মীর আফরোজ জামান - ঢাকা
চলছে রমজান মাস। আসন্ন ঈদুল ফিতর। সারা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার ইফতার। এর পরই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় যাওয়া। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে পরিবারের সবার জন্য পোশাক পছন্দ করা। কেনাকাটা শেষ করে প্রায় মধ্যরাতে ঘরে ফিরে আসা। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতি বছরকার পরিচিত দৃশ্য ছিল এমনই। তবে এবার পাল্টে গেছে সে চিত্র। দিনের আলো থাকতেই কেনাকাটা করে ফেলছেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা। শপিং মলগুলোয় সন্ধ্যার পর কমতে থাকে ক্রেতাদের আনাগোনা। রাতের প্রথম ভাগেই প্রায় খালি হয়ে যায় অধিকাংশ বিপণিবিতান। ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, নিরাপত্তার শঙ্কায় ক্রেতারা দিনের বেলায়ই কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। রাজনৈতিক পটপরির্তনের কারণেও ভাটা পড়ছে বেচাকেনায়। কে কখন এসে আক্রমণ করে সব ছিনিয়ে নিয়ে যায় এই আতঙ্ক সবার মনে।
সম্প্রতি ঢাকা শহরে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনা রাতের বেলায় ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে সন্ধ্যার পর বাইরে থাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন ঢাকার বাসিন্দারা। ফলে ঈদের কেনাকাটার সময়েও পরিবর্তন এসেছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে রাতে কেনাকাটা পরিহার করে দিনেই দ্রুত শপিং শেষ করছে তাঁরা। তেমনই একজন গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাবিব জুয়েল। তিনি বলেন, ‘‘আগে অফিস শেষ করে ইফতারের পর পরিবার নিয়ে মার্কেটে যেতাম। কিন্তু এবার রাতের বেলা মার্কেটে যেতে ভয় পাচ্ছি। খবরের কাগজে প্রতিদিনই ডাকাতির ঘটনা পড়ছি। তাই এবার বিকালের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলছি।’’
একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার। রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানে দুপুর আড়াইটা নাগাদ স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তিনি। ফাতেমা বলেন, ‘‘পরিবারের সবাই সাধারণত রাতের বেলায় শপিং করতে পছন্দ করে। দিনের বেলা রোজা রেখে শপিং করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সবাই। কিন্তু এ বছর আমার স্বামী দুপুরেই অফিস থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের নিয়ে শপিংয়ে গিয়েছেন। নিরাপত্তা নিয়ে এতটা শঙ্কিত আগে কখনো হইনি। মনে আতঙ্ক রয়েছে, শান্তি নেই।’’
এদিকে কেনাকাটার সময়সূচিতে এমন রদবদলে বিক্রেতাদের মধ্যেও হতাশা বেড়েছে। নিউমার্কেটের পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী মো. আতিক বলেন, ‘‘আগে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আমাদের বেচাকেনা হতো সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এবার রাত ৯ টার মধ্যেই মার্কেট খালি হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিক্রি অনেক কমে গেছে।’’
প্রায় একই রকম কথা বললেন বসুন্ধরা সিটির ক্লাব হাউজের ব্যবস্থাপক মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা মোটামুটি আশানুরূপ হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনকার টার্গেট পূরণ করতে পারছি। তবে সন্ধ্যার পর ক্রেতা কমে যায়। দুপুরের পরই ক্রেতাদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি থাকছে।’’
দেশের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোয় সাধারণত ঈদের কেনাকাটা করে উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্তরা। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরিবর্তিত হাওয়া বিপণিবিতানগুলোর ঈদুল ফিতরের বাজারেও লেগেছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তেমনই একজন বসুন্ধরা সিটিতে অবস্থিত শোরুম দেশী দশের প্রশাসন ব্যবস্থাপক মো. শরীফুজ্জামান রানা। স্বনামধন্য ১০টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড নিপুণ, কে-ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টিকে নিয়ে একই ছাদের নিচে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বেচাকেনা কমেছে আমাদের। দেশজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে শপিং করতে পারছেন না।’’ এছাড়া অভিজাতদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ দেশে না থাকাকেও বেচাকেনায় ভাটা পড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি।
এ বিষয়ে নুরজাহান মার্কেটের পুলিশের অক্সিলিয়ারি ফোর্সের ইনচার্জ বাদল মিয়া বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বছর সন্ধ্যার পরে ক্রেতা কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। তবে দু-একদিন ধরে কিছুটা বাড়ছে। আশা করি সামনে আরো বাড়বে।’’
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘‘রজমানে পুরো রাজধানী ঘিরেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিপণিবিতানগুলো ঘিরে অপরাধ দমনে পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। পাশাপাশি পুলিশের অক্সিলিয়ারি ফোর্সের সদস্যরা বিপণিবিতানগুলোয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছেন। টহল কাজ বৃদ্ধির পাশাপাশি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।’’
Eid Shopping
নিরাপত্তার শঙ্কায় ঈদের কেনাকাটায় আতঙ্কে ঢাকার মানুষ

×
Comments :0