SSC SCAM

দুর্নীতির দায় সরকারের

সম্পাদকীয় বিভাগ

দুর্নীতির সব দায় তো সরকারের। শীর্ষ আদালতের একের পর এক রায়ে বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু কোনও হুঁশ নেই। রাজ্য প্রশাসনে যেন সার্কাস চলছে। অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তায়। মার খাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
এসএসসি’র ওএমআর শিটে কারচুপি রয়েছে, এমন প্রার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারবে না, ফেরাতে হবে বেতনও,  ফের রাজ্য সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট আরও একবার নির্দেশে বলেছে, ওএমআর শিটে কারচুপি থাকায় যারা টেইন্টেড হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের নতুন করে আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। গত ৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাও তাঁর নির্দেশে একই কথা  বলেছিলেন।  কিন্তু দুর্নীতি তো শুধু অযোগ্যরা করেননি, এর দায় তো নিতে হবে সরকারকে।
সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি’র ২৫ হাজার ৭৫২জন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করেছে। শিক্ষকদের মধ্যে অযোগ্য বা টেইন্টেড বলে যাদের বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ওএমআর শিট বিকৃত করা প্রার্থী, প্যানেল বহির্ভূত প্রার্থী, প্যানেল উত্তীর্ণ হওয়ার পর যাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, সাদা খাতা জমা দিয়ে যারা চাকরি পেয়েছে, র্যা ঙ্ক জাম্প করে যারা চাকরি পেয়েছে, এছাড়াও রয়েছে অনেক বেআইনি নিয়োগ। শীর্ষ আদালতের রায় স্পষ্ট, কিন্তু প্রশ্ন হলো, যারা টাকার বিনিময়ে চাকরি দিল তাদের কি হবে? অদ্ভুত বিষয়, এসএসসি এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনও তথ্য এবং নথি নিজেদের কাছে রাখেনি। ফলে যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের তারা বাছাই করতে পারেনি। ওএমআর শিটের কোনও স্ক্যান কপি নেই,  নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। অযোগ্য প্রার্থীদের রক্ষা করার জন্যই যোগ্য প্রার্থীদের ওএমআর শিট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি এবং জালিয়াতি চাপা দেবার কাজ করতে পর পর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা, তাদের কয়েকজন জেলে ঢুকলেও বাকিরা বহাল তবিয়তে প্রশাসনে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।  আদালত তার নির্দেশে বলেছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া কাজ শেষ করতে হবে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক আবেদনের ভিত্তিতে  স্কুলগুলি চালানোর জন্য  যোগ্য শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তবে এই ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে বেশি হওয়ায়, গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের স্কুলে যাওয়ার কোনও অনুমতি দেয়নি শীর্ষ আদালত। একটা সরকার দুর্নীতিকে কিভাবে প্রশ্রয় দিতে পারে তার ‌আরও একটি নমুনা মিলল এর পরেও। চাকরি বাতিল হলেও চিহ্নিত যোগ্য শিক্ষকদের আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া ও বেতন প্রাপ্তির সাময়িক ছাড় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সীমাহীন দুর্নীতির কারণে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীদের গোটা নিয়োগই বাতিল করে দেয়। এখন শীর্ষ আদালতের রায়কে কার্যত অমান্য করে সরকারি কোষাগার থেকে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। জলের মতো পরিষ্কার সরকার কি চায়।
চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কেউ হয়তো এখনো ভরসা রাখে এই অপরাধের মাথাদের উপর। সেই ভাবনা থেকেই কসবায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের দপ্তরে গেছিল ওরা। প্রত্যুত্তরে জুটেছে লাথি সহ পুলিশের উন্মত্ত আচরণ। সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের দপ্তরের সামনে লাগাতার বসেছিলেন ওঁরা, যদি ন্যায় বিচার জোটে এই প্রত্যাশায়। সেখানেও আক্রমণ একই সঙ্গে তৃণমুল বাহিনী এবং পুলিশের। চাকরিহারা শিক্ষকদেরও বুঝতে হবে এইসব অপরাধীদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই আদালতের রায়ে ওরা আজ 'অযোগ্য', 'দাগি' বা 'অপরাধী' হিসাবে চিহ্নিত। বুঝতে হবে কাদের  অপরাধে ওদের সব স্বপ্ন ভেঙে  তছনছ হয়ে গেছে। ভয়ঙ্ককর আক্রমণ নেমে এসেছে রাজ্যের শিক্ষিত মেধাবী এবং যোগ্য  শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর।  শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকারা আক্রান্ত হচ্ছেন ভাবলেও ভুল হবে, বস্তুত আক্রান্ত হচ্ছে  এরাজ্যের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা। এই সাধারণ বিষয়টা বুঝতে হবে সকলকেই।

Comments :0

Login to leave a comment