Post Editorial

ভাষার অঙ্কে ভাতের প্রশ্ন, সঙ্ঘ-তৃণমূলের খেলা

উত্তর সম্পাদকীয়​

চন্দন দাস

পৃথিবীর প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন মানুষ বাংলায় কথা বলেন। বাংলায় কথা বলা মানুষ বাংলাদেশে আছেন, শ্রীলঙ্কায় আছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আছেন। আছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাভাষীরা আছেন। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাভাষায় কথা বলা মানুষ আছেন। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন সোশাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির অন্তর্গত বাংলা ডিপার্টমেন্ট আছে। 
ভারতে প্রায় সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এমন মানুষ আছেন, যাঁদের মাতৃভাষা বাংলা। স্বভাবতই পশ্চিমবঙ্গে বাংলাভাষীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু যে বেনারস থেকে জিতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, যে বেনারসে গ্রেপ্তার অবস্থায় থাকাকালীন মৃত্যু হয় মাস্টারদার সহযোগী অনুরূপ চন্দ্র সেনের, সেই বেনারসেও অনেক বাংলাভাষী থাকেন, অনেক অনেক বছর ধরে তাঁদের বসবাস। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো বাংলার অনেক মনীষীর জীবনে, কৃতিত্বে, সাফল্যে বাংলার বাইরের প্রদেশ জড়িয়ে আছে। 
বাংলাভাষী মানেই তাই বাংলাদেশি নয়। তবে এই কথা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই যে, বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষ সবচেয়ে বেশি থাকেন বাংলাদেশে। গত কয়েকমাস আসাম, ওডিশা, মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাভাষীরা। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে। অভিযোগ, তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁদের একাংশকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে। অসহায় মানুষ দীর্ঘক্ষণ, দিন রাত দুই দেশের মাঝে নো ম্যানস ল্যান্ডে বসে থেকেছেন। 
এই রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের অজুহাত তাঁরা বাংলাভাষী, তাই ‘বাংলাদেশি’। যাঁদের উপর এই অত্যাচার চালানো হয়েছে, তাঁরা মুসলিম ধর্মাবলম্বী। অর্থাৎ ভাষার নামে অত্যাচারের পিছনে আছে সেই ইস্যু— অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ। যা আরএসএস’র ইস্যু। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে মুসলমানরা অনুপ্রবেশ করে, সঙ্ঘের এই ইস্যু লোকসভায় হাজির করেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি এবং মমতা ব্যানার্জি, ২০০৫-এ। সেদিন উপাধ্যক্ষর মুখে কাগজ ছুঁড়ে দেশে ধিক্কৃত হওয়া তৃণমূল নেত্রী রাজ্যে অনুপ্রবেশ করা ভোটদাতাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। জ্যোতিপ্রিয় রেশনের চাল-চুরির অভিযোগে বেশ কিছুদিন জেলে কাটিয়ে কিছুদিন আগে ফিরেছেন। কিন্তু আরএসএস মমতা ব্যানার্জির সেই গোলমাল পাকানো ইস্যুটিকেই অন্যভাবে, বাংলাভাষার মোড়কে হাজির করতে চাইছে। লক্ষ্য— বাংলাভাষী মুসলমান মানেই বাংলাদেশের বাসিন্দা। তা তিনি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম সীমান্তে, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া মুরারইয়েরই হোন, কিংবা দার্জিলিঙ বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার। 
প্রসঙ্গটি তাই যতটা ভাষার, ততটা ধর্মেরও। তবে আরও বেশি ভাতের— অর্থাৎ রুটি রুজির। 
