করোনা সংক্রমণকে নিয়ে ফের উদ্বেগ বাড়ছে দেশে। নতুন করে করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চোখ রাঙাচ্ছে সক্রিয় ওমিক্রনেরই একাধিক সাব ভ্যারিয়েন্ট। ইতিমধ্যে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে। ভারতে করোনা নতুন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২৯ মে, ২০২৫ পর্যন্ত দেশব্যাপী ১ হাজার ১০ জন সক্রিয় সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৪৩০ জন। শীর্ষে রয়েছে কেরালা, তারপরে মহারাষ্ট্রে ২১০ জন, দিল্লিতে ১০৪ জন এবং কর্ণাটকে ১২৬জন, তারমধ্যে ৪০ জন নতুন সংক্রমিত হয়েছেন। সেই সঙ্গে ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো অন্যান্য রাজ্যেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে চণ্ডীগড়ে। প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৪০ বছরের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি লুধিয়ানায় কর্মরত ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের বাসিন্দা ছিলেন। শ্বাসকষ্টের কারণে চণ্ডীগড়ের গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নমুনা পরীক্ষা করলে মঙ্গলবার জানা যায় তিনি করোনা পজিটিভ। বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
গোটা দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এরাজ্যেও লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে এখনও কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই! কলকাতায় আগেই খোঁজ মিলেছে দুই করোনা আক্রান্তের। এবার একাধিক জেলা থেকেও আসছে আক্রান্ত হওয়ার খবর। সংক্রমণের খবর মিলেছে খড়গপুর আইআইটি-তে। করোনা আক্রন্ত হয়েছেন পুরুলিয়ার পুরুলিয়া গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ সব্যসাচী দাস এবং তাঁর স্ত্রী। জানা গেছে কলেজের ক্যাম্পাসে নিজের আবাসনেই আইসোলেশনে রয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি তাঁরা বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরেই তাঁদের জ্বর আসে, গা-হাত-পা ব্যাথা শুরু হয়। তারপর র্যােপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করার পর প্রাথমিকভাবে কোভিড সংক্রমণ ধরা পরে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্তর খোঁজ মিললো। এখনও পর্যন্ত মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ মহকুমা বা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গুলিতে সতর্কতা ও করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতির কোনো নির্দেশিকা আসেনি প্রসাশনিক দপ্তর থেকে এমনটাই জানা গেছে। খড়্গপুর আইআইটি এবং রেল নগরীকে কেন্দ্র করেই গতবারের করোনা সংক্রম মারাত্মক আকার নিয়েছিল। এবার পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলল সেই খড়গপুর আই আই টি ক্যাম্পাসে।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও আইআইটি সূত্রে জানা যায়, ২৬ বছর বয়সি এক গবেষকের কোভিডের উপসর্গ থাকায় বুধবার তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ব়্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হয়। তাতেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বুধবারই তাঁকে ভর্তি করানো হয় আইআইটি খড়গপুর বিসি রায় হাসপাতালে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করা হয়েছে আইআইটি খড়গপুর কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
ওই পড়ুয়া হস্টেলের একটি রুমে একাই থাকতেন। ফলে বাকি পড়ুয়াদের তেমন ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ। তবুও ওই পড়ুয়ার সংস্পর্শে আসা সকলের যদি উপসর্গ দেখা দেয়, তাঁরও টেস্ট করানো হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ওই পড়ুয়া সম্প্রতি গবেষণার সূত্রে বীরভূমে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পরই জ্বর, সর্দি, কাশি, গন্ধ না পাওয়ার উপসর্গ অনুভব করেন। তবে, ওই পড়ুয়া কোভিডের দু'টি ভ্যাকসিনই নিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। স্বাস্থ্য দপ্তর আরও জানিয়েছে, আপাতত ওই পড়ুয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন,‘‘আমরা খড়্গপুর আই আই টি তে এক গবেষকের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। উপসর্গ আগের মতোই। স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি প্রভৃতি। মৃদু উপসর্গ থাকলে এবং ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে ভয়ের কিছু নেই। পাশপাশি, সাধারণ মানুষকে আবার মাস্ক পরার এবং একে অন্যের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার অধ্যাপক ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘কোভিড টেস্ট বা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার নির্দেশ এখনও পাইনি। তবে, আমরা এমন তথ্য পেয়েই ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
প্রসঙ্গত, কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ব্যাপক হারে কোভিড আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল খড়্গপুর শহরের আই আই টি সহ রেল কলোনি এলাকায়।
Comments :0