গত জুলাইয়ে কুলদীপকে দেখা গিয়েছিল মধ্য প্রদেশের বাগেশ্বরে ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর ধামে। সেই ছবি দিয়ে একাংশ প্রচারও শুরু করেছে ‘দিব্যপুরুষ’ শাস্ত্রীর আশীর্বাদে ফর্মে ফিরেছেন কুলদীপ। বাস্তবে, ওই সাক্ষাতের এক মাসের মধ্যে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন কুলদীপ।
ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর তথাকথিত ‘অলৌকিক’ ক্ষমতা নিয়ে প্রচারে তৎপর একাধিক সর্বভারতীয় চ্যানেলও। সোশাল মিডিয়ায় কুলদীপকে নিয়ে প্রচারও অনেকাংশে সংগঠিত বলেও মত রয়েছে। এমন প্রচারের জেরে অনেক ক্ষেত্রেই কুসংস্কার এবং বুজরুকির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন বহু ঘটনা সামনে রেখে প্রচারও করতে হচ্ছে কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের।
ধীরেন্দ্র শাস্ত্রী উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রচারের জন্যও বারবার খবরে এসেছেন। হিন্দুরাষ্ট্রের দাবিও জানাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। একাধিকবার হিন্দু দর্শন এবং শাস্ত্রের মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন তিনি। মোজো স্টোরি, ধ্রুভ রাঠী’র মত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর বিকল্প মিডিয়ায় রয়েছে সেই সংক্রান্ত বহু ভিডিও। কিন্তু ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’-এর জোরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে তৎপর শাস্ত্রী। বর্তমানে তাঁর অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার সংখ্যা ১৭ লক্ষ।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি গণবিবাহের আসরে ঢুকে দলিত পরিবারকে বন্দুক হাতে গালিগালাজ দিতে দেখা গিয়েছে ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর ভাই শালিগ্রাম গর্গকে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় মধ্য প্রদেশ পুলিশ।
এশিয়া কাপের টপ ফোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উইকেট নেন কুলদীপ। তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় তাঁর ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর দরবার দর্শনের ছবি। ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর দরবারে কুলদীপ যান ৬ জুলাই। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ভারতীয় দলের সঙ্গে ছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভালো ক্রিকেটও খেলেন তিনি। কিন্তু তারপরেও দল থেকে বাদ পড়েন। হিসেব অনুযায়ী ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ১ মাসের মধ্যে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
ভালো খেলেও বাদ পড়া কুলদীপের ক্রিকেটীয় কেরিয়ারে এই প্রথম নয়। ২০২২ সালে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে ৮উইকেট নিয়েও বাদ পড়েন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম একদিনের ম্যাচে বার্বাডোজে ৬ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। ভারত সেই ম্যাচ ৫ উইকেটে জেতে।
কিন্তু ধর্মকে ঢাল করে চলা অন্ধত্ব যুক্তির ধার ধারে না। কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকারে আসীন বিজেপি’র সরকার অন্ধত্বেত প্রচারে মদতও দিয়েছে। চন্দ্রযানের সাফল্য কামনায় ইসরোর বিজ্ঞানীদের তিরুপতি মন্দিরে প্রার্থনা করতে দেখা গিয়েছে। সেই ছবির প্রচার হয়েছে ব্যাপকভাবে। সামনে এসেছে ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দল বেছে নেওয়ার সময় জ্যোতিষীর মত নেওয়ার ঘটনা। বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মীরা যার তীব্র সমলোচনা করছেন।
প্রসঙ্গত, কুলদীপ যাদবের পাশাপাশি ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর দরবারে হত্যে দিতে দেখা গিয়েছে অপর ভারতীয় ক্রিকেটার যজুবেন্দ্র চাহালকেও। যদিও ২০২৩’র ক্রিকেট বিশ্বকাপের দলে ঢুকতে পারেননি তিনি।
Comments :0