Seminar room Ashis Pandey

সেদিন সকালে সেমিনার রুমেই ছিল বেপাত্তা আশিস

রাজ্য

সেমিনার রুমের বাইরের এই ছবিই এখন রহস্য বাড়াচ্ছে।

 অবৈধভাবে আর জি করে হাউসস্টাফ থেকে যাওয়া, তৃণমূল নেতা আশিস পান্ডেকে নিয়ে ক্রমেই রহস্য বাড়ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও ধৃত সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ আর জি করের এই চিকিৎসক নেতার গতিবিধি নজরে রাখছে। ৮ আগস্ট রাত থেকে ৯ আগস্ট সকাল ১১টা পর্যন্ত অনেক রহস্যের উত্তর জড়িয়ে আছে এই আশিস পান্ডেকে কেন্দ্র করে।
এরই মধ্যে এবার সামনে এসেছে একটি ছবি যাতে স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে সেমিনার রুমে সামনে জড়ো হয়ে নিজেদের মধ্যে কথোপকথন সারছেন সন্দীপ ঘোষ। তাঁকে ঘিরে রয়েছে আর জি করে তাঁরই ঘনিষ্ঠ বাহিনীর লোকজন। সেখানেই রয়েছে মেয়াদ শেষের পরেও আর জি করে বেআইনীভাবে হাইউস্টাফ থেকে যাওয়া চিকিৎসক আশিস পান্ডে। সূত্রের দাবি  ৯ আগস্ট সকালের ছবি এটা। চেস্ট মেডিসিনের চারতলার সেমিনার রুমে তখনও পড়ে রয়েছে ধর্ষণের পরে খুন হওয়া চিকিৎসক পড়ুয়ার রক্তাক্ত, নিথর দেহ। সেই সময়তেই সেমিনার রুমে বাইরে আশিস পান্ডের সঙ্গে ‘জরুরি’ শলাপরামর্শে  আর জি করে প্রাক্তন ধৃত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সিবিআই-র একটি সূত্রের দাবি, সেদিন সকালে ক্রাইম সিনে হাজির ছিল আশিস পান্ডে। কেন?
গোল বেঁধেছে আরও একটি বিষয়ে। ইতিমধ্যে সিবিআই জেরায় প্রথমে সন্দীপ ঘোষ দাবি করেছিল ৯ আগস্ট সকালে তিনি খবর পান হাসপাতাল থেকে। ১০টা নাগাদ। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে নাকি হাসপাতালে এসেছিলেন। এক ঘণ্টা লেগেছিল তার আসতে। যদিও সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসতে এই সময় লাগার কথা নয় গাড়িতে। ইতিমধ্যে সিবিআই-র তরফে সন্দীপ ঘোষের ফোনে সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড) পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেদিন সকালে পুলিশ সহ একাধিক ঘনিষ্ঠদের তিনি ফোন করেছিল। ফোন গেছিল তৃণমূলের এক বিধায়ক, সাংসদের কাছেও। ফোন গেছিল প্রভাবশালী মহলেও। তো সেই সন্দীপ ঘোষ সকাল ১১টার পরে হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। চার তলায় একবার এসেছিলেন তার অনেক পরে। সেই চার তলার রুমের সামনে আশিস পান্ডে সহ তার ঘনিষ্ঠ বাহিনীর সঙ্গে মিটিংয়ের ছবি সামনে এসেছে। তাহলে সেটা নিশ্চিতভাবেই সকাল ১১টার পরেই কোন এক সময়ে বলে ধরে নেওয়া যায়।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে ৮ তারিখ রাতে আর জি করের চার থেকে আটতলার মধ্যে ঘটে যাওয়া এমন নৃশংস একট ঘটনা, তারপর চার তেলার সেমিনার রুমে কলেজেরই পড়ুয়া চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরেই(সকাল সাড়ে নটা) এই আশিস পান্ডে কেন সল্টলেকের এটি গেস্ট হাউসে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রুম বুক করেছিল? রুম বুক করার পরে তাহলে গেস্ট হাউসে কখন গেলো? গেস্ট হাউসে এক মহিলার উপস্থিতিও জানা গেছে। রুম বুক হয়েছিল ৯ তারিখ সকালে। চেক ইন সকাল ১১টায়। ১০ তারিখ পর্যন্ত সকাল পর্যন্ত সেই রুম বুক করা ছিল। 
