Economy Savings

৯ লক্ষ কমে ১৪ লক্ষ কোটিতে নেমেছে দেশে পারিবারিক সঞ্চয়

জাতীয়

 গত এপ্রিলেই দেশের প্রথম সারির আর্থিক পরিষেবা সংস্থা মোতিলাল অসওয়াল এক রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০২৩’র ডিসেম্বরে ভারতের পারিবারিক ঋণের পরিমাণ দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪০ শতাংশে পৌঁ‍‌ছে গিয়েছে, যা অতীতে কখনও হয়নি। বিপরীতে ওই সময়েই পরিবারগুলির নিট আর্থিক সঞ্চয়ের পরিমাণ নেমে এসেছে জিডিপি’র ৫ শতাংশে, যা শেষ ৪৭ বছরে সর্বনিম্ন। এবার কেন্দ্রের পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রক জানালো, ২০২১-২২ সাল থেকে ৯ লক্ষ টাকা কমে ২০২২-২৩ সালে দেশে পারিবারিক সঞ্চয়ের নিট পরিমাণ নেমে এসেছে ১৪ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকায়। এই এক বছরের ব্যবধানেই দেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ খরচের পরিমাণ ৭ লক্ষ ৬৯ হাজার কোটি টাকা থেকে প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়ে ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা আসলে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া অগ্রিম ঋণ হিসাবেই বিবেচিত হয় অর্থনীতির আলোচনায়। কারণ, প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ডেরই ব্যবহারকারীর আর্থিক সক্ষমতা অনুসারে অর্থ খরচের সীমা নির্দিষ্ট থাকে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এক জন ব্যবহারকারী কেনাকাটা থেকে শুরু করে নানা আর্থিক দায় মেটাতে পারেন, তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সেই টাকা মিটিয়ে দিতে হয়। না হলে বাড়তে থাকে সুদের বোঝা। ক্ষীয়মান সঞ্চয় এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের এই চিত্র দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের পারিবারিক আর্থিক অবস্থার নিদারুণ চিত্রকেই ফের সামনে নিয়ে এল বলে মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এটাই মোদীর ‘বিকশিত ভারত’-এর আসল চেহারা, কটাক্ষ করে ইয়েচুরি বলেছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ।
দেশের আর্থিক অবস্থা নিয়ে মোতীলাল অসওয়ালের গত এপ্রিলের রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় ই‍‌য়েচুরি বলেছিলেন, অতি ধনী পরিবারগুলিকে বাদ দিয়ে ভাবলে বোঝাই যাচ্ছে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলির দুর্দশা কোনও জায়গায় পৌঁছেছে। তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ। উলটে বেঁচে থাকার জন্য তাদের ধার করতে হচ্ছে। ধার করে পরিবারগুলি স্থাবর-অস্থাবর সম্প‍‌ত্তি কিনছে এবং বেঁচে থাকার জন্য তারা কোনও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে নেই বলে মোদী সরকার যে একপেশে প্রচার চালাচ্ছে, তা ফৌজদারি ধাপ্পাবাজি। বাস্তবে এফএমসিজি’র (আলুর চিপস, বিস্কুট, কেকের মতো প্যাকেটে মোড়া অল্প দামের ভোগ্যপণ্য) বিক্রি কমছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রের পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রক ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট স্ট্যাটিস্টিক্স (২০২৪) প্রকাশ করে পারিবারিক সঞ্চয়ের বেহাল দশার কথা জানানোর পরে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘বিকশিত ভারত’-এর নামে মোদীর প্রোপাগান্ডার বাস্তবতা হলো, নজিরবিহীন স্ত‍‌রে নেমে গিয়েছে পারিবারিক সঞ্চয়, নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছেছে পারিবারিক ঋণগ্রস্ততা, প্রকৃত মজুরি বদ্ধ দশায়, মুদ্রাস্ফীতির হার একটানা চড়া, বেকারত্ব ক্রমবর্ধমান, মানুষ বেঁচে আছেন ধার নিয়ে। মোতিলাল অসওয়ালের রিপোর্টে শুধু ভারতীয়দের পারিবারিক ঋণ বৃদ্ধি ও সঞ্চয় হ্রাসের মারাত্মক চিত্রকেই তুলে ধরা হয়নি, তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সঞ্চয় নাটকীয় মাত্রায় কমেছে আয় বৃদ্ধিতে শ্লথতার কারণে। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, পারিবারিক ঋণ বিপুল মাত্রায় বেড়েছে ব্যক্তিগত ঋণ লাফিয়ে বাড়ায়। এই সময়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছেন, এমন সাধারণ মানুষের সংখ্যা সবথেকে দ্রুত গতিতে বেড়েছে। ওই রিপোর্টের পাশাপাশি জানা গিয়েছে, গত কয়েক দশক ধরেই সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পের সংখ্যা কমানো হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে এমন প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে সবথেকে বেশি, এগারোশোর বেশি। ইয়েচুরি তা উল্লেখ করে মোদীর এই রাজনীতি ও নীতিকে পরাস্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মোদীর দুটো ভারত। একটা ঝলমলে ভারত তাঁর কাছের ধান্দাবাজদের জন্য, আরেকটা দুর্ভোগের ভারত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জন্য।   

Comments :0

Login to leave a comment