Editorial

ছিঃ মিডিয়া ছিঃ

সম্পাদকীয় বিভাগ

সাংবাদিকতা ও সংবাদ পরিবেশনকে কতটা বিভ্রান্তিকর, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং প্রতারণামূলক পর্যায়ে আনা যায় ভারতের কর্পোরেট গোদী মিডিয়া তা দেখিয়ে দিয়েছে। জোচ্চুরি, জালিয়াতি এবং মিথ্যার বেসাতি অন্য অনেক ক্ষেত্রে হয়ে থাকে কিন্তু তাই বলে দেশের প্রায় সবক’টি সংবাদ চ্যানেলও সেই দলে নাম লেখাবে এটা ভাবতে অনেকেরই কষ্ট হবে। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা মানতে হবে ভারতের কর্পোরেট গোদী মিডিয়ার নীতি নৈতিকতা, সত্য ও নিরপেক্ষতা বহুকাল আগেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এবার পাক-ভারত সামরিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে দেশের প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতাও ফিকে হয়ে গেছে। যুদ্ধের আবহে যখন তথ্য-ভাষ্য সম্পর্কে সবচেয়ে সচেতন হবার কথা তখন তারা যুদ্ধকে নিয়ে রোমহর্ষক কাহিনি নির্মাণ করছে স্টুডিওতে বসে এবং সেগুলো প্রোগ্রামে গেলাচ্ছে গোটা দেশ তথা দুনিয়াকে। প্রয়াত জননেতা জ্যোতি বসু বলতেন, তিল থেকে তাল অনেকেই করে থাকে কিন্তু বাজারি কাগজ যেখানে তিলই নেই সেখানেও দিব্যি তাল বানিয়ে দিচ্ছে। আজকের ভারতীয় কর্পোরেট গোদী মিডিয়া তারই হাতে গরম উদাহরণ।
বৃহস্পতিবার সারা রাত ধরে চ্যানেলগুলি এক অলীক ও কল্পিত যুদ্ধের সচিত্র ধারাবিবরণী সম্প্রচার করেছে। আর রাত জেগে দেশের কোটি কোটি মানুষ সেগুলি গোগ্রাসে গিলেছেন। তারা সন্দেহ করেননি, মনে তাদের প্রশ্নও জাগেনি। দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের সেনাবাহিনীর সাফল্য নিয়ে গর্ব করবেন, আনন্দে আত্মহারা হবেন এটাই স্বাভাবিক। দেশের টিভি চ্যানেল দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে রোমহর্ষক গল্প বানিয়ে তাদের মাথায় ঘোল ঢালবে এটা মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি। দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে পুঁজি করে সুযোগ বুঝে টিআরপি বাড়িয়ে বাণিজ্য বাড়ানোর এমন কুৎসিত বাসনা গোদী মিডিয়ারই থাকতে পারে। যুদ্ধের মতো এক ভয়ঙ্কর ঘটনাকে তারা মারমার কাটকাট বিনোদন সিরিজে পরিণত করে ফেলেছে। ভারতের যুদ্ধ জাহাজ করাচি বন্দরে ঢুকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ভারতের সেনা, ট্যাঙ্ক ঢুকে পড়েছে পাকিস্তানে। পাক যুদ্ধবিমান এফ-১৬-কে গুলি করে নামিয়ে পাইলটকে আটক করেছে। প্রবল হামলার পর লাহোর, ইসলামাবাদ ভারতীয় সেনার দখলে। পাকিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা কয়েক ঘণ্টায় দখল করে নিয়েছে। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই গোটা পাকিস্তান ভারতের দখলে চলে আসবে। অনেকটা স্বপ্ন দেখার মতো গোদী মিডিয়ার দৌলতে মানুষ টিভির পর্দায় স্বপ্ন দেখেছেন। বাস্তবে এসব কিছুই হয়নি। সেনা, ট্যাঙ্ক পাক ভূখণ্ডে যায়নি। কোনও পাক বিমান গুলি করে নামানো হয়নি, পাইলটকেও ধরা হয়নি। বস্তুত ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে সংযম ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে। ঠিক কি হয়েছে বিকেলে সেনার পক্ষে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছে। রাতভর মিডিয়া যা শুনিয়েছে এবং দেখিয়েছে সেনাবাহিনীর বক্তব্যে তার কোনোটাই ছিল না। অর্থাৎ গোদী মিডিয়া সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যার বেসাতি করেছে। সেনাবাহিনীর মর্যাদাহানি করেছে। তাদের বিচক্ষণতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেশময় যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করে মানুষকে উন্মাদ বানানোর চেষ্টা করেছিল মিডিয়া। মানুষের প্রত্যাশাকে চরমে পৌঁছে দিয়ে এমন ধারণা তৈরি করতে চেয়েছে যে সেনারা চাইলে এক রাতেই পাকিস্তান দখল করতে পারে। সেনাবাহিনীর মানসিক দৃঢ়তা, স্থিরতা ও দায়বদ্ধতাকে নড়বড়ে করে দেবার পক্ষে এমনটা খুবই উদ্বেগের। তাছাড়া বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে ভারতের সেনা যা করে মিডিয়া তা বলে না, মিডিয়া যা বলে সেনা তা করে না। সর্বোপরি গোদী মিডিয়া বিশ্বের কাছে ভারতের মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা, বিচক্ষণতা, দায়বদ্ধতা শূন্যতে নামিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের চোখে ভারতের মান-মর্যাদা নষ্ট করে দিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment