RSS vs Communists

কমিউনিস্ট বনাম আরএসএস

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

আরএসএস মনে করে তাদের হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের প্রধানতম আদর্শগত শত্রু বামপন্থীদের মতাদর্শ। আরএসএস’র বাহিনীকে তাদের কাজের অভিমুখ সঠিকভাবে নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই বোঝাপড়াটা অতীতে আরএসএস’র তাত্ত্বিক মহল থেকে স্মরণ বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি নাগপুরের সদর দপ্তর থেকে দশেরার দিন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ফের বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারতের বুকে তাদের কাঙ্ক্ষিত হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের শক্তিশালী মতাদর্শগত প্রকল্প হিন্দুত্ববাদকে চ্যালেঞ্জ করার বা মোকাবিলা করার প্রধান প্রতিপক্ষ বামপন্থীরা তথা মার্কসবাদীরা। রাজনৈতিকভাবে আরএসএস-বিজেপি’র বিরোধী অন্য অনেক শক্তি থাকলেও মতাদর্শগতভাবে বিকল্প হাজির করেছে বামপন্থীরাই। তাই আরএসএস’র লক্ষ্যপূরণের পথের কাঁটা বামপন্থীরাই।
এবারের ভাষণে ভাগবত অবশ্য সরাসরি নাম করে বামপন্থী দলগুলিকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেননি। নিজেদের যেমন তারা হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের সাংস্কৃতিক মঞ্চ বা সংগঠন বলে দাবি করেন তেমনি বামপন্থী মতাদর্শকেও সাংস্কৃতিক বামপন্থা বলে উল্লেখ করেছেন। এই বামপন্থাকে নানাদিক থেকে নানাভাবে মানুষের বোধের ও চৈতন্যের মধ্যে নিয়ে যাবার যে বৃহত্তর পরিসর ও পরিকাঠামো দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে তাকেই ভাগবত বামপন্থী ইকোসিস্টেম বলে চিহ্নিত করেছেন। সঙ্ঘ পরিবারের বাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা যে এই ইকোসিস্টেম‍‌কে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ এই বামপন্থী ইকোসিস্টেম যা দেশের মধ্যে সক্রিয় তাকে নির্মূল না করা গেলে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক মতাদর্শের নিরঙ্কুশ ইকোসিস্টেম তৈরি করা যাবে না এবং শেষ পর্যন্ত হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন সফল হবে না।
বামপন্থীদের কতজন সাংসদ বা বিধায়ক আছেন সেই সংখ্যা বিচার করে ভাগবত বামপন্থীদের তাদের প্রধান শত্রু বলেননি, বলেছেন হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অন্তর্নিহিত অপ্রতিরোধ্য শক্তিকে সামনে রেখে। এই শক্তির প্রকাশ ও বিকাশের জন্য বামপন্থীরা যে পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে এবং তুলছে সেটাই ভাগবতের চোখে বামপন্থী ইকোসিস্টেম। এই ইকোসিস্টেমই ধ্বংস করতে চায় আরএসএস।
আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং তারপর লোকসভা নির্বাচনে আশু লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন শাসক বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যূত করা। কিন্তু একটা দু’টো ভোটে সেটা সম্ভব হলেও বিজেপি তথা আরএসএস দুর্বল হয়ে পড়বে না। কারণ তাদের মতাদর্শের প্রভাব থেকে যাবে। তাই লড়াইটা শুধু রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রীভূত করলেই হবে না, একই সঙ্গে তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধেও তীব্র লড়াই চালাতে হবে। হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের বিপরীতে বিকল্প মতাদর্শ আছে একমাত্র বামপন্থীদেরই। তাই আরএসএস’র বিরুদ্ধে সর্বাত্মক মতাদর্শগত লড়াইয়ের সামনের সারিতে থাকতে হবে বামপন্থীদেরই। মতাদর্শগতভাবে আরএসএস-কে দুর্বল ও কোণঠাসা করা না গেলে হিন্দুত্ববাদের বিপদ থেকেই যাবে।
পুঁজিতন্ত্রের উচ্ছেদ সাধনে পুঁজিবাদের অনুগামী সমস্ত ধরনের রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে বামপন্থীরা লড়াই করে আসছে জন্মলগ্ন থেকেই। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে পুঁজিতন্ত্রের রক্ষক ও চালক সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধেও বামপন্থীদের লড়াই বিরামহীন। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতের বুকে পুঁজিতন্ত্রকে আশ্রয় করে অতিভয়ানক শক্তিরূপে আবির্ভাব হয়েছে হিন্দুত্ববাদ। তাই এখন এই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামপন্থীরা দেশের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার উপর জোর দিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment