দীপশুভ্র সান্যাল ও সোমনাথ দত্ত
ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়েছে সমগ্র ডুয়ার্স। ক্রমশ নামছে তাপমাত্রার পারদ। বড়দিনের আগেই জাকিয়ে পড়েছে শীত। উত্তরের শীতল হাওয়ায় শীতের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতাও কমেছে। কোথাও দেখা গেল আগুনের সামনে বসে একটু উষ্ণতা কুড়িয়ে নিতে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ছিল ভার। পারদ নিম্নগামী হবার আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। দুপুর গড়িয়ে সময় যত গড়ালো ততই যেন ঠান্ডা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লো। বুধবার সকালেও সেই চিত্র সমগ্র ডুয়ার্স এলাকা জুড়ে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উচু স্থানে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণেই শীতের এমন প্রকোপ। বর্তমানে ডুয়ার্সের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯–১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে, পাহাড়ি এলাকায় তা আরও নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। দুদিন পর থেকে শুধু যে দিনের তাপমাত্রা কমবে তা কিন্তু নয়, পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রাও কমতে থাকবে। এই শীতের আবহাওয়ায় চায়ের দোকানগুলিতে ভিড় বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। অফিস ফেরত মানুষজন চায়ের কাপ হাতে আগুন পোহাতে পোহাতে শীতের গল্পে মেতে উঠছেন।
ডুয়ার্সের মালবাজার, চালসা, নাগরাকাটা, মেটেলি, লাটাগুড়ি, ডামডিম, ওদলাবাড়ি, বাগরাকোট সহ বিস্তীর্ণ এলাকাগুলিতে গিয়ে দেখা গেল অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে চায়ের দোকানে অন্যদিনের থেকে দ্বিগুণ ভিড়। চায়ের কাপ হাতে চলল শীতের আমেজ নিয়ে নানান আলোচনা। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে হালকা রোদের উঁকি ঝুঁকি থাকলেও তা ছিল সম্পূর্ণ নিরুত্তাপ ও ক্ষণস্থায়ী।
কুয়াশা আচ্ছন্ন রাস্তাঘাট।
শীতের দাপটের মাঝেই বড়দিন ও নববর্ষকে ঘিরে ডুয়ার্স, জলপাইগুড়ি ও কালিম্পং–সংলগ্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে বেড়েছে পর্যটকদের ভিড়। গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের লাটাগুড়ি, মূর্তি, রামসাই, চাপরামারি, চালসা, নাগরাকাটা, ডামডিম এবং পাহাড়ের লাভা, লোলেগাঁও, কালিম্পং সব যায়গায় এখন উৎসবের আমেজ। লাটাগুড়ি ও মূর্তি কেন্দ্র থেকে অফলাইনে জঙ্গল সাফারি বুকিং চলছে, হাতি সাফারির জন্য রয়েছে অনলাইন বুকিং ব্যবস্থা। জনপ্রতি ১২৫০ থেকে ১৩৫০ টাকার মধ্যে জঙ্গল সাফারি ও ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ির ভ্রমণের সুযোগ মিলছে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, বড়দিন থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ হোটেল ও রিসর্ট বুকিং ইতিমধ্যেই সম্পন্ন।
বছরের শেষ লগ্নে ঠান্ডার দিনটা বেশ উপভোগ করছেন সকলেই। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে অনেককেই দেখা গেল আগুনের তাপ নিচ্ছেন। বুধবার সকাল থেকেও শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকা ছিল। মঙ্গলবার রাতে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় মালবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকা। পাশাপাশি উত্তরের শীতল হাওয়ায় জ্বুথবু অবস্থা সকলের। অন্যদিকে বর্ষ শেষের ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও চুটিয়ে শীতের আমেজ উপভোগ করছেন।
শারদীয়া উৎসবের পর পর্যটন শিল্পে মন্দা কাটিয়ে এবার শীতের মরশুমে আশার আলো দেখছেন হোটেল, রিসর্ট ও সাফারি ব্যবসায়ীরা। কুয়াশাচ্ছন্ন ঠান্ডার মধ্যেই ডুয়ার্সের বন, পাহাড় ও নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন পর্যটকেরা। অন্যদিকে শীতের দাপটে জলপাইগুড়ি শহরের মার্চেন্ট রোড সহ বিভিন্ন বাজারে শীতের পোশাক কেনাকাটায় ব্যস্ত অসংখ্য মানুষ। বর্ষশেষের ঠান্ডা, কুয়াশা আর উৎসবের আনন্দ মিলেমিশে এখন ডুয়ার্স জুড়ে এক ভিন্ন আমেজ।
Comments :0