তাহলে আশিস পান্ডে কখন গেল সেই সল্টলেকের গেস্ট হাউসে? নাকি আশিস পান্ডে নিজের নাম দিয়ে রুম বুক করলেও অন্য কেউ সেখানে ছিল? সেই অন্য কেউ কী ৮ তারিখ রাতের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাকে সেফ প্যাসেজ দেওয়া হয়েছিল? ইতিমধ্যে সিবিআই দপ্তরে এসে ওই গেস্ট হাউসের এক কর্মী রেজিস্টার খাতা সহ সব নথি জমা দিয়ে গেছেন। তিনি দাবি করেছেন আশিস পান্ডে মোবাইল থেকে ৯ আগস্ট সকালে একটি রুম বুক করেছিল একদিনের জন্য, একজন মহিলাও ছিল সঙ্গে।  
আর জি কর হাসপাতালে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিটের দোর্দন্ডপ্রতাপ সভাপতি আশিস পান্ডে।তো তারই হাসপাতালে ধর্ষণের পরে খুন হওয়া এক পিজিটি’র দেহ উদ্ধার হলো। ৮ তারিখে রাতে ঘটল এই বর্বরোচিত ঘটনা। ৯ তারিখ সকালে তা সামনে এল। গোটা রাজজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া, সরকারও নড়ে গেল। সেই সকালে তাকে সেমিনার রুম ক্রাইম স্পটেও দেখা গেল। মিডিয়া থেকে শুরু সবাই তখন ছুটে আসছে আর জি করে। আর সেই হাসপাতালের তৃণমূলের সভাপতি মোবাইল অ্যাপ থেকে সল্টলেকের একটি গেস্ট হাউসে রুম বুক করছে পালিয়ে থাকার জন্য!
কেন? এবার এটাই জানতে চাইছে সিবিআই। এই ছবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারও হাতে এসেছে। তদন্তের নতুন মোড়। এই আশিস পান্ডে তাহলে ৮ তারিখ রাতেও কি ছিল ঘটনাস্থল বা তার আশেপাশে? জানে অনেক কিছুই। সঙ্গে কাকে নিয়ে সেদিন গা ঢাকা দিয়েছিল মাত্র কয়েকঘণ্টার জন্য। কোন তথ্য প্রমাণ সরানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল ওই সময়টুকু? কেন না আবার ১০ তারিখ দুপুরেই তাকে দেখা যয় আর জি করে। হাসপাতালের গেটের সামনে প্রতিবাদী ছাত্র-যুব, জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র চিকিৎসকের মিছিলের ওপর হামলা চালাতে দেখা গেছিল তাকেই। লাঠি দিয়ে  স্টুডেন্ট হেলথ হোমের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ পবিত্র গোস্বামীর মাথায় বাড়ি মেরেছিল এই শিশুরোগের চিকিৎসক আশিস পান্ডে। তাহলে ৯ তারিখ দুপুর থেকে ১০ আগস্ট সকাল পর্যন্ত কেন গা ঢাকা দিয়েছিল এই তৃণমূল নেতা? ইতিমধ্যে তৃণমূল বিধায়ক, হাসপাতালেরই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যাম সুদীপ্ত রায়, সন্দীপ ঘোষের মোবাইল থেকে ৯ আগস্ট সকালে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন যায়, সেই তথ্যও হাতে এসেছে সিবিআই-র। অবৈধ ভাবে সন্দীপ ঘোষের বদান্যতায় হাউজস্টাফশিপ পায় এই আশিস পান্ডে। তাঁর হাউজস্টাফশিপের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবৈধভাবেই রয়ে গেছে আর জি করে। এই হাসপাতালের থ্রেট সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। কিন্তু আশিস পান্ডে এখন কোথায়? জানা যাচ্ছে না। মোবাইলে ফোন করলেও মিলছে না উত্তর।
 

Comments :0

Login to leave a comment