দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে আটকে রাখার পরে অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছেন প্রখ্যাত সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও প্যালেস্তাইনপন্থী লেবাননের মুক্তিযোদ্ধা জর্জ ইব্রাহিম আবদাল্লাহ।
ফ্রান্সের একটি আদালত আবদাল্লাহকে মুক্তির আদেশ দিয়েছে। আদেশ অনুসারে, আবদাল্লাহকে ৬ ডিসেম্বর মুক্তি দেওয়া হবে, তবে শর্ত হল যে তিনি ফ্রান্স ছেড়ে চলে যাবেন এবং আর কখনও ফিরে আসবেন না। আব্দাল্লাহর বর্তমান আইনজীবী জ্যঁ-লুই চালানসেট বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তার মক্কেলের মুক্তির আদেশটি ‘বৈধ ও রাজনৈতিক বিজয়’।
এই সিদ্ধান্তটি বিশ্বব্যাপী বামপন্থী কর্মী, সমর্থক এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির দ্বারা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছিল। তবে শুক্রবার ফরাসি ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ প্রসিকিউটর ঘোষণা করেন, তারা আবদাল্লাহর মুক্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ধারাবাহিকভাবে আবদুল্লাহর মুক্তির বিরোধিতা করেছে, অন্যদিকে লেবাননের কর্তৃপক্ষ বারবার তার মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, বামপন্থী সাংসদ এবং মানবাধিকার সংগঠন, যেমন হিউম্যান রাইটস লীগ (এলডিএইচ) এবং এমনকি ফরাসি গোয়েন্দা প্রধানও তার মুক্তির আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
আবদাল্লাহর মামলাটি ফ্রান্সের বামপন্থী ও কমিউনিস্ট মহলে উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেয়েছে। গত মাসে কমিউনিস্ট পত্রিকা L’Humanité প্রকাশিত এক নিবন্ধে ২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অ্যানি এরনাক্স তার দীর্ঘ আটকাবস্থাকে ‘ফ্রান্সকে লজ্জিত করার’ চেষ্টা হিসেবে নিন্দা জানান।
জর্জ ইব্রাহিম আবদাল্লাহ ১৯৫১ সালে উত্তর লেবাননের কুবায়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০-এর দশকে প্যালেস্তাইনপন্থী ও আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে, আবদাল্লাহ লেবাননে ইজরায়েলের আক্রমণের সময় আহত হন, যে বছর তিনি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) এ যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, আবদাল্লাহ লেবাননের সশস্ত্র বিপ্লবী দল (এলএআরএফ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা ১৯৮০ এর দশকে ফ্রান্সে আমেরিকান ও ইজরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চারটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল। ১৯৮২ সালে ফরাসি রাজধানী প্যারিসে মার্কিন সামরিক অ্যাটাশে চার্লস রবার্ট রে এবং ইজরায়েলি কূটনীতিক ইয়াকভ বারসিমন্তভের হত্যাকাণ্ড এই হামলার মধ্যে ছিল, যার জন্য আবদাল্লাহকে পরে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
১৯৮৪ সালে, জর্জ আবদাল্লাহকে কাকতালীয়ভাবে ফরাসি কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করেছিল যখন ফরাসি পুলিশ আবিষ্কার করেছিল যে তিনি জাল আলজেরীয় এবং মাল্টিজ পাসপোর্ট বহন করছেন। জর্জ আবদাল্লাহকে সারা বিশ্বে তার সমর্থকরা প্রতিরোধ ও স্থিতিস্থাপকতার মূর্ত প্রতীক হিসাবে দেখে, কারণ তিনি কখনই ফরাসি, ইজরায়েলি এবং আমেরিকান চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হননি।
১৯৮৭ সালে লিওঁতে বিচারের সময় বিচারকদের সামনে আব্দাল্লাহর অম্লান বক্তৃতা কয়েক দশক ধরে তার সমর্থকদের বিবেকে অনুরণিত হয়েছে। ‘‘আমি একজন যোদ্ধা, অপরাধী নই। আমি যে পথে চলেছি তা প্যালেস্তিনীয়দের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে আমার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে,’’ আব্দাল্লাহ গর্বের সাথে বলেছিলেন।
জর্ডানের ডেমোক্রেটিক পপুলার ইউনিটি পার্টির (জর্ডানে উইহদাহ পার্টি নামে পরিচিত) ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি ড. ইসাম খাজা জর্জ আবদাল্লাহর দীর্ঘ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও জায়নবাদবিরোধী সংগ্রামকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘‘প্যালেস্তিনীয় প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে কমরেড জর্জ আবদাল্লাহর মতো একজন আরব লেবানিজ মুক্তিযোদ্ধার সম্পৃক্ততা একটি স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটে উপনীত হয়েছে, যা সাম্রাজ্যবাদ ও জায়নবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং তাদের ঔপনিবেশিক দখলদারির প্রকল্পগুলোর পরিচিতি ও শিরোনাম হিসেবে আরববাদ ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে জীবন্ত সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করে’’।
Comments :0