সিবিআই তদন্তে ক্ষোভ, নিম্ন আদালতে বিচারে স্থগিতাদেশের আরজি
মেয়ের খুন-ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআই তদন্তে প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলার আবেদন পেশ করলেন অভয়ার মা-বাবা। অভয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার এই আবেদন তাঁরা জমা দিয়েছেন শীর্ষ আদালতে। এর আগে ওই ভয়ঙ্কর ঘটনায় কলকাতা পুলিশকে সরিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরই সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার শুনানিতে তাঁর বেঞ্চ বিভিন্ন সময়ে যেসব অভিমত প্রকাশ করেছে, এখন পর্যন্ত সিবিআই তদন্তে এবং কলকাতার নিম্ন আদালতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পেশ করা চার্জশিটে তার কিছুরই প্রতিফলন দেখা যায়নি বলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যায়বিচার চাইছেন বলে মামলার আবেদনে বলেছেন অভয়ার মা-বাবা।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সিবিআই তদন্তে গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। আর জি কর হাসপাতালের যে সেমিনার রুমে তাঁদের মেয়ের দেহ পাওয়া গিয়েছিল বলে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছিল, সেটিই অকুস্থল কি না, তা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) রিপোর্টে। কিন্তু সিবিআই তদন্ত সেই অভিমুখে পরিচালিত হয়নি। তাঁদের মেয়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আক্রমণের সময়ে তাঁদের মেয়ে প্রবল বাধা দিয়েছিল। আবার সিএফএসএল’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই সেমিনার রুমে তার যে প্রমাণ থাকার কথা ছিল, তা পাওয়া যায়নি। ফলে সেমিনার রুমই অকুস্থল কি না, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সিবিআই’র এখন পর্যন্ত তদন্তে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় ছাড়াও যাদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, সেই সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে সিবিআই অতিরিক্ত চার্জশিট দেবে বলেও দেয়নি। অথচ নিম্ন আদালত বিচার শেষ বলে জানিয়ে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে দিয়েছে। এই অবস্থায় হয় শীর্ষ আদালত তাঁদের নিম্ন আদালত বা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আরও তদন্তের আরজি জানানোর অনুমতি দিক অথবা শীর্ষ আদালতের নিয়মিত নজরদারিতে গোটা ঘটনার গভীরতর তদন্তের নির্দেশ দিক সিবিআই-কে, যাতে আইনসঙ্গতভাবে ও ন্যায্যতার সঙ্গে তদন্তের কাজ হয়। তাঁদের আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কলকাতার নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারির আরজিও তাঁরা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদনটি তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা।
তাঁরা আবেদনে আরও বলেছেন, ফরেনসিক ডিএনএ রিপোর্টে ঘটনার বৃহত্তর পরিসর এবং তাতে একাধিক ব্যক্তির যুক্ত থাকার দিকে ইঙ্গিত করেছে। সেমিপার রুমে যে ব্লুটুথটি পাওয়া গিয়েছে, তাতে থাকা আঙুলের ছাপ নিয়ে তদন্ত হয়নি। ৮ ও ৯ আগস্ট যাঁরা যাঁরা হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন, তাঁদের সবার আঙুলের ছাপের সঙ্গে ব্লুটুথের আঙুলের ছাপ মেলানো উচিত ছিল। সিবিআই তা করেনি। সেই রাতে তাঁদের মেয়ের সঙ্গে চার জন জুনিয়র ডাক্তার ডিউটিতে থাকলেও দু’জনকে সাক্ষী দিতে ডাকা হয়েছিল। সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকলেও ৮ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ওই দু’জনের মোবাইলের কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ কলের রেকর্ড ও মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন নিয়ে সিবিআই অনুসন্ধান চালায়নি। আর জি কর হাসপাতালের গোটা ভবনের সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করে দেখেনি সিবিআই, বিশেষত প্রথম, দ্বিতীয় ও সপ্তম তলের, যদিও সপ্তম তলের অপারেশন থিয়েটার সিল করে দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। ১০ নম্বর লিফটের সামনে যে নিরাপত্তা রক্ষীরা সেই রাতে মোতায়েন ছিল, তাঁদের কাউকেই তদন্তের আওতায় আনা হয়নি, অথচ ওই লিফট দিয়েই প্রথম তল থেকে সরাসরি সপ্তম তলের মধ্যে যাতায়াত করা যায়। মামলার আবেদনে অভয়ার মা-বাবা সিবিআই তদন্তে এমন আরও বহু অসঙ্গতির কথাও তুলে ধরেছেন।
Abhaya
সুপ্রিম কোর্টে অভয়ার মা-বাবা
×
Comments :0