SUJAN CHAKRABORTY

অসাংবিধানিক মনোভাব তৃণমূল সরকারের: ভাঙড়ে ১৪৪ ‘তোলা’ প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী

রাজ্য

SUJAN CHAKRABORTY ছবি সংগ্রহ থেকে।

অসাংবিধানিক মনোভাবকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে তৃণমূল সরকার। ভাঙড়ের পরিস্থিতিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, বিরোধীদের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি তৃণমূলের অসাংবিধানিক মনোভাবের প্রতিফলন। মুখ্যমন্ত্রী এই মনোভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। 

এদিন হাইকোর্টে রাজ্য জানিয়েছে যে ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রায় কুড়ি দিন ধরে এই এলাকায় জারি ছিল ১৪৪ ধারা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঘুরে বেড়ালেও এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি বিরোধী আইএসএফ’র বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকিকে। 

এই প্রসঙ্গেই চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আদালতে এ কথা বলেছে তৃণমূল সরকার। কারণ মামলা চলছে, ওরা ভয় পেয়েছে। এতদিন ধরে বিস্তীর্ণ এলাকায় কেন এই ধারা? আর সেখানে বিধিনিষেধ জারি করে নির্বাচিত বিধায়ককে ঢুকতে দেওয়া হলো না।’’

চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা বাইরে থেকে এলাকায় এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কী করে?’’ এরপরই তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক মনোভাব নিয়ে চলছে রাজ্য সরকার। ভাঙড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে রাখা তার প্রতিফলন।’’

বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যেরও তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি। চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলে দিলেন ভাঙড়ে তাণ্ডব করেছে হাঙড়রা। কারা হাঙড়। ভাঙড়ের মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেন না, প্রার্থী হতে পারলেন না, তাঁরা হাঙড়? বাইরের বাহিনী, যারা ভাঙড়কে গিলে খেতে চায়, হাঙড় তো তারা। মুখ্যমন্ত্রী এই হাঙড়দের বসিয়েছেন। দায়িত্ব নিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।’’ আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘মাওবাদীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেক মানুষ খুনের দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, সবাই জানে।’’  

পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বার বার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয় আইএসএফ এবং সিপিআই(এম) কর্মীদের। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে খুন হন দুজন আইএসএফ কর্মী। পঞ্চায়েত ভোটের গণনার রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন চারজন। তার মধ্যে তিনজন আইএসএফ কর্মী। আইএসএফ বলেছে, তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং তার লোকজন গণনা কেন্দ্র দখল করতে এসে গুলি চালিয়েছে। কিন্তু, পুলিশ বেছে বেছে আইএসএফ কর্মীদের বাড়ি হানা দিচ্ছে। তাঁদের বিনা দোষে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এদিন হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তৃণমূল ঘোষিত কর্মসূচিতে। ২১ জুলাইয়ে দলের সমাবেশ মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। ৫ আগস্ট বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার হুমকি দিয়ে ভাষণ দেন দলের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি যদিও এখন বিদেশে।

এক প্রশ্নে চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘অসাংবিধানিক কর্মসূচি মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভাইপো ঘোষণা করেছেন। সরকারের ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল, নেয়নি। তাই আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘বাস্তবে এই কর্মসূচি করার মতো জোর তৃণমূলের নেই। পুলিশের জোরে চলছে তৃণমূল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে তৃণমূলের তলার নেতারা আশ্বস্ত বোধ করছেন। তাঁরা চিন্তায় ছিলেন যে নেতা তাঁদের নামিয়ে কেটে পড়েছে। আদালত তাঁদের বাঁচিয়ে দিল।’’ 

রাজ্যে একের পর এক বিস্ফোরণে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন চক্রবর্তী। রবিবার বসিরহাটের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইউসুফ মন্ডল বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে যাব। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছে এই শিশু। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে এমন একের পর এক ঘটনা দেখা যাচ্ছে।

চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘সর্বনাশ হচ্ছে। শৈশবকে বিপন্ন করছে। স্বপ্নকে বিপন্ন করছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘নতুন শিল্প নেই। তোলাবাজি আর বোমা তৈরির শিল্প হয়েছে বাংলায়।’’ 

এদিন রাজ্যপাল ১৭ জন উপাচার্যকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। হয় মুখ্যমন্ত্রী নয় রাজ্যপাল যেভাবে হস্তক্ষেপ করছেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বলে কিছু থাকছে না।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment