মাথায় জয়েন্ট বা নিট। মাথায় একরাশ প্রত্যাশার বোঝাও। তাই কি ফের জীবন শেষকরা কিশোরের দেহ মিলল কোটায়? সোমবার রাজস্থানের এই শহরে মিলেছে পড়তে আসা তিন কিশোরের দেহ। ফের টাকার বিনিময়ে কেরিয়ারের দৌড়ে ঠেলে দেওয়ার বৃত্তান্ত। ফের বেআব্রু শিক্ষাব্যবসার জগত।
কোটার জেলা পুলিশ সুপার কেশর সিং শেখাওয়াত জানিয়েছেন দু’টি বাড়ি থেকে মিলেছে তিন ছাত্রের দেহ। একটিতে পাশাপাশি দু’ঘরে থাকত নিহত দুই কিশোর। একজনের বয়স ১৬, আরেকজনের ১৭।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী কোনও ঘটনায় সুইসাইড নোট মেলেনি। এই দুই কিশোরই বিহার থেকে এসেছিল একাদশ-দ্বাদশ পড়তে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন বিশেষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল জাতীয় স্তরে ইঞ্জিনিয়ারিং জয়েন্টে, অন্যজন ডাক্তারির প্রবেশিকা নিট’র। পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকত তারা। বাড়ির মালিক জানিয়েছেন সকালে এক ছাত্রের সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখা যায় তার দেহ ঝুলছে ফ্যান থেকে। ওই বাড়িতেই বিকেলে মেলে আরেক ছাত্রের দেহ, অন্য ঘরে।
অন্য ঘটনায় নিট পরীক্ষার্থী আরেক ছাত্র বিষ খায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। সোমবার তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে হাসপাতাল।
এ দেশে ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ নতুন নয়। শিক্ষাব্যবসার কালো দিক নিয়ে সে নামে তৈরি হয়েছিল সিনেমাও। ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাও দেখিয়েছিল পেশাদারি প্রতিষ্ঠানে চাপের সঙ্গে যুঝতে না পেরে জীবন থেকে সরে যাওয়া নবীনকে। তবে বাস্তবে হাল বদলায়নি।
২০১৮’তে কোটায় আত্মঘাতী হয় ১৯ ছাত্র। ২০১৭’তে সংখ্যাটা ছিল ৭। ২০১৯’এ রাজ্য সরকার কমিটি গড়ে। তবে কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত সামনে আনা হয়নি।
যাঁরা জানেন কোটার শিক্ষা কারবারকে তাঁরা বলেন, অসম্ভব চাপ আর বিশাল স্বপ্ন দেখিয়ে সুড়ঙ্গে বন্দি করে দেওয়া হয় কৈশোর থেকে যৌবনের মুখে থাকা জীবনগুলিকে। একেকটি প্রতিষ্ঠানে কড়া অনুশাসন। পিছিয়ে পড়ার ক্ষমা নেই। সবচেয়ে ভালদের জন্য সবচেয়ে ভাল শিক্ষক। সেভাবে করা হয় আলাদা আলাদা ‘ব্যাচ’। উলটোদিকে মোটা টাকা দিয়ে পড়তে পাঠানো বাবা-মায়েদের স্বপ্ন। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত বাড়ির ছোটরা নিজেদের ব্যর্থ ভাবতে শুরু করে। সেখান থেকে তুলে আনার কেউ নেই।
Comments :0