বাংলাভাষী তাই শুধু ‘বাংলাদেশি’, দুবাই কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নন—  এই অজুহাতের পিছনে আছে উপার্জনের প্রসঙ্গ। যাঁরা অত্যাচারিত হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে গরিব এবং শ্রমজীবী। প্রত্যেকের কাছে ভারতের বাসিন্দা হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করার প্রয়োজনীয় নথি ছিল। তাঁরা সেগুলি দেখিয়েওছেন। তবু তাঁরা নিপীড়িত হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে পশ্চিমবঙ্গে কাজ না পেয়ে ভিন রাজ্যে গেছেন। শ্রমের বাজারে তাঁরা সস্তার শ্রমিক। যে ‘সস্তা শ্রম’-এর কথা বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বারবারে বলেছেন দেশের শিল্পপতিদের সামনে। সেই কোটি টাকার সম্মেলনগুলির ফলে রাজ্যে বিনিয়োগ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের গরিব, কাজ না থাকা মানুষরা যেতে বাধ্য হয়েছেন ভিন রাজ্যের নির্মাণ সহ অন্য শিল্প প্রকল্পগুলিতে। সেখানে তাঁদের কাজের এবং জীবনের নিরাপত্তা নেই। প্রায় প্রতি মাসেই ভিন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। তাঁদের স্ত্রীরা নানাভাবে লাঞ্ছিত হন। ২০০৮ থেকে যে মন্দায় পুঁজিবাদ পড়েছে, তা থেকে আজও তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি। সেই মন্দার প্রভাবে কাজ কমছে সেই রাজ্যগুলিতেও। বেকার বাড়ছে সেখানকার শ্রমজীবীদেরও। এমন সময়ে ‘বাংলাভাষিদের জন্য স্থানীয়রা’ কাজ পাচ্ছে না— এই মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ‘বাংলাভাষীদের’ কাজ দিতে দ্বিধা করবেন সেখানকার মালিকরা। আবার আরও কম মজুরিতে কাজ না করলে ‘বাংলাভাষী তাই বাংলাদেশি’ বলে তাড়িয়ে দেবো যে কোনও সময়— এই অস্ত্রও তুলে দেওয়া হচ্ছে মালিকদের হাতে। উৎপাদন খরচ, নির্মাণ খরচ কমিয়ে লাভের অংশ বাড়ানোর চক্রান্তের অংশ এই ‘বাংলাভাষী মানেই বাংলাদেশি’ প্রচার, অত্যাচার। 
রাজ্যের সরকারের কী ভূমিকা? প্রথমত, রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো তার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পূরণে মমতা-শাসন চরম ব্যর্থ। পরিযায়ীদের কাজের বন্দোবস্ত করবেন বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। পারেননি। দ্বিতীয়ত, ভিন রাজ্যে কোনও অন্যায় কারণে রাজ্যের মানুষ আক্রান্ত হলে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার। মুখ্যমন্ত্রী আছেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব আছেন। একবারও এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। মুখ্যসচিবকেও তিনি কোনও পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেননি। কেন? কারণ— আক্রান্ত গরিব, শ্রমজীবীদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে ‘বাঙালি আক্রান্ত, বাংলাভাষী আক্রান্ত’ বলে নির্বাচনে ফয়দা তোলার অঙ্ক কষছে তৃণমূল। অথচ লকডাউনের সময় এই বাংলাভাষী শ্রমজীবীদের ট্রেনকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ বলে ব্যঙ্গ করার সময় ‘বাঙালি’ প্রশ্নটি মমতা ব্যানার্জি বিবেচনা করেননি। এমনকি ওডিশা সীমানায় ভিন রাজ্য থেকে আসা ‘বাংলাভাষী’ পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর রাজ্য পুলিশের হামলা, হয়রানিও তিনি আটকাননি।
এই ক্ষেত্রেও সঙ্ঘ এবং মমতা ব্যানার্জি বোঝাপড়া করেই এগচ্ছেন। বিশেষত যখন কাজ, মজুরির মতো দাবিতে দেশ এবং রাজ্যের শ্রমজীবীরা ঐক্যবদ্ধ লড়াই করছেন, দেশজোড়া সফল ধর্মঘট হয়েছে গত ৯জুলাই—  তখন শ্রমজীবীদের ঐক্যকে ভাঙার জন্যই ‘বাংলাভাষী মানে বাংলাদেশি’ প্রচার, অত্যাচার। তৃণমূলও এই ক্ষেত্রে কাজ, মজুরির প্রসঙ্গটিকে আড়াল করতে ‘বাঙালি আক্রান্ত’ অ্যাজেন্ডাকেই রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবে। এই ইস্যুতে বাংলার নিরাশ, তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মধ্যবিত্ত এবং বুদ্ধিজীবী অংশকে তাঁর পাশে ফের সমবেত করার অঙ্কও কষছেন মমতা ব্যানার্জি। 
এই সামগ্রিক ঘটনাক্রমে লুকিয়ে আছে আরএসএস’র এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার মিশন। সঙ্ঘের দুই মাধ্যম— সরাসরি বিজেপি, গোপনে তৃণমূল। আজকের বাংলাদেশে শুধু হিন্দুরা আক্রান্ত, আক্রমণকারীরা মুসলমান— এই প্রচার চলছে ধারাবাহিক। সেখানে মুসলমান ধর্মাবলম্বী গণতান্ত্রিক, প্রতিবাদী মানুষও গ্রেপ্তার হচ্ছেন, মার খাচ্ছেন, সে কথা সঙ্ঘ গোপন করার চেষ্টা চালিয়েছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে একটি ভারত-বিদ্বেষীদের দেশ হিসাবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে সঙ্ঘ। এরপর, তার পথ ধরে এসেছে ‘বাংলাভাষী মানে বাংলাদেশি’ প্রচার। অর্থাৎ এবার শত্রুর ভাষাও শত্রুই। 
বাংলাদেশেই পৃথিবীর সর্বাধিক বাংলাভাষী মানুষের বাস। সেই বাংলাদেশ, যেখানে ঊর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল নবগঠিত পাকিস্তানের শাসকরা। এই অবকাশে কিছুটা ইতিহাসে যাওয়া যাক। ১৯৪৮-র  ৮ফেব্রুয়ারি করাচিতে, পাকিস্তান সংবিধান সভায় সেই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হলো। পূর্ব পাকিস্তানের লিগ সদস্যদের মতোই কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তও তার বিরোধিতা করলেন, দাবি করলেন বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হোক। মুজিবর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে জানাচ্ছেন,‘‘শুধু পূর্ব পাকিস্তানের ধর্মভীরু মুসলমানদের ইসলামের কথা বলে ধোঁকা দেওয়া যাবে ভেবেছিল, কিন্তু তা পারে নাই।...এই সময় সরকার দলীয় মুসলিম লিগ নেতারা ঊর্দুর জন্য জান মান কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু জনসমর্থন না পেয়ে একটু ঘাবড়িয়ে পড়েছিলেন।’’
১৯ মার্চ, ১৯৪৮। ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তানের ঢাকায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেলেন কে? মহম্মদ আলি জিন্নাহ্‌। জিন্নাহ্‌ সেদিন ঢাকার ঘোড়দৌড় ময়দানের সভায় বলেছিলেন,‘‘ঊর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।’’ প্রায় ৫০০ জন বিরোধিতায় হাত তোলার হিম্মত দেখালেন। বললেন, ‘মানি না।’ তাঁদের অন্যতম মুজিবর রহমান। একই ঘটনা ঘটল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কনভেনশনে। ছাত্ররা সমস্বরে ‘পাকিস্তানের জনক’কে জানালো— ‘না, না, না।’
সেই ‘না’-র জোর দেখল বিশ্ব— ১৯৭১-এ। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া একটি দেশ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের অক্ষরে ছিনিয়ে আনলো স্বাধীনতা। সেই লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান অনুঘটক হলো ভাষা। হ্যাঁ, ‘অন্যতম প্রধান’। কারণ— সেই স্বাধীনতার লড়াই ভাষা আন্দোলনে জেগে উঠলেও পাকিস্তানের শাসকদের অর্থনৈতিক শোষণ এবং স্বৈরতন্ত্র ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ কারণ। 
ঘটনাক্রম জিন্নাহ্‌ আর আরএসএস যে অভিন্ন মতাদর্শের প্রতিভূ তা প্রমাণ করে। আরএসএস’র ‘গুরুজী’ মাধব সদাশিব গোলওয়ালকার। রাষ্ট্র সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদীর মতো স্ববংসেবকদের বেদ, কোরান, বাইবেল হলো ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড।’ গোলওয়ালকারের লেখা বইটিতে আছে সঙ্ঘের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের ধারণা। সেই সূত্রেই আছে ভাষা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য। গোলওয়ালকার আর জিন্নাহ্‌র কথার কী আশ্চর্য মিল!
