editorial

বিহারে কি হারের ভয় পাচ্ছে বিজেপি

সম্পাদকীয় বিভাগ

বিহারের নির্বাচনের আগে একরকম আচমকাই ভোটার তালিকার বি‍‌শেষ পুনর্মূল্যায়নের অভিযান শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তাকে কেন্দ্র করে বিহারের সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তেমনি রাজনৈতিক পরিসরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া, সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অপ্রত্যাশিত এই পদক্ষেপে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শুধু ক্ষুব্ধই নয়, তারা মনে করছে এর পেছনে শাসক বিজেপি’র গভীর ষড়যন্ত্র আছে। রীতিমতো ছক কষে কয়েক কোটি গরিব, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেবার কাজে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজেপি আন্দাজ করছে আসন্ন ভোটে বিহারে ক্ষমতায় ফেরা সহজ হবে না। তাই বিজেপি বিরোধী সম্ভাব্য ভোটারদের যতটা সম্ভব তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হলে দুশ্চিন্তা খানিকটা লাঘব হয়। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের পক্ষে যেসব যুক্তি উত্থাপিত হয়েছে তার সদুত্তর এখনো নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে মেলেনি। অভিযোগ ভোটের কয়েক মাস আগে ভোটার তালিকায় অবিশ্বাস্যভাবে বিপুল সংযোজন হয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে এটা হওয়ার কথা নয়। অভিযোগ উঠেছে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে হরিয়ানাতেও ক্ষমতা রক্ষা করেছে। অথচ বিজেপি নিশ্চিত ছিল তারা হারবে।
বিরোধীরা মনে করছে এবার বিহারে নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে ভোটার তালিকার বি‍‌শেষ মূল্যায়ন করে নির্ভুল তালিকা তৈরিতে কোনও বিরোধ নেই। গণতন্ত্রের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মূল্যায়নের আড়ালে যদি থাকে শাসক দলের ভোটে জেতার স্বার্থ তাহলে তা কোনও অবস্থাতেই মানা যায় না। পদ্ধতি যেমনই হোক ভোটার তালিকা হবে নির্ভুল। অর্থাৎ সেখানে কোনও জালি বা ভুয়ো ভোটার থাকবে না এবং একজন নাগরিকের নামও তালিকার বাইরে থাকবে না। কিন্তু বিহারে যে প্রক্রিয়ায় তালিকা সংশোধন হচ্ছে তাতে আনুমানিক তিন কোটি নাম তালিকা থেকে বাদ চলে যেতে পারে। কারণ নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যে সব নথি চাওয়া হয়েছে তা জোগাড় করা ভারতের বাস্তবতায় গরিব, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অসচেতন, নিরীহ মানুষের কাছে ভীষণ কঠিন। ক্ষেত্র বিশেষে অসম্ভবও। তাছাড়া কোনও স্বাধীন গণতান্ত্রিক সার্বভৌম দেশের নাগরিকদের বার বার তাদের পরিচিতির প্রমাণ দিতে বাধ্য করা যায় না। মনে রাখতে হবে দেশ বা রাষ্ট্রের উৎপত্তি মানুষের জন্য। রাষ্ট্রের জন্য মানুষ নয়। মানুষকে পদে পদে বিপদে ফেলা, তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করা, কার্যত তাদের রাষ্ট্রের চোখ রাঙানির মুখে দাঁড় করিয়ে রাখা কোনও জনকল্যাণকামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। এটা স্বৈর শাসনেরই প্রবণতা। তাছাড়া একজন মানুষ বছরের পর বছর ভোট দিয়ে আসার পর তাকে নতুন করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অপরাধ। কোনও সরকার সেটা করতে পারে না। মৃত, অস্তিত্বহীন ভোটার অবশ্যই বাদ যাবে। সব নথি দিয়ে নতুন ভোটার হবে। কিন্তু একবার ভোটার হবার পর তাদের বার বার প্রমাণ দাখিলের জন্য তাড়িয়ে বেড়ানোর মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। বরং তাতে শাসক সম্পর্কে নাগরিকের সন্দেহ বাড়ে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে। শাসক নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে। ক্ষমতা ক্ষয়ের আশঙ্কা করছে। তাই চাপিয়ে দেবার, জোর জবরদস্তি করার স্বৈরাচারী মানসিকতা প্রবল হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment