ISRAEL PALESTINE CONFLICT

নিরীহ নাগরিকদের হত্যার বিরোধিতা মোদীর, অবস্থানে স্ববিরোধিতায় প্রশ্ন

জাতীয়

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news AIPSO narendra modi cpim বিধ্বস্ত গাজায় স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শিশুদের।

হামাসের নাম না করে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করলেন। সেই সঙ্গে নিরীহ নাগরিকদের হত্যার নিন্দাও করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাত প্রসঙ্গে এই মর্মে ভাষণ দিয়েছেন মোদী। 

মোদীর ভাষণে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন প্রশ্নে ভারতের স্ববিরোধিতা দেখা যাচ্ছে বলে মত বিভিন্ন অংশের। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং শান্তি আন্দোলনে নেতা নীলোৎপল বসুর মন্তব্য, ‘‘ভারত ৭ অক্টোবরের পরে সরাসরি ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ায়। তারপর পরিস্থিতির চাপে বিদেশমন্ত্রক সুর বদলায়। কিন্তু রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে এসে ফের অবস্থান বদল করে ভারত। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাত নিয়ে ভারতের যে বিদেশনীতি, সেটার মধ্যে স্ববিরোধিতা রয়েছে। তাই বারবার অবস্থান বদলাতে হচ্ছে।’’

নয়াদিল্লিতে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ‘গ্লোবাল সাউথ’ বা এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলির দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন ‘ভয়েস অফ দ্যা গ্লোবাল সাউথ সামিট’ বা ভিওজিএসএস। 

সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষে সাধারণ নাগরিকদের প্রাণহানির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ভারত। আমরা আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছি। সংঘর্ষে সাধারণ মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছি।’’

বসু বলেন, ‘‘বর্তমানে ভারতীয় বিদেশ নীতির প্রবণতা হচ্ছে, আমেরিকার অনুগামী অবস্থান গ্রহণ করা। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যকে পুরোপুরি অস্বীকার করে সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থন করা সম্ভব হচ্ছে না মোদী সরকারের পক্ষে। গাজায় গণহত্যা চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে এই অবস্থানে টিকে থাকা কঠিন ভারতের পক্ষে। তাই সময় এবং সুবিধা মতো অবস্থান বদল চলছে।’’

এদিনও তাঁর ভাষণে যুদ্ধবিরতির কোনো আহ্বান জানাননি মোদী। এমনকি সাময়িক যুদ্ধবিরতির কথাও বলেননি। 

বামপন্থীরা স্পষ্ট বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভারতকে ভূমিকা নিতে হবে। চাপ তৈরি করতে হবে আমেরিকা এবং পশ্চিমী দুনিয়ার ওপর। এদিনই কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র জয়রাম রমেশ একই দাবি তুলেছেন।

নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতে আসেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী। সেই বৈঠকে হামাসকে দেখিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াই জোরদার করার কথা বলে দুই পক্ষ। শুক্রবারের সম্মেলনেও হামাসের বিরোধিতার সুর ছিল দিল্লির গলায়। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার বহু আগে থেকেই প্যালেস্তাইনের মাটিতে দখলদারি এবং আগ্রাসন চালাচ্ছে ইজরায়েল।

মোদী এদিন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কী কী ভাবে সংঘাত চলাকালীন ভারত প্যালেস্তাইনের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেছেন, ‘‘প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রপতি মেহেমুদ আব্বাসের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারপরে আমরা প্যালেস্তাইনে ত্রাণ পাঠিয়েছি।’’

ভারত এদিন তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, রাষ্ট্রসঙ্ঘে আনা প্যালেস্তাইনে অবৈধ ইহুদি বসতি তৈরি বিরোধী প্রস্তাবে তাঁরা সমর্থন জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের ১৪৫টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দেয়। বিরোধিতা করে ইজরায়েল, আমেরিকা, কানাডা সহ পশ্চিমী দুনিয়ার ৭টি দেশ। ভোটদানে বিরত থাকে ১৮টি দেশ। 

কিন্তু তার আগেই অক্টোবরে জর্ডানের আনা একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকতে দেখা যায় ভারতকে। সেই প্রস্তাবে দাবি তোলা হয়, অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি চালু করতে হবে। নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনে ভারত জানিয়েছিল, সেই প্রস্তাবে হামাসের নিন্দা না করায় তাঁরা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করতে পারেনি। জর্ডানের আনা সেই প্রস্তাবের পক্ষে দাঁড়ায় ১২০টি রাষ্ট্র। বিরোধিতা করে ১৪টি, এবং ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ভারত সহ ৪৫টি দেশ।

যে দেশগুলিকে নিয়ে এই সম্মেলন, তার বেশিরভাগই যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছিল, ভারতের মতো ভোটদানে বিরত থাকেনি। 

বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, চলতি বছরের ১২-১৩ জানুয়ারি ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভিওজিএসএস’র প্রথম সম্মেলন হয়েছিল। দ্বিতীয় সামিটে সামনা সামনি মিলিত হয়েছেন গ্লোবাল সাউথের ১২৫টি দেশের প্রতিনিধিরা। বিদেশমন্ত্রকের দাবি, বিভিন্ন ইস্যুতে এই দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গি, চাহিদা এবং অগ্রাধিকার এক। সেই সূত্রে তাঁদের এক জায়গায় আনার চেষ্টা। 

বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, জি-২০’র সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ভারত চেষ্টা করছে, যাতে গ্লোবাল সাউথের বক্তব্য, দাবি এবং চাহিদা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা যায়। 

 

Comments :0

Login to leave a comment