উল্লিখিত বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে গোলওয়ালকার লিখেছেন,‘‘পরিশেষে বলা যায়, ‘জাতি’ শব্দের মধ্যে নিহিত ধারণাটি পাঁচটি স্বতন্ত্র উপাদানের একটি অবিচ্ছেদ্য সংমিশ্রণ—সেই বিখ্যাত পাঁচটি ‘ঐক্য’ হলো ভৌগোলিক (দেশ), জাতিগত (জাতি), ধর্মীয় (ধর্ম), সাংস্কৃতিক (সংস্কৃতি) এবং ভাষাগত (ভাষা)।’’ আর জাতি কী? গোলওয়ালকারের কথায়,‘‘এটি কিছু স্বতন্ত্র ধারণার অবিচ্ছেদ্য সংমিশ্রণ নিয়ে গঠিত, যা এর উপাদানগুলি একত্রিত থাকলে টিকে থাকে। অর্থাৎ এক ভূখণ্ড, এক জাতি, এক ধর্ম, এক সংস্কৃতি এবং এক ধর্ম— জাতির পরিচয়। গোলওয়ালকার তাঁর ভাবনা আরও স্পষ্ট করেছেন ‘বাঞ্চ অব থটস’-এ। ভারতে ভাষার বিষয়ে নিজের ভাবনা জানাতে গিয়ে গোলওয়ালকার লিখেছেন, ‘‘We have therefore to take Hindi in the interest of national unity and self-respect and not allow ourselves to swept off our feet by slogans like ‘Hindi imperialism’ or ‘domination of the North’ etc. 
মোদ্দা লাইন— ‘হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান।’
জিন্নাহ্‌রা ঊর্দু চাপানোর চেষ্টা করেছিলেন। বিজেপি চেষ্টা চালাচ্ছে, নানা ভাষার মেরুদণ্ড ভেঙে হিন্দি চাপানোর।
কত মানুষ কোন ভাষায় কথা বলেন, তার বিচারে পৃথিবীতে অষ্টম ভাষা, বাংলাকে ‘ভারত-বিদ্বেষী’ বাংলাদেশের, মুসলমান প্রধান ভূখণ্ডের ভাষা প্রমাণ করার ব্রত তাই বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি কাঁধে তুলে নিয়েছে। আর এই ক্ষেত্রে সঙ্ঘ-সিআইএ’র পরীক্ষাগার হিসাবে আসামের অভিজ্ঞতা আছে। যে রাজ্যে বামপন্থী, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল শক্তিশালী, সেই আসামে ‘বাঙালি খেদাও’-এর নামে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বামপন্থী, গণতান্ত্রিক পরিসর। লাভ হয়েছিল সঙ্ঘের। আর সেই বিছিন্নতাবাদীরা পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছে বিজেপি’র নেতা। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী তাই বলে উঠেছেন,‘মাতৃভাষা বাংলা লিখলে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।’ 
নানা দিক থেকে ‘বাংলাভাষী মানে বাংলাদেশি’ প্রচারের লক্ষ্য সেই এক—বামপন্থীদের ডাকে যখন মানুষ সাড়া দিচ্ছেন, শ্রমজীবীদের আন্দোলন শক্তিশালী হচ্ছে, তখন জনমানসে ঘৃণিত তৃণমূল এবং বিজেপি’র অক্সিজেন আমদানি।
 

Comments :0

Login to leave a comment