NEWTOWN TO VOTE IN PANCHAYAT

নাগরিক পরিষেবা নিয়ে গুচ্ছ প্রশ্ন,
পঞ্চায়েত ভোটের লাইনে দাঁড়াবে নিউটাউন

রাজ্য জেলা

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS নিউটাউনে চলছে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার

পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের অন্যতম আধুনিক শহর নিউটাউন। কিন্তু এই নিউটাইনের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা মিলছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার। কোথাও ফ্লেক্স, কোথাও পতাকা, আবার কোথাও ব্যানার কিংবা ফেস্টুন। অর্থাৎ, ৮ জুলাই গ্রাম বাংলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আদ্যপান্ত শহুরে বাসিন্দারা অংশ নেবেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে। 

এর থেকেই স্পষ্ট, নাগরিক পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড়সড় ঘাটতি রয়েছে নিউটাউনের। 

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই সমস্যার মূলে রয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার অভাব। 

নিউটাউন শহরের পরিষেবা এনকেডিএ বলে একটি সংস্থা দিয়ে থাকে। এই এনকেডিএ একেবারেই নির্বাচিত সংস্থা নয়। এনকেডিএ’র মধ্যে কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। সরকারি আমলারা এই সংস্থা চালান। নির্বাচিত সংস্থা না হওয়ার ফলে নিউটাউন শহরের মানুষের আসল সমস্যাগুলি সরকারি আধিকারিকদের পক্ষে চিহ্নিত করে ওঠা সম্ভব হচ্ছেনা। সরকারি আধিকারিকরা মূলত নিউটাউনকে সাজানো গোছানো সুন্দর একটি শহরের রূপ দিতে চাইছেন। কিন্তু শহরের নাগরিক চাহিদা কেবলমাত্র রাস্তার ধারে ফুলের বাগানে সীমাবদ্ধ নেই। তারফলে নাগরিকরা যেই ধরণের উন্নয়ন চাইছেন, সেটা দেওয়া এনকেডিএ’র পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। 

শহরের নাগরিকরা সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। নিউটাউনের মতো বৃহৎ এবং আধুনিক শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জমি থাকলেও নেই কোনও আধুনিক সরকারি হাসপাতাল। এমন হাসপাতাল যেখানে জরুরি পরিষেবা থাকবে, ট্রমা সেন্টার থাকবে। এই হাসপাতাল তৈরি হলে একদিকে যেমন নিউটাউনের মানুষকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, তেমনই গ্রামীণ রাজারহাট, ভাঙড়, দেগঙ্গার মতো লাগোয়া গ্রামীণ এলাকার মানুষকেও বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। 

কিন্তু এই ধরণের কোনও হাসপাতাল না থাকায়, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম, আরজি কর, এমআর বাঙ্গুরের মতো কলকাতার হাসপাতালে ছুটতে হয়। 

দ্বিতীয়ত, নিউটাউন এলাকায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কোনও সরকারি স্কুল নেই। শহরে দুটি বেসরকারি স্কুল থাকলেও তার ফি মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। এর পাশাপাশি নিউটাউনের গণ পরিবহন ব্যবস্থাও অপ্রতুল। নাগরিকদের টোটো এবং অটোর উপর ভরসা করে থাকতে হয়। এবং কোনও এই দুইয়ের ভাড়ায় কার্যত কোনও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। রাতের সময় ভরসা হয় ব্যক্তিগত গাড়ি নইলে অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি। 

নিউটাউন থেকে যাঁরা পঞ্চায়েতে প্রতিনিধি হবেন, তাঁরা এনকেডিএ পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম হস্তক্ষেপের জায়গায় থাকবেন না। নিউটাউন মূলত জ্যাংড়া হাতিয়াড়া-২ নম্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। অথচ, এই পঞ্চায়েতের এক্তিয়ারের বাইরে রয়েছে নিউটাউন। সব মিলিয়ে পরিষেবাগত এবং প্রশাসনিক দুঃস্বপ্ন।

এরমধ্যেই বামপন্থীরা চেষ্টা করছেন সীমিত পরিসরের মধ্যে নিউটাউনের বাসিন্দাদের মৌলিক দাবিগুলি তুলে ধরার। জ্যাংড়া হাতিয়াড়া-২ পঞ্চায়েতের ৮টি আসন নিউটাউন এলাকার মধ্যে পড়ে। একমাত্র সিপিআই(এম) এই ৮টি আসনেই নিউটাউনের বাসিন্দাদের দাঁড় করিয়েছে। তৃণমূলের ৭জন প্রার্থীই বহিরাগত, বিজেপির ক্ষেত্রে বহিরাগতের সংখ্যা ৫। 

সিপিআই(এম)’র উত্তর ২৪ পরগণা জেলা কমিটির সদস্য সপ্তর্ষি দেব জানান, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি শহরের আসনগুলিতে পঞ্চায়েতের গ্রামীণ এলাকার মানুষকে প্রার্থী করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এই প্রার্থীরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়তে পারেন। কিন্তু এই প্রার্থীদের পক্ষে শহর নিউটাউনের সমস্যা বোঝা, চিহ্নিত করা এবং তা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারা অসম্ভব ব্যাপার। কারণ, গ্রামীণ এলাকার সমস্যা এবং নিউটাউনের সমস্যার মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য নেই। 

সিপিআই(এম) নেতৃত্বের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মূলেই রয়েছে- আমাদের লোক আমাদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হবে। যাঁরা আমাদের কথা সঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারবে। ‘লোকাল সেল্ফ গভর্নমেন্ট’-এর যে ধারণা, তাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে একমাত্র বামপন্থীরাই। এবং এক্ষেত্রে স্থানীয়দেরও যথেষ্ট সাড়া মিলছে। 

নিউটাউনের এই সমস্যার তাহলে সমাধান কী? 

পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের একাধিক অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক জানাচ্ছেন, এর সমাধানের জন্য প্রয়োজন অতি দ্রুত নিউটাউনকে নিয়ে একটি নির্বাচিত সংস্থা তৈরি করা। সেটি জ্যাংড়া হাতিয়াড়া-২ নম্বর পঞ্চায়েত থেকে একেবারেই পৃথক হবে। তারজন্য প্রয়োজন প্রথমে বিধাননগরের মডেলে নিউটাউনকে একটি নোটিফায়েড এরিয়ায় পরিণত করা। সাময়িক ভাবে সেই নির্বাচিত সংস্থার সঙ্গে এনকেডিএ’র যোগ থাকলেও থাকতে পারে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শহর পরিচালনার দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এনকেডিএ’কে। পরবর্তীতে সেই নোটিফায়েড এরিয়াকে পৌরসভায় পরিণত করতে হবে। একমাত্র এই ভাবেই নাগরিক পরিষেবা সুনিশ্চিত করা সম্ভব। 

কিন্তু সেই সমাধানের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছার। তৃণমূল সরকার গত ১২ বছরে এই সমস্যা সমাধানের জন্য ন্যূনতম উদ্যোগী হয়নি। তারফলে নাগরিক পরিষেবার ঘাটতি কীভাবে মিটবে, তা জানেন না নিউটাউনের বাসিন্দারা। 

Comments :0

Login to leave a comment