ISRAEL PALESTINE CONFLICT

গাজায় একদিনেই নিহত ৭৫৬, সংঘর্ষ বিরতিতে বাধা আমেরিকার

আন্তর্জাতিক

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news

গাজায় বোমাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে ইজরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় ইজরায়েলী বোমায় নিহত হয়েছেন ৭৫৬ জন। মৃতদের ৩৪৪ জন শিশু। উত্তর গাজা থেকে প্যালেস্তিনীয়দের দক্ষিণের দিকে সরে যেতে বলেছিল ইজরায়েল। তারপরেই দক্ষিণে আক্রমণ বাড়ানো হয়েছে। নির্বিচারে আবাসিক এলাকা, আশ্রয় শিবির, রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্কুলে আক্রমণ হচ্ছে। হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাতেও বোমাবর্ষণ চলছে। এযাবৎ ৬৫৪৬ জন প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন গাজায়। অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজরায়েলী নিরাপত্তা বাহিনী বেপরোয়া আক্রমণ চালাচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে শত শত যুবককে। 

কিন্তু ইজরায়েল এখনও গাজার স্থলভূমিতে সেনা অভিযান শুরু করেনি। হাজার হাজার সেনাকে গাজার সীমান্তে মোতায়েন করেও ইজরায়েল গাজার মাটিতে পা দেয়নি। সম্ভাব্য কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ। ইজরায়েলের যুদ্ধ চলছে ওয়াশিংটনের নির্দেশ মেনেই। মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ায় ১১টি এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে রকেট হানা হলে এই ব্যবস্থা কাজে দেবে। সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ায় মোতায়েন মার্কিনী সেনাবাহিনীর জন্যও এই ব্যবস্থা মোতায়েন করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থা প্রস্তুত করতে কয়েকদিন সময় লাগবে। পেন্টাগন সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, সেই কারণেই ইজরায়েল স্থলভূমিতে আক্রমণ পিছিয়ে দিয়েছে। যদিও মঙ্গলবারও ইজরায়েলের শীর্ষ সেনাকর্তা জানিয়েছেন, ইজরায়েল গাজা দখল করার জন্য প্রস্তুত। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমী মিত্ররা কোনোভাবেই সংঘর্ষবিরতি হতে দেবে না। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের আরেকটি বৈঠকে সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব নস্যাৎ করে দিয়েছে আমেরিকা। ওই প্রস্তাবে অধিকাংশ দেশের সমর্থন থাকলেও মার্কিন আপত্তিতে তা খারিজ হয়ে গেছে। তার বদলে আমেরিকা জানিয়েছে, তারা একটি খসড়া প্রস্তাব আনছে। সেখানে কিছুক্ষণের জন্য মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিরতির কথা থাকবে। একই প্রস্তাব দিয়ে ব্রিটেনের তরফেও বলা হয়েছে, সংঘর্ষবিরতির কথা বলার অর্থ ইজরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ কেড়ে নেওয়া। 

যদিও মানবিক সহায়তাও বাস্তবে আসছে না। রাফা দিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। কেননা ওই সীমান্তে লাগাতার বোমা ফেলছে ইজরায়েল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি যা তাতে আর সাহায্য পাঠানো সম্ভব হবে না। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রঁ একই সঙ্গে ইজরায়েল ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের রামাল্লায় গিয়েছিলেন। ম্যাক্রঁ হামাসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গঠনের প্রস্তাব ছুঁড়েছেন। আবার তিনিই রামাল্লায় প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। রামাল্লার রাস্তায় তাঁর বিরুদ্ধে জোরালো বিক্ষোভও হয়েছে। 

রাষ্ট্রসঙ্ঘ কার্যত গাজায় আক্রমণ থামানোর জন্য কোনও ভূমিকাই পালন করেনি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কেবলই বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। এর মধ্যেই মঙ্গলবার গুতেরেসের একটি ভাষণে ক্ষিপ্ত ইজরায়েল। গুতেরেস হামাস এবং ইজরায়েল কারোরই নাম না করেই বলেছিলেন, নাগরিকদের আক্রমণ না করা কর্তব্য। সেইসঙ্গে গুতেরেস বলেন, ৭ অক্টোবরের ঘটনা শূন্য থেকে ঘটেনি। ৫৬ বছর ধরে প্যালেস্তিনীয়দের বঞ্চনার ফলেই এমন হয়েছে। ইজরায়েল তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দাবি করে গুতেরেসকে ইস্তফা দিতে হবে। তিনি হামাসের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছেন। ইজরায়েল ঘোষণা করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের কোনও ব্যক্তিকে আর ভিসা দেওয়া হবে না। ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী গুতেরেসের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে দেন। গুতেরেস পরে নিজের বিবৃতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ইজরায়েল ‘ভুল বুঝছে’। 

গাজায় হাসপাতাল একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা পরিষেবার সামগ্রী নেই, বিদ্যুৎ নেই। প্রায় খালি হাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ইজরায়েল জানিয়ে দিয়েছে, মানবিক সাহায্যের মধ্যে জ্বালানি যেন না থাকে। 

এই অবস্থায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ প্রধান সালেহ আল-আরৌরি, লেবাননের হেজবুল্লা গোষ্ঠীর মহাসচিব হাসান নাসারাল্লার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিও ছিলেন। হেজবুল্লার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, গাজা ও লেবানন সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। 

ইজরায়েল শুধু গাজায় আক্রমণ করছে তা নয়, সিরিয়ায় আবার আলেপ্পো বিমানবন্দরে তারা বোমাবর্ষণ করেছে। লেবানন সীমান্তেও ইজরায়েল ঘন ঘন রকেট হামলা চালাচ্ছে। এই সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে, এই আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment