Co-Operative Election

ফের মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়া সমবায় জয়ী বামপন্থীরা

রাজ্য

রামশংকর চক্রবর্তী- তমলুক
একটানা ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে সমবায় সমিতি পরিচালনায় বামপন্থীরা। ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মহিষাদল ব্লকের অমৃতবেড়িয়া কৃষি কল্যাণ সমবায় সমিতির। সেই দিন থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সাধারণ সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে সমবায়ের বোর্ড পরিচালনা করেছে বামপন্থীরা। ২০১২ সাল থেকে নির্বাচন শুরু হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাম প্রগতিশীল জোট নির্বাচনে জয়ী হয়ে সমবায়ের ক্ষমতায় রয়েছে। এবারের নির্বাচনেও তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বাম প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছে অমৃতবেড়িয়ার জনগন। দুর্নীতি মুক্ত এবং স্বচ্ছ পরিষেবা প্রদানই মূল কারণ, এত বছর ধরে বামপন্থীদের ক্ষমতায় থাকা। তেমনটাই বলছেন এলাকার মানুষজন। অমৃতবেড়িয়ার বাসিন্দা, সুনীল মাজী দিল্লিতে থাকেন। সেখানে একটি দোকান রয়েছে তাঁর। "আমি এই ভোটের জন্যই এখানে এসেছি। কোনোভাবেই লুটেরাদের এই সমবায়ের দখল নিতে দেওয়া যাবে না। সেই মতোই প্রচার করেছি।" বললেন সুনীল মাজী। নির্বাচন চলাকালীন অমৃতবেড়িয়া হাটপাড়া এলাকার এক দোকানদার স্পষ্টভাবেই বলেন "সমবায় সমিতির নিজস্ব কোনও বিল্ডিং ছিল না। জায়গাও কম ছিল। যারা এতদিন ক্ষমতায় ছিল তারাই সমবায়ের উন্নতি করেছে প্রচুর ভাবে। জায়গা কেনা হয়েছে, সমবায়ের নিজস্ব বাড়ি তৈরি হয়েছে। মানুষ বামপন্থীদেরই ভোট দেবে।" 
নির্বাচনে জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে অমৃতবেরিয়া এলাকা। এই সমবায় সমিতির মোট আসন ৬৩ টি। যার মধ্যে একটি সংরক্ষিত আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থিত প্রার্থী। বাকি ৬২টি আসনে সিপিআই(এম)'র সমর্থিত বাম গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হয় তৃণমূলের। বিজেপি এই সমবায় নির্বাচনে কোনও আসনে প্রার্থী দেয়নি। যদিও এলাকার দু একজনের কথায় জানা গেল এখানে বিজেপির শক্তি যেটুকু আছে তারা তৃণমূলের পক্ষেই। বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অমৃতবেড়িয়া তিলোত্তমা গার্লস হাইস্কুলে ভোটগ্রহণ হয়। বিকাল ৩টা থেকে গণনা শুরু হয়। সন্ধ্যা নাগাদ গণনার ফল প্রকাশে দেখা যায় বাম প্রগতিশীল জোটের প্রার্থীরা ৩৪টি আসনে জয়লাভ করে পুনরায় এই সমিতির ভোট গঠন করেছে। ২৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সমবায় সমিতির বিদায়ী সম্পাদক সিপিআই(এম) নেতা অশোক অধিকারী জানান "এই সমবায়ে সমিতি বাড় অমৃতবেড়িয়া, অমৃতবেড়িয়া, বামনপুর ও ঘাসিপুর এই ৪টি গ্রামের সদস্যরা এই সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত। প্রতিনিধি (ডেলিগেট) নির্বাচনে মোট আসন ৬৩ টি। ৫টি মহিলা সংরক্ষিত, ২টি তপশিলি জাতি বা উপজাতি সংরক্ষিত ও ৫৬ টি অসংরক্ষিত আসন রয়েছে। মোট ভোটার ১৫৭৫ জন। তবে সমবায়ের সঙ্গে ৩০০০ বেশি পরিবার সরাসরি যুক্ত।  সেইসঙ্গে এসএইচজি, জেএলডি গ্রুপের সদস্যরাও এই সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মূলত তাদের আমানত সংরক্ষিত থাকে সমবায়ে। ১৯৭১ সালে সমবায়টির প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বামপন্থীদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের সাথে নিয়ে সমবায় পরিচালনা হত। ২০১২ সালে থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০১৭ সালে ৪৩ আসনে নির্বাচন হয়। বামপন্থীরা ২৭টি, তৃণমূল কংগ্রেস১৬ টি আসনে জয়ী হয়। সেবারও বামপন্থীরা ক্ষমতা দখল করে। এবার নির্বাচনে আবারও এই এলাকার মানুষ বামপন্থীদের উপরই ভরসা রেখেছে।" অমৃতবেড়িয়া এলাকা মূলত নদী মাতৃক। এলাকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগ মানুষ নির্ভরশীল মৎস্যজীবি, ইট-টালিভাটার শ্রমিক। বাকি কৃষিজীবি। প্রান্তিক এই গ্রামের বাসিন্দারা বারে বারেই এই সমবায়ের নির্বাচনে বামপন্থীদের উপরই ভরসা করেন। তার অনেকগুলি কারণও এলাকার মানুষ বলেছেন। সেগুলি কি? এলাকার বাসিন্দা দেবাশীষ অধিকারী জানান "সমবায়ের পরিষেবা অত্যন্ত ভালো। দুর্নীতিহীন ও স্বচ্ছ ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। যেহেতু গ্রামের একমাত্র ভরসা এই সমবায় সমিতি সেজন্য রাত্রি আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে। মানুষ তার প্রয়োজনে টাকা পয়সা লেনদেন করতে পারে। এছাড়াও হঠাৎ যে কোনও সময় কারো বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে, যদি টাকার প্রয়োজন হয় হয়তো সেই সময় সমবায় বন্ধ তবুও সমবায় সমিতির সম্পাদক, ম্যানেজার তারা সেই অর্থের যোগান দিতে বদ্ধপরিকর থাকেন। মানুষ তাদের প্রয়োজনে সমস্ত সুযোগ সুবিধা সময় মতো পেয়ে থাকেন।" অন্য এক বাসিন্দা মৌমিতা মাজীর কথায় "সমবায় সমিতির অনুষ্ঠান হল খুব কম টাকায় ভাড়ায় পাওয়া যায়। এখানে সরাসরি টাকার কারবার হয় তাই তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনা যাবেনা। ওরা এলেই লুট করবে।"
প্রসঙ্গত কৃষি কাজের জন্য সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দান করা হয় কৃষকদের। পাশাপাশি বাড়ি তৈরি করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দু লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। কৃষি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী লোন মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেন হয় ঋণ দানের মধ্য দিয়ে। এছাড়াও প্রায় নয় কোটি টাকার আমানত এই সমবায়ে রয়েছে। যার ৭০ শতাংশ জমা রাখা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বলে জানান বিদায়ী সম্পাদক অশোক অধিকারী। নির্বাচনে জয়ের পর সিপিআই(এম) নেতা শান্তনু দাস বলেন "রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূল যেভাবে দুর্নীতি করেছে সাধারণ মানুষ তাদের ভরসা করে না।  এই সমবায় সমিতি দুর্নীতি মুক্ত এবং স্বচ্ছভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই এলাকার মানুষজন বামপন্থীদের উপর আবারও ভরসা রেখেছে। তারা নিজেদের সঞ্চিত অর্থ যাতে তছরূপ না হয় সেই জন্যই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটদান করেছে। সমস্ত জয়ী সদস্যদের অভিনন্দন জানাই।"

Comments :0

Login to leave a comment