রবিবার দূর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় (ডিএসপি) কর্মরত অবস্থায় এক ঠিকা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আরও তিন জন ঠিকা শ্রমিক আহত হয়েছেন। মৃতের নাম পল্টু বাউরি (২৩)। তাঁর বাড়ি দুর্গাপুর গোপালমাঠ এলাকায়। আহত প্রশান্ত ব্যানার্জি, প্রশান্ত ঘোষ ও গোপী রামকে ইস্পাত হাসপাতাল থেকে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রত্যেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
এদিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দুই নম্বর ব্ল্যাস্ট ফার্নেসের সামনে স্ল্যাগ সাইডে। ইঞ্জিনে টানা গাড়ি করে বর্জ্য পদার্থ গলিত স্ল্যাগ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল স্ল্যাগ ইয়ার্ডে ডাম্পিং করার জন্য। যে ধাতব লাইন বা ট্র্যাক ধরে স্ল্যাগ নিয়ে যাওয়া হয় সেই লাইনের কাজে নিযুক্ত ছিলেন শ্রমিকরা। স্ল্যাগপটগুলি ডানদিক এবং বামদিক দুইদিকেই দোলনার মতন ঝুলে গিয়ে মাল খালাস করতে পারে। লকিং প্লেট দিয়ে স্ল্যাগপটগুলিকে ওয়াগনের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
চলমান অবস্থায় গলন্ত স্ল্যাগে পূর্ণ একটি স্ল্যাগপট হঠাৎ একপাশে কাত হয়ে সমস্ত স্ল্যাগ পড়ে যায়। ট্রাকের কাজে নিযুক্ত ঠিকা শ্রমিকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ঘটনা ঘটে। গলন্ত স্ল্যাগে চাপা পড়েন পল্টু। নিমেষের মধ্যে পুড়ে দলা পাকিয়ে যায় তাঁর দেহ। বহু শ্রমিকের চোখের সামনেই এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু কারো কিছুই করার ছিল না। প্ল্যান্টের বাতাসে জীবন্ত মানুষের পোড়া মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বীভৎস এই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছেন শ্রমিকরা।
খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে এমডি, ইডি (ওয়ার্কস) সহ আধিকারিকরা এসেছিলেন। সিআইটিইউ নেতা বিশ্বরূপ ব্যানার্জি, ললিত মিশ্র, সীমান্ত চ্যাটার্জি, কালী সান্যাল এবং অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা দুর্ঘটনাস্থল আসেন। গলন্ত স্ল্যাগ জল ঢেলে ঠান্ডা করতে অনেক সময় লেগেছে।
সেইল কর্তৃপক্ষ ‘দুর্ঘটনা-রহিত ইস্পাত’ কথাটা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু দুর্ঘটনা রোধের জন্য নিরাপত্তার দিকগুলির প্রতি অবহেলা করেই আসছে বলে শ্রমিক সংগঠন অভিযোগ করে আসছে। বিভিন্ন বিভাগীয় সেফটি কমিটিগুলিকে অকেজো করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে নিয়মিত সেফটি কমিটির বৈঠক হয় না। দুর্ঘটনায় বেশির ভাগ ঠিকা শ্রমিকরা মারা যাচ্ছেন ও আহত হচ্ছেন। তৃণমূলের ‘পরিবর্তন’-র জমানায় প্রশিক্ষিত পুরাতন দক্ষ ঠিকা শ্রমিকদের অনেকের কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ নেই, এমন যথেচ্ছ ঠিকা শ্রমিক বহাল হয়েছে ডিএসপি’তে শাসক দলের বদান্যতায়। প্রশিক্ষণবিহীন এমন ঠিকা শ্রমিকরাই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বেশি। এদিনের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় অবহেলার জোরালো অভিযোগ উঠেছে। গলন্ত স্ল্যাগ বোঝাই স্ল্যাগপট পরিবহনের আগে লকিং প্লেট ঠিকঠাক লাগানো রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে বিরাট গাফিলতি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। লকিং প্লেট দিয়ে স্ল্যাগপট আটকানো থাকলে একপাশে পট হেলে পড়ার কথা নয়।
সিআইটিইউ দুর্ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। আরো একবার দাবি উঠেছে, কাজের জায়গায় সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলি মৃত শ্রমিকের আশ্রিতের চাকরি ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।
DSP
ডিএসপি-তে গলিত স্ল্যাগে ঝলসে গেলেন ঠিকা শ্রমিক
×
Comments :0