Neymar- Messi

আজ রাত মেসি, নেইমারের স্বপ্ন-মাখানো

খেলা

Neymar- Messi

ফুটবলের জন্য এক চমৎকার রাত। একই চাঁদের আলোয় শুক্রবার মাঠে নামবেন লিওনেল মেসি, নেইমার। দু’জনের চোখেই বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। অভিন্নহৃদয় দুই বন্ধুর লক্ষ্যপূরণের পথে এই রাত হতেই হবে স্মরণীয়। দু’জনের সামনেই কঠিন প্রতিপক্ষ। আর্জেন্টিনা খেলবে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে।

 

 

 ইতিহাস বলছে, চার গোলে হার থেকে তিন গোলে জয় এমনকি বিশ্বকাপ ফাইনালে জয়- নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে এমনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেসির দেশের। অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপের চোয়াল-চাপা দৃঢ়তার ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে সাও পাওলোর ঘরানার শক্ত সংঘর্ষই হবে। মেসির শেষ বিশ্বকাপ, ধ্রুপদীকে মহাকাব্যে পরিণত করার শেষ সুযোগ। নেইমারের হয়তো আরেকটি সুযোগ আসবে কিন্তু যে ফর্মে এখন তিনি রয়েছেন সেই শিখরে থেকে নয়। বার্সেলোনায় একসঙ্গে খেলেছেন, দুর্ধর্ষ ছিল সেই জুটি। জোড় ভাঙার চার বছর পরে ফের প্যারিস স্য জাঁয় জুটি বেঁধেছেন। নেইমারের খেলার ধরনও বদলে দিয়েছেন মেসি। এমনি ব্রাজিলের কোচ তিতেও বলেছেন, বার্সেলোনায় গিয়ে ওর খেলা পালটেছে, এখন তো আরও পালটেছে। আগেই উইং দিয়ে দৌড়তো, গোল করত। এখন নিচে নেমে খেলা তৈরি করে। তিতের ভাষায়, ও এখন ধনুকও বটে, তিরও বটে। মেসিও এক সময়ে জাভি-ইনিয়েস্তার বাড়ানো বল থেকে অবিশ্বাস্য সব গোল করতেন, এখন নিচ থেকে খেলা তৈরিও করেন। 

 

 

 

মেসি শান্ত প্রকৃতির, নেইমার একটু অস্থির। দু’জনের পায়েই যাদু, দু’জনেই সাহসী, দু’জনেই ইউরোপের ময়দানে নিজেদের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখেছেন দীর্ঘ সময় ধরে। মেসির অসুবিধা, দল এখনও তাঁর ওপরে নির্ভরশীল। আটকে গেলে ম্যাচ বের করতে পারেন তিনিই। নেইমার একগুচ্ছ নতুন প্রতিভাকে পেয়েছেন যারা ব্রাজিলীয় ঘরানার খেলা জানে, আত্মবিশ্বাসী। তিনি তাই এখন অনেক স্বাধীন। একজনকে ছকের বাধ্যতায় বাঁধা যায় না, আরেকজন ছক ভাঙার কারিগর। 

 

 


ব্রাজিল- ক্রোয়েশিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মাঝমাঠে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ করে প্রথমার্ধে চমৎকার ফুটবল খেলে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে নেইমাররা মুখোমুখি হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্যরকম এক দলের। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা ক্রোয়েশিয়ার মূল শক্তি মাঝমাঠেই। বড় কারণ লুকা মড্রিচ। বয়স ৩৭ কিন্তু অফুরন্ত দম। ২০১৮-তে মড্রিচ প্রায় একাই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়াকে। এবারে তাঁর খেলা এখনও তত উজ্জ্বল নয়। কিন্তু তাতেও প্রতি ম্যাচে গড়ে ৬৮ বার বল স্পর্শ করেছেন। কোচ জ্লাতকো দালিচের পরিকল্পনায় এখনও তিনিই মূল মাথা। ব্রোজোভিচ, কোভাসিচকে নিয়ে মড্রিচই ক্রেয়েশিয়ার ফিল্ড মার্শাল। আক্রমণভাগকে বল বাড়ানোর মূল স্থপতি। মাঝমাঠ নিয়েই তাই মূল চিন্তা তিতের। 

 

 

মড্রিচের সঙ্গে পাল্লা দেবার জন্য তাঁর পুরানো সতীর্থ ক্যাসেমিরো রয়েছেন। কিন্তু তা যথেষ্ট না-ও হতে পারে। নেইমার মাঝমাঠে দাঁড়ালেও আসলে তিনি আক্রমণভাগেরই প্লেয়ার। আরও একটু রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের জন্য ফ্রেডকে নামানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাদ পড়বেন গত ম্যাচে ভালো খেলা এবং গোল পাওয়া পাকুয়েতা। এমনকি ফরোয়ার্ডে একজনকে কমিয়ে দিয়ে ফেবিনহোকেও নামানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাফিনহা হয়তো প্রথম একাদশে থাকবেন না। 

