Modi

মোদী খেললেন সেই দলিত তাস

জাতীয়

প্রধান বিরোধী দলের মতামত উপেক্ষা করে দেশের মুখ্য তথ্য কমিশনার (সিআইসি) নিয়োগের পর বিরোধী দলকে চরম দলিত বিরোধী অভিযোগের তাস খেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।  মধ্য প্রদেশের ভোট প্রচারে মোদীর ভাষণে বিরোধী দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই অভিনব ‘দলিত বিরোধী’ অভিযোগ শোনা গেল।  কীভাবে বিরোধী দলের মতামত না নিয়ে নিয়োগে ‘পুরো অন্ধকারে রেখে’ মোদী মুখ্য তথ্য কমিশনারকে নিয়োগ করেছেন তা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিয়েছেন সংসদের বিরোধী কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি।  চিঠিতে তিনি জানান, মুখ্য তথ্য কমিশনার নিয়োগে যে গণতান্ত্রিক রীতি নীতি প্রক্রিয়া আছে তাকে জলাঞ্জলী দিয়ে বিরোধী দলকে পুরো অন্ধকারে রেখে একতরফা এই নিয়োগ সিদ্ধান্ত হয়েছে।  তিনি চিঠিতে রাষ্ট্রপতিকে দেশের গণতান্তিক প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু নিয়োগের প্রক্রিয়া রক্ষায় দ্রুত হস্তক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানান। 
প্রসঙ্গত, দেশে তথ্য জানার অধিকার আইন(আরটিআই) রূপায়ণের দায়িত্বে থাকেন মুখ্য তথ্য কমিশনার(সিআইসি)।  তাতে নিয়োগে যে কমিটি রয়েছে তার সদস্য হলেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা। এই মুখ্য কমিশনারের পদ থেকে গত ৩অক্টোবর ওয়াই কে সিনহা অবসর নেওয়ার পর  তা শূন্য ছিল। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট   মুখ্য তথ্য কমিশনার শূন্যপদে নিয়োগ নিয়ে মামলায় কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করে।  এতে  নিয়োগ না হলে আর টিআই আইনের কার্যত কোনও ভিত্তি থাকবে না জানিয়ে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দেয়।  সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত  ৩ নভেম্বর বিকাল ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নিয়োগ কমিটির এই বৈঠক ডাকা হয়।  কমিটি সদস্য বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরি বৈঠকের সময় পরিবর্তন করে তা সকালের দিকে করার আবেদন জানান।  বৈঠক নিয়ে এতে কোন কিছুই তাকে জানানো হয়নি। বিকালে আগের সময়ে বিরোধী দল নেতাকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজেরা বসে মুখ্য তথ্য কমিশনার পদে আইএএস হীরালাল সামারিয়াকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরিকে নিয়োগের নাম স্থির করা নিয়ে কিছুই জানানো হয়নি। সাধারণত এতে নামের প্যানেল হয়ে থাকে। তাও কিছু জানানো হয়নি। তার মতামত গ্রহন না করে সিদ্ধান্ত হয়ে গেলেও পরেও তা নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। রাষ্টপতি ভবনে  মুখ্য তথ্য কমিশনার হিসাবে  হীরালাল সামারিয়ার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন সকালে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার একটি চিঠি চৌধুরি পান। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং শপথ  গ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে বিরোধী নেতাকে কার্যত বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
এদিন রাষ্ট্রপতি মুর্মুকে চিঠিতে চৌধুরি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মোদী সরকার কিভাবে শেষ করে দিচ্ছে তার উদাহরণ হিসাবে এঘটনা তুলে ধরেন। তিনি রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিতে বলেন, মুখ্য তথ্য কমিশনার নিয়োগ কমিটির আমি একজন সদস্য হলেও আমাকে এতে পুরো অন্ধকারে রেখেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। এতে তথ্য কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে জাতীয় গণতান্ত্রিক রীতি নীতি প্রক্রিয়া সব জলাঞ্জলি দেওয়া হলো। কাকে নিয়োগ করা হচ্ছে তা আমাকে জানানো হলো না। এভাবে বর্তমান সরকার বিরোধী দলের ভূমিকাকে কার্যত উপেক্ষাই করছে। যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলে না। তিনি রাষ্ট্রপতিকে তার চিঠিতে বলেন, আজ এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করা হলো, আমার আবেদন দেশে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে তা রক্ষায় আপনি নিশ্চয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।  তিনি বলেন, নিয়োগ কমিটি আমি একজন সদস্য হলেও আমার অনুপস্থিতিতে ঘন্টা খানেকের মধ্যে নাম ঠিক হয়ে যায়। এতে বোঝা যায় সবকিছু ঠিক করা ছিল। তাতে কোনও কিছু আলোচনা হয়নি। চৌধুরি বলেন, ২০০৫ সালে আরটিআই আইন তৈরি হয়। বিরোধী মতামতকে গুরুত্ব দিতেই এই আইন প্রণয়ন করে ইউপিএ সরকার। এখন তার গণতান্ত্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে শেষ করে দিচ্ছে মোদী সরকার। 
এদিকে মুখ্য তথ্য কমিশনার নিয়োগে বিরোধী মতামতকে কার্যত বাতিল করে দিয়ে এবারে নির্বাচনী প্রচারে তা ব্যবহার করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এদিন মধ্য প্রদেশের সাধ জেলায় নির্বচনী প্রচারে মোদী বলেন,কংগ্রেস দলিত বিরোধী। তাই মুখ্য তথ্য কমিশনার পদে দলিত আইএএস অফিসার হীরালাল সামারিয়াকে কংগ্রেস সমর্থন করে না। তাই তার নিয়োগ বৈঠক কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি এড়িয়ে গেছেন।  তিনি বলেন, কংগ্রেস শুধু আমাকে দিন রাত  গালি দিচ্ছে।  এবারে মুখ্য তথ্য কমিশনার নিয়োগ বৈঠক এড়িয়ে দলিতদের বিরোধিতা করছে তা বুঝিয়ে দিল। তিনি বলেন, আমরা দলিতদের অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়েছি বলেই রাজস্থানের দলিত আইএএস অফিসারকে মুখ্য নিবার্চন কমিশনার পদে নিয়োগ করেছি। মোদী  মুখ্য তথ্য কমিশনার নিয়োগকে দুই রাজ্যে বিধানসভা দলিত ভোট টানার কৌশল হিসাবে যে ব্যবহার করছেন মোদী তা ভাষণে বুঝিয়ে দিলেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment