ধিক্কার ও সমালোচনার চাপে আড়িয়াদহের তৃণমূলী মাফিয়া জয়ন্ত সিংয়ের আরও তিন সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃত মোট ৬ জনকে বুধবার বারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ছয় দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। সিপিআই(এম)’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানস মুখার্জি জানিয়েছেন, কামারহাটি পৌরাঞ্চলে দুষ্কৃতীদের ক্রমবর্ধমান তাণ্ডব, বর্বরতা, বেআইনি নির্মাণ, প্রোমোটাররাজ সহ নাগরিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিরাট মিছিল করে বেলঘরিয়া থানায় যাওয়া হবে এবং ডেপুটেশন দেওয়া হবে।
এদিকে জয়ন্ত-বাহিনীর হাতে আড়িয়াদহের কলেজ ছাত্র ও তাঁর মাকে নির্মম মারধরের ঘটনার ভিডিও এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন রামপুরহাটের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের যে যুবক, তাঁকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে রামপুরহাট থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। বর্বরতার দৃশ্য দেখে ক্ষুব্ধ রামপুরহাটের স্নাতোকোত্তর উত্তীর্ণ যুবক শুভম মণ্ডল ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন, যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে নির্দিষ্টভাবে রামপুরহাট থানাকে সেই বিষয়ে অবগত করা হয়। বিস্ময়করভাবে রামপুরহাট থানার তরফে মঙ্গলবার গভীর রাতে শুভমকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুভম জানিয়েছেন, কেন তিনি এই পোস্ট করেছেন, তার উত্তর চাওয়ার পাশাপাশি এই ধরনের পোস্ট করা থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তবে কোনও খারাপ ব্যবহার করা হয়নি পুলিশের তরফে।
ক্লাবে আটকে বর্বর অত্যাচার করার পরেও নানা অপরাধে অভিযুক্ত বারাকপুরের পুলিশ তৃণমূলী মাফিয়া জয়ন্তকে তিন বছর ধরে গ্রেপ্তার করতে পারেনি, কোনও এফআইআরও দায়ের করতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। জয়ন্ত-বাহিনী একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা ঘটিয়ে গিয়েছে এলাকায়। অথচ সেই সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই পুলিশ তৎপর হয়ে পড়েছে, কে ভাইরাল করলো ভিডিও, তা খুঁজে বের করতে। রামপুরহাটের পুলিশ মধ্যরাতে কেন শুভমকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তা নিয়ে রীতিমতো বিস্মিত ওয়াকিবহাল মহল থেকে বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তাঁদের মতে, পুলিশ কাদের আড়াল করতে চাইছে? পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শেষ হওয়ার পর শুভম এদিন জানিয়েছেন, ‘‘সচেতন নাগরিক হিসাবে এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ভিডিওটি পোস্ট করেছিলাম। কারণ, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বলে তো একটা জিনিস আছে! এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া কখনই সমর্থন করি না। তাই এক বন্ধু মারফত এই ভিডিও পেয়ে তার সত্যতা যাচাই করে তবেই পোস্ট করেছিলাম।’’
গত ১ জুলাই আড়িয়াদহে মা ও ছেলেকে মারধরের ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ জয়ন্ত সিং, সৈকত মান্না ও সুদীপ সাহাকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর জয়ন্ত-বাহিনীর বর্বরতার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে অভিষেক বর্মণ, সুভাষ বেরা এবং সুমন দে-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ভাইরাল ভিডিওতে বর্বর অত্যাচারে যুক্তদের মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এদিন আদালতের নির্দেশে তাদেরই পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, কলেজ ছাত্র ও তার মাকে মারধরের ঘটনায় আগেই জয়ন্ত এবং তার দুই সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। স্থানীয় ক্লাবে মারধরের পুরানো ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পরে তার ভিত্তিতে আরও তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে তৃণমূলের নেতাদের প্রশ্রয়ে থাকা জয়ন্ত-বাহিনীর একের পর এক গুণ্ডামির ভিডিও এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন, কোনও অসামাজিক কাজকর্ম বরদাস্ত না করে দোষীদের ধরা হবে। এমনকী ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে না, ঘটনায় যুক্ত এমন ব্যক্তিদেরও ধরা হবে।
এদিকে সাধারণ মানুষের পুলিশের উপরে ভরসা তলানিতে। শাসক দলের নেতাদের প্রশ্রয়ে থাকার জন্যই বছরের পর বছর জয়ন্ত সিং এবং তৃণমূলের পোষা এরকম আরও অনেকগুলি দুষ্কৃতীবাহিনী এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র তাদের দায় ঝেড়ে ফেলতে পুলিশের উপরে সব দায় চাপিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘পুলিশ সবই জানতো এবং তারাই এই দৌরাত্ম্যের মূল প্রশ্রয়দাতা।’’
CPIM RALLY
আজ কামারহাটিতে সিপিআই(এম)’র মিছিল
×
Comments :0