Editorial

হিমন্তের গো কেলেঙ্কারি

সম্পাদকীয় বিভাগ

এবার গোরু চুরি কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়ে পড়লেন আসামের কীর্তিমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। স্ত্রীর ব্যবসার নামে কোটি কোটি টাকার জমি হাতানোর গুরুতর অভিযোগের কিনারা এখনো হয়নি। এরই মধ্যে গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো হাজির হয়েছে সরকারি প্রকল্পের আড়ালে কয়েক কোটি টাকার গোরু লোপাটের ঘটনা। সরকারি প্রকল্পের জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য থেকে আনা গোরুর একটা বড় অংশ প্রকল্প ক্ষেত্রে পৌঁছানোর আগেই মাঝপথে হাওয়া হয়ে গেছে। রেল স্টেশনে রীতিমতো গোরুর হাট বসিয়ে মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ ও তাদের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে ৯০টি গোরু। বাকি ২১০টি গোরু শেষ পর্যন্ত দরং জেলার গোরুখুটি কৃষি প্রকল্পে পৌঁছালেও তার ৫৬টি নাকি মরে যায়। অবশিষ্ট ১৫৪টি গোরু নাকি গুজরাটে ফেরত যায়। গোটা বিষয়টিই কেমন সন্দেহজনক, অস্বচ্ছ এবং রহস্যে মোড়া। হঠাৎ করে আসাম সরকারের গো-পালনে তৎপর হলো কেন? নিজেদের গোবলয় অপেক্ষাও বেশি গোভক্ত প্রমাণ করার জন্য নাকি গো-পালনের আড়ালে সরকারি অর্থে গোরু হাতানোর উদ্দেশ্যে। ঠিকঠাক তদন্ত না হলে জানা যাবে না।
এই গোরু কেলেঙ্কারির সূত্রপাত উগ্র হিন্দুত্ববাদী আসাম সরকারের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিদ্বেষ থেকে বিভাজনের রাজনীতির আবহে। যেখানে এই গোরু প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা মাথা খাটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বার করেছেন সেখানে দশ হাজার বাংলাভাষী মুসলিমদের বাস। বংশ পরম্পরায় বসবাসকারী এই মুসলিমদের অবৈধ বাংলাদেশী মুসলিম বলে প্রচার করে মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন তারা নাকি শিব মন্দির দখল করছে। তার আগেই ষড়যন্ত্রের ছক অনুযায়ী নিজের ভাইকে এই জেলার এসপি’র দায়িত্ব দেন। শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। নির্মম অমানবিকভাবে নিরীহ গরিব মানুষগুলির ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়। অতঃপর সেই ফাঁকা জমিতে ঘোষণা হয় গোরুখুটি কৃষি প্রকল্পের।
এই প্রকল্পের জন্য যে ৩০০ গোরু গুজরাট থেকে কিনে আনার ব্যবস্থা হয়। পশু চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন গোরুগুলি বেশিরভা‍‌গই অসুস্থ এবং বন্ধ্যা। আপত্তি সত্ত্বেও হিমন্তের সরকার সেই ৩০০ গোরু কেনেন এবং ট্রেনে করে গুজরাট থেকে রঙ্গিয়া স্টেশনে নামানোর পর সম্ভবত অপেক্ষাকৃত সুস্থ ৯০টি গোরু নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে বিলি করা হয়। বাকি ২১০টি প্রকল্পে পৌঁছানোর কয়েকদিনের মধ্যে ৫৬টি মরে যায়। পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে দেখে অবশিষ্ট ১৫৪টি গোরুর সব কটিই ফের গুজরাটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন রহস্য দানা বাঁধছে ৯০টি গোরু নিয়ে। গোরু প্রাপকদের নানা জন নানা ভাষ্য দিচ্ছেন। বলছেন সরকারের কাছ থেকে তারা গোরু কিনেছেন। কৃষি প্রকল্পের জন্য আনা গোরু সরকার প্রকল্পে পাঠানোর আগেই বিক্রি করে কি করে? আসাম সরকার কি এখন গোরু কেনাবেচনার ব্যবসা শুরু করেছে? আবার প্রকল্পের প্রধান বলছেন প্রকল্পে ১৫০টি’র বেশি গোরু রাখার জায়গা নেই। তাহলে ৩০০ গোরু কেনা হলো কেন? নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের গোদান করে পুণ্যিলাভের জন্য। স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলে দিয়েছেন গোরু কেলেঙ্কারি নিয়ে যেন কোনও সংবাদ না হয়। সংবাদে জোর দিতে হবে গোমাংস উদ্ধার নিয়ে। রহস্যনজকভাবে আসামে ইদানীং মিশ্র এলাকায় মন্দির চত্বরে বা অন্যত্র নাকি গোমাংস মিলছে। তাকে ঘিরে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে মেরুকরণের চেষ্টা চলছে। এমন সাম্প্রদায়িক জিগিরের আড়ালে চাপা দেবার চেষ্টা হচ্ছে গো চুরির কেলেঙ্কারি। এখন প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে এত গোমাংস আসছে কোথা থেকে? মুখ্যমমন্ত্রীর কৃষি প্রকল্পের মরা গোরু বা লোপাট হওয়া গোরুর মাংস নয়তো?
 

Comments :0

Login to leave a comment