BSF Jawan

ঘরে ফিরলেন পূর্নম, অকাল দীপাবলি রিষড়ায়

রাজ্য জেলা

বর্ডার পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পরে বন্দি হয়েছিলেন বিএসএফ জওয়ান পূর্নম কুমার সাউ। ঘরে ফিরে পূর্নম বললেন, ভারতে আমার দ্বিতীয় জন্ম হল। শুক্রবার বাড়ি ফিরে তিনি বলেন,‘‘আমরা দেশের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকি, তাই ভয় পাইনা। আমরা ভয় পেলে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেব কি করে।’’.
দীর্ঘ একমাস! এপ্রিল ২৩, কর্মরত অবস্থায় ভুল করে বর্ডার পেরিয়ে পাক রেঞ্জার্সের হাতে আটক হন পূর্ণম সাউ। এদিন বাড়ি ফিরছেন এই খবর পেতেই খুশির হাওয়া ছিল পরিবার-সহ গোটা এলাকায়। বাবার সঙ্গে খেলার জন্য যে ছেলে অধীর অপেক্ষায় ছিল তার অবসান হলো।
ভারতের প্রবল কূটনৈতিক চাপে আটক বিএসএফ জওয়ানকে ২২ দিন পর ফেরাতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। ১৪ মে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরানো হয় পূর্ণমকে। ফোনে, ভিডিও কলে অন্তঃসত্বা স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় তাঁর। কিন্তু তখনই বাড়ি ফিরতে পারেননি। স্বাস্থ্যপরীক্ষা, পাকিস্তানে তাঁর উপর কী কী অত্যাচার করা হয়েছে, মানসিকভাবে পূর্ণম কতটা ঠিক রয়েছেন সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হয়। সেই পর্ব মিটতেই দেশে ফেরার ৯ দিনের মাথায় হুগলির বাড়িতে ফেরেন জওয়ান। পূর্ণমের বাড়িতে আসার খবর চাউর হওয়ার পরই রিষড়ায় তাঁর বাড়ি এলাকায় যেন উৎসবের মরশুমে পরিনত হয়। বাড়িতে শুরু হয়েছে অকাল দীপাবলির উৎসব। খুশির জোয়ারে ভেসেছেন পরিবারের সদস্যরা। 
এপ্রিল ভুল করে পাক ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিলেন হুগলির পূর্ণমকুমার সাউ। সেই থেকে পাক সেনার হাতে বন্দি ছিলেন তিনি। স্বামীর খোঁজে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী গিয়েছিলেন বিএসএফের হেড কোয়ার্টারেও। আশ্বাস নিয়ে ঘরে ফিরলেও আতঙ্ক ছিলই। ৭ মে অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিতে ভারতের ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পর কার্যত স্বামী ফেরার আশাই ছেড়েছিলেন রজনী। এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ফ্ল্যাগ মিটিং চলছিল। অবশেষে ১৪ তারিখ ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে মাথা নত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। এরপরই পূর্ণমকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় তাঁরা। তখনই জানা গিয়েছিল সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হবে। অবশেষে সব চিন্তার অবসান ঘটলো।
জওয়ানের বাড়ি ফেরার আনন্দে ওয়েলকামে গেট বাধা হয়েছে রিষড়া বাগখালে। হুডখোলা গাড়ি সাজানো হয়েছে। আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে বাড়ি। চলছে রান্না। কার্যত উৎসবের মেজাজ বিএসএফ জওয়ানের বাড়িতে।
এদিন পূর্বা এক্সপ্রেস ট্রেনে হাওড়া স্টেশনে নামেন পুর্নম কুমার সাউ। বিএসএফ জওয়ানের বাবা ভোলানাথ সাউ হাওড়ায় তাঁকে আনতে যান। আর তার ঘরে ফেরা ঘিরে সাজ সাজ রব ছিল সকাল থেকে রিষড়ার সাউ বাড়িতে। আলো দিয়ে সাজানো ক্যাটরিং এনে রান্নাবান্না কেক কেটে সেলিব্রেট করা সব আয়োজন করা হয়। তার জন্য বাগখাল জিটি রোডে হুডখোলা গাড়ি, ব্যান্ড পার্টি আর জাতীয় পতাকায় সুসজ্জিত শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। হাওড়া থেকে ফেরার পথে লিলুয়ার একটি মিষ্টির দোকানে দাঁড়িয়ে মিষ্টিমুখ করেন পূর্নম। ছেলেকে মিষ্টি খাইয়ে দেন বাবা ভোলানাথ সাউ। যেপূর্নম বলেন, সকলের আশির্বাদে আমি ঘরে ফিরতে পেরেছি। ভারতে আমার দ্বিতীয় বার জন্ম হল। বাবাকে জরিয়ে ধরতে দেখা যায় পূর্নমকে। তিনি বলেন, বাবা আমাকে জন্ম দিয়েছে তাকে অনেক তাকে দেখার পর এটুকু আবেগ তো হবেই। আমরা দেশের সীমানায় থাকি নির্ভয়ে। তাই ভয় খেয়ে গেলে দেশবাসীকে রক্ষা করব কি করে। আপাতত কুড়িদিন ছুটি। তারপর আবার বর্ডারে গিয়ে কর্তব্য পালন করব।

Comments :0

Login to leave a comment