 

 


ক্রোয়েশিয়া শিবির স্বীকার করছে এই ব্রাজিলের মুখে কেউ পড়তে চায় না। চার বছর আগে পরপর তিন ম্যাচে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলে ফাইনালে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। এবারেও জাপানকে হারাতে পেনাল্টি শুট আউটে যেতে হয়েছে। এর পরেও মূলত মড্রিচের ফর্মের ওপরেই নির্ভর করছে ক্রোয়েশিয়া। দলের অন্যতম ভরসা ম্যাতেও কোভাসিচ বলেছেন, পৃথিবীর সকলেই জানে লুকা মড্রিচের মূল্য কী। ও আমাদের নেতা, আমাদের সেরা খেলোয়াড়। কোভাসিচ ম্যাচের আগে জানাচ্ছেন, ‘আমরা অনেকেই প্রিমিয়ার লিগে খেলি। সেখানে কঠিন শারীরিক খেলা হয়। আমরা ওই খেলায় অভ্যস্ত। 

 

 

টেকনিক্যাল গুণ আছে ঠিকই কিন্তু ব্রাজিলকে আটকাতে শারীরিক খেলাই খেলতে হবে। প্রত্যেকটা বল দখল নেবার জন্য ওই কৌশল দরকার হবে।’ জুন মাসে নেশনস লিগে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জয়ে বল দখলে রেখে খেলতে পেরেছিল ক্রোয়েশিয়া। কোভাসিচ বলেছেন, ওই উদাহরণ অনুসরণ করা যায়। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে বল দখলে রাখতে হবে। তবে এবার ব্রাজিল, নকশা অনুসরণ করতে পারি কিন্তু ম্যাচ পুরো আলাদা। 

 

 


ক্রোয়েশিয়ার কোচ দালিচ বলেছেন, ব্রাজিলই ফেভারিট। এদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে, উদ্দীপনা রয়েছে, খুব ভালো মানের খেলোয়াড় আছে। উপরন্তু নেইমার দলে ফেরায় শক্তি বেড়ে গেছে। আমরা সব সময়ে ওদের ওপরে চাপ রাখার চেষ্টা করলে তা ভালো হবে না। তেমনই ওদের বেশি জমি দেওয়া যাবে না। বুদ্ধি রেখে খেলতে হবে। 
তিতেও মাথায় রাখছেন ক্রেয়েশিয়া ম্যাচ টেনে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করতে পারে। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত গড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতে পারে। 

 

 

ক্রোয়েশিয়ার প্রশংসা করেই তিতে বলেছেন, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য এবং সমষ্টিগত টেকনিক্যাল দক্ষতা— দুই-ই রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য নিজের দলের খেলার মান আরও বাড়াতে। 
তিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, এখানে ব্রাজিলের জাতীয় দল খেলছে। তাদের নিজস্ব ঘরানা রয়েছে। এই প্রজন্মের প্লেয়াররা এই ঘরানাতেই খেলবে। আমাদের কাজ হলো তাদের আত্মবিশ্বাস জোগানো যাতে তারা মাঠে গিয়ে সেরাটা উজাড় করে দিতে পারে। চাপের মধ্যেও এইরকম ফুটবল খেলতে সাহস লাগে। 

 

 


তিতের চিন্তা দলের লেফট উইং ব্যাক নিয়ে সান্দ্রোর চোট রয়েছে। এখনও স্বাভাবিক অনুশীলন করেননি। তিতে স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, এখনও তিনি আশাবাদী নন। না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। একাধিক আঘাত রয়েছে ওর। 
রাইট ব্যাক ডানিলো শুরুর ম্যাচেই গোড়ালিতে আঘাত পেয়েছিলেন। তবে তিনি সেরে উঠেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে নিজের সম্পর্কে ডানিলো বলেছেন, আমি সুস্থ হয়ে গেছি। খেলার জন্য তৈরি। ক্রোয়েশিয়া খুব ভালো দল। সামনের সারির খেলোয়াড়রা রয়েছে। কঠিন ম্যাচ হবে। 
আর্জেন্টিনার দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ডি পল ও ডি মারিয়ার আঘাত। দু’জনের কেউই ম্যাচ খেলবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। কোচ স্কালোনি বলছেন, খেলা সমানে সমানে। কাউকেই ফেভারিট বলা যায় না। 

 

 


ধরা যাক, মেসি, নেইমার দু’জনেই আজ জিতলেন। তাহলে মুখোমুখি।  

Comments :0

Login to leave a comment