নতুন বছরের একেবারে শুরুতেই বিপর্যয় উত্তর সিকিমের লাচুং’এ। ফের ভেঙে পড়লো লাচুং ও মাউন্ট কাটাউয়ের মাঝের লোহার তৈরী ব্রেইলি ব্রিজ। ধস, খরস্রোতা তিস্তা নদীর জলচ্ছ্বাস, ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত, লোনাক হ্রদ বিপর্যয় সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিধ্বস্ত উত্তর সিকিমের একাধিক এলাকায় বিগত বছরগুলিতে একাধিকবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও, পরবর্তীতে একটু একটু করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু শনিবার ফের ভেঙে পড়লো উত্তর সিকিমের লাচুং সেতু। লাচুং সেতু একটি ব্রেইলি ব্রিজ। সিমেন্টের পোল থেকে খুলে কয়েক ফুট নীচে ঝুলে পড়ে গোটা ব্রেইলি ব্রিজটি। তবে সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় হতাহতের কোন খবর নেই।
জানা গেছে, একটি মালবাহী গাড়ি ব্রেইলি ব্রিজটি দিয়ে যাবার সময়তেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুটি ভেঙে পড়ায় কাটাউ ও লাচুঙের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার একটি মালবাহী চার চাকার গাড়ি লাচুং সেতু পার করছিলো। সেই সময় গাড়ির চালক বুঝতে পারেন সেতুটি একদিকে কাত হয়ে যাচ্ছে। সেতুর নীচ থাকা পাটাতনের অংশগুলি মোচর দিয়ে ভাঙতে শুরু করেছে। বিপদ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে গাড়ির চালক দ্রুত গাড়িটি সেতুর ওপর থামিয়ে দিয়েই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। ভাঙতে থাকা লাচুং সেতুটি কোনক্রমে পায়ে হেঁটে পার করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছান। এরপরেই চালক সহ স্থানীয়দের নজরে আসে সিমেন্টের পোল থেকে বেশ কয়েক ফুট নীচে ঝুলছে ব্রেইলি ব্রিজটি। যে কোন সময় গোটা সেতুটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়। লাচুং ব্রেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়ার খবর চাউর হতেই ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কর্মীরা। এরপরেই ক্ষতিগ্রস্ত ভেঙে পড়া লাচুং সেতু সংযোগকারী রাস্তাটি আপাততভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিন সিকিম পর্যটনের তরফে একটি নোটিশ জারি করে সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা জানানো হয়েছে। জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে লাচুং গ্রামের সংযোগকারী সেতুটি ভেঙে পড়েছে। তবে ব্যবহারের জন্য একটি বিকল্প সেতু রয়েছে। সমস্ত হোটেলগুলি হাটা পথে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে। মঙ্গন থেকে লাচুং, ইয়ুমথাঙ এবং জিরো পয়েন্ট রোডে সমস্ত ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
প্রসঙ্গত গত বছর ভারি বৃষ্টিপাতের কারনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো লাচুং ব্রেইলি ব্রিজটি। পরবর্তীতে সেনার উদ্যোগে ফের ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি পুর্নঃনির্মানের কাজ করা হয়। গত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই লাচুং ব্রেইলি সেতুটির নতুন করে উদ্বোধন হয়েছিলো। এক মাস যেতে না যেতেই ব্রেইলি ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় সেতুটির নির্মান কাজ সহ সংক্রান্ত বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে শনিবার দুপুরে সেতুটি ভেঙে পড়ায় দেশ বিদেশ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বিপাকে পড়েছেন। সেতুটির ওপাড়ে লাচুং—র গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক পর্যটক আটকে পড়ার খবর মিলেছে। সিকিম প্রশাসনের তরফে বিকল্প পথে সেতু বিপর্যয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সেতুটিকে দ্রুত মেরামতের জন্য সেনার সহায়তা নেওয়া হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, চীন, ভারত বর্ডার সংলগ্ন উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ন এলাকা। সেকারনে গোটা দায়িত্ব বর্তাবে সেনার ওপরেই। কি কারনে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এই লোহার তৈরী ব্রেইলি সেতুটি ভেঙে পড়লো তা তদন্ত করে দেখতে সেনার তরফে পূর্নাঙ্গ তদন্ত করা হবে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জেরবার হয়ে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে সবেমাত্র উত্তর সিকিমের দরজা উন্মুক্ত হয়েছিলো পর্যাকদের কাছে। ১ডিসেম্বর উত্তর সিকিমের মঙ্গন ও পরবর্তীতে ২৫ডিসেম্বর উত্তর সিকিমের বিভিন্ন ট্যুরিষ্ট স্পটগুলি খুলে দেওয়া হয়। নতুন বছরের শুরু মানেই পাহাড়ে পর্যটনের ভরা মরশুম। সিকিমে এই সময়ে অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমিয়েছেন। এই সময় সেতু দুর্যোগে আপাততভাবে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় পর্যটন ব্যবসায় ব্যাপক মন্দা দেখা দেবার আশঙ্কায় ভুগছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। যদিও লাচুং ব্রেইলি সেতুটি ভেঙে পড়লেও পর্যটনে কোন প্রভাব পড়বে না বলেই জানিয়েছেন হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক সম্রাট সান্যাল। ভরা পর্যটন মরশুমে পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তায় রেখে ভেঙে পড়া লাচুং সেতুটি দ্রুত মেরামতির চিন্তাভাবনা চলছে সিকিম প্রশাসনিক স্তরে।
Comments :0