Government workers

৯ মার্চ সরাসরি ধর্মঘট ডাকলেন সরকারি কর্মীরা

রাজ্য

Government workers

 

 বন্‌ধ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির জবাব এল ধর্মঘট ঘোষণায়। আগামী ৯ মার্চ ধর্মঘটের পথে যাচ্ছেন রাজ্যের কোষগার থেকে বেতন প্রাপক সমস্ত অংশই।
মঙ্গলবার রাতে শহীদ মিনার ময়দানের অবস্থান মঞ্চে উপস্থিত হয়ে রাজ্যে কর্মচারী ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিল দুই যৌথ মঞ্চ। এরাজ্যে মধ্যবিত্ত কর্মচারী আন্দোলনের ইতিহাস এখন নয়া অধ্যায় রচনার প্রহর গোনার অপেক্ষায়। বুধবার রাজ্য সরকারকে ধর্মঘটের নোটিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মবিরতির আন্দোলনে শামিল কর্মচারীদের ওপর শাসকদলের আক্রমণের প্রতিবাদে বুধবারই রাজ্যজুড়ে ধিক্কার দিবস পালন করতে চলেছে ধর্মঘটী কর্মচারীরা।


টানা দু’দিনের কর্মবিরতি জানান দিচ্ছিল আরও কর্মচারী আন্দোলনকে আরও প্রসারিত চেহারায় দেখতে। তা উপলব্ধি করে মঙ্গলবারই সন্ধ্যায় রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির দপ্তর কর্মচারী ভবনে বৈঠকে বসেন রাজ্যের কোষাগার থেকে বেতন প্রাপক কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চের নেতৃত্ব। ওই বৈঠকেই যোগ দেন শহীদ মিনারে অবস্থানরত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্ব প্রতিনিধিরা। দু’তরফের ইতিবাচক আলোচনায় আগামীদিনে রাজ্যে কর্মচারীদের স্বার্থে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার জন্য যৌথ আন্দোলনের নেতৃত্ব বেছে নেন শহীদ মিনারের অবস্থান মঞ্চকে। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতৃত্বে যৌথ কমিটির নেতারা পৌঁছে যান শহীদ মিনারের অবস্থান মঞ্চে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনার পর একযোগে এরাজ্যে ৯ মার্চ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি ও সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ। 

 


বকেয়া মহার্ঘভাতা, স্বচ্ছতার সঙ্গে শূন্যপদে নিয়োগ, অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের দাবির সঙ্গে বিভাজনের রাজনীতি সরিয়ে এরাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পালিত হবে ধর্মঘট। ৯ মার্চের ধর্মঘটকে সামনে রেখে আন্দোলনরত দুই যৌথ কমিটি কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এদিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ধর্মঘটের সমর্থনে নেওয়া একে অপরের কর্মসূচিতে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেবে। 
সোমবার শুরু হয়েছিল গোটা রাজ্যে। মঙ্গলবার পরিধি বাড়িয়ে আরও বহু কর্মচারীর যুক্ত হয়ে শামিল হলেন ন্যায্য, আইনগত ডিএ প্রাপ্তির আন্দোলনে।


এদিন বকেয়া ডিএ’র দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি। রাজ্য কোষাগার থেকে বেতনপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের যৌথ মঞ্চের আহ্বানে কার্যত সর্বাত্মক চেহারা নেয় বকেয়া ডিএ’র দাবিতে আন্দোলন। নিয়ম মেনে অফিসে এসে উপস্থিতির খাতায় সই করেছেন কর্মচারীরা। কিন্তু ফি দিনের নির্ধারিত কাজে কোনও কর্মচারীর সাহায্য পায়নি সরকার। কর্মবিরতি পালন করে ডিএ’র দাবিতে মিছিল করেছেন অফিস চত্বরে। দপ্তরকে শূন্য করে রাস্তায় নেমে স্লোগান তুলেছেন কর্মচারীরা। শত কন্ঠে স্লোগানে গলা মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মচারী আন্দোলন জানিয়েছে, ডিএ মারা সরকার/ আর নেই দরকার। 

 


দশক ধরে আর্থিক বঞ্চনার ক্ষোভের আগুন কর্মচারী মহলে ধিকি ধিকি জ্বলছিলই। ডিএ যে কার্যত কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত আইনি আধিকার, তা কলকাতা হাইকোর্টে স্বীকৃত হওয়ার পরও কর্মচারীরা প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন। তারসঙ্গে ডিএ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ে কর্মচারী বিরোধী নানান কটূ মন্তব্য চলছিল। এবার সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দেয় চিরকূটে মাত্র ৩শতাংশ ডিএ প্রাপ্তির ঘোষণা। শুরু হয়ে যায় টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি। কর্মবিরতির আন্দোলনে নেমে ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে রাজ্যের কোষাগার থেকে বেতন প্রাপক কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
সোমবারের পর এদিন সেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের নজির তৈরি হলো এরাজ্যে। বৃত্ত বাড়িয়েই কর্মচারীরা তাঁদের দাবির লড়াইয়ে শামিল হলেন। গতকালের মতো এদিনও খাদ্য ভবনে কর্মচারীরা কর্মবিরতির পাশপাশি ডিএ’র দাবিতে তুমুল বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন। গুটিকয়েক কর্মচারী জোগাড় করে তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠন কর্মবিরতির বিরোধিতা করে খাদ্য ভবনে মিছিল করতে নামে। কিন্তু ব্যাপক কর্মচারী সমাবেশের সামনে তাদের কার্যত খুঁজে পাওয়া যায়নি। খাদ্য ভবনের পাশপাশি এদিন কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং, নব মহাকরণ, পিএসএসি’র সদর দপ্তরে কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছিলেন কর্মচারীরা। 
কর্মবিরতির আন্দোলনে সবথেকে বড় প্রভাব পড়েছে কর্মচারীদের মধ্যে ভীতির পরিবেশকে সরিয়ে শামিল হওয়া। এদিন রাজ্যের এমন সব এলাকায় কর্মচারীরা বিশেষত মহিলা কর্মচারীরাও যেভাবে হুমকি উপেক্ষা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন তা নজিরবিহীন। কর্মচারীদের ভয় যে কাটছে তা টের পেয়েছে সরকার। ডিএ’র আন্দোলন এখন আর্থিক দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। কর্মচারীদের আত্মমর্যাদা পনরুদ্ধারের লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে।
তারই ফলশ্রুতিতে নবান্নকে বড় আঘাতের জন্য ধর্মঘটে যাচ্ছেন কর্মচারীরা।

Comments :0

Login to leave a comment