন কেন্দ্রটির চেয়ারম্যান বিমান বসু ও ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য মহম্মদ সেলিম। 
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের অথবা ভারতের যেখানকার মৌলবাদীরাই করুক, মুক্তমনাদের ওপরে আক্রমণ হলে আমরা তার বিরোধী। ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক চাই আমরা। 
মঙ্গলবার জ্যোতি বসু নগরে (নিউটাউন) জ্যোতি বসু সমাজ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের অফিসে বসেই সাংবাদিক বৈঠক করে আগামী শুক্রবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রের সম্পাদক রবীন দেব ও কোষাধ্যক্ষ সুখেন্দু পানিগ্রাহি। 
বসু জানিয়েছেন যে মুক্তমনাদের ওপর দু’পারে আক্রমণ হচ্ছে। দু’পারেই সজাগ বামপন্থীরাও।
শুক্রবার জ্যোতি বসুর প্রয়াণ দিবসে এই কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ে নির্মিত দোতলা ভবনের উদ্বোধন করবেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর কো অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন এবং সঙ্গীতও পরিবেশন করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এই প্রসঙ্গেই ‘বাংলাদেশী শিল্পী’কে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রচার শুরু করা হয়েছে একটি মহল থেকে। সাংবাদিকরা তা নিয়ে প্রশ্ন করলে বিমান বসু বলেছেন, উনি শান্তিনিকেতনে বহুদিন থেকেছেন, শিল্পী হিসাবে তিনি প্রশ্নাতীত, এটাই কি যথেষ্ট নয়? তাছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে কোনো খারাপ সম্পর্ক তৈরি হোক, এটাও আমরা চাই না, এই ধরনের কোনো প্ররোচনার শরিকও হবো না। 
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বাংলাদেশের নাগরিক হলে তাঁকে বয়কট করতে যাব কেন? ভারত সরকার কি বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে? রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা মোহরদির শিষ্যা, রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে থাকেন বলে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা তাঁকে ওখানে গাইতে বাধা দিয়েছে। আর এখানকার মৌলবাদীরা বাধা দিচ্ছে উনি বাংলাদেশী বলে। মুক্তমনাদের ওপরে ওখানেও আক্রমণ, এখানেও আক্রমণ। এই দুই মৌলবাদের বিরোধিতাতেই দৃষ্টান্ত হিসাবে আমরা ওঁকেই বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, উনি আসবেন। শিবসেনা মার্কা উগ্র অন্ধত্ব জাগিয়ে যারা অন্যদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় আমরা রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাতেই তাদের বিরোধিতা করি। 
এদিন বিমান বসু সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০১০ সালেই জ্যোতি বসু সমাজ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র গঠিত হয়েছিল। তখনই এই কেন্দ্রের জন্য জমি খোঁজা শুরু হয় এবং ২০১১ সালে জ্যোতি বসু নগরে এই জমির প্লট আমরা পছন্দ করে টাকা জমা দিই। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে এই জমি সরকার দিতে চায়নি, তারা আমাদের অন্যত্র আরও বেশি জমিতে সরে যেতে বলেছিল। আমরা অনড় ছিলাম। এই কারণে অনেক পরে জমির রেজিস্ট্রেশন করে আমরা পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করতে পেরেছি। 
রবীন দেব বলেছেন, ২০১১ সালে জমির টাকা দিয়েও আমরা জমি হাতে পেয়েছি ২০২০ সালের অক্টোবরে। তারপর থেকে প্রতিবছরই জ্যোতি বসু সমাজ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আলোচনা সভা, সেমিনার সংগঠিত করা হচ্ছে। গতবছর ১৭ জানুয়ারি সীতারাম ইয়েচুরি প্রথম পর্যায়ের কাজের শিলান্যাস করেছিলেন। একবছরের মধ্যেই দোতলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। 
এর জন্য সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও নির্মাণ কর্মী সহ আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিমান বসু বলেন, চারটে পর্যায়ে এখানে কাজ হবে। ভবনটি এখনও দোতলা হয়েছে, এটা ৬ তলা করা হবে। ভবনের একতলায় জ্যোতি বসু গ্যালারি, প্রদর্শনী ও দোতলায় গ্রন্থাগার ও গবেষণার প্রাথমিক কাজ চালু হবে। একটি ছোটো মেডিক্যাল সেন্টারও হবে, এবং শেষ পর্যায়ে একটি ছোটো অ্যাম্ফিথিয়েটার তৈরি করা হবে। শুক্রবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি সুদৃশ্য দিনপঞ্জী এবং দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হবে।

Comments :0

Login to leave a comment