HATHRAS GURU DARSHAN

গুরু দর্শনের বলি

সম্পাদকীয় বিভাগ

অজৈবিক প্রধানমন্ত্রীর ডাবল ইঞ্জিনের গেরুয়া সরকারের অধীনস্ত উত্তর প্রদেশের হাথরাস আবার খবরের শিরোনামে। এর আগে এই হাথরাসেই এক দলিত কন্যাকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে খুন করেছিল তথাকথিত উচ্চ বর্ণের কয়েকজন। গেরুয়া বসনধারী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ একেবারে আদা জল খেয়ে নেমেছিল উচ্চবর্ণের ধর্ষক-খুনিদের আড়াল করতে প্রমাণ লোপাটের জন্য মধ্যরাতে পরিবারকে না জানিয়ে ধর্ষিতার দেহ পুড়িয়ে ফেলে। এই ঘটনায় মনুবাদী ধর্মোন্মাদ যোগী সরকারের ভূমিকা নিয়ে দেশময় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। সেই ঘটনায় যোগীর পুলিশ প্রমাণ করে দিয়েছিল ডাবল ইঞ্জিনের রাম রাজত্বে নিম্নবর্ণের মানুষের সম্মান নেই, মর্যাদা নেই, এমন কি ন্যায় বিচার পাবার অধিকারও নেই। চরম নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কের মধ্যে কোনোরকমে টিকে থাকতে হয় নিম্নবর্ণের মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের। নিম্নবর্ণের মানুষের বিরুদ্ধে হাজার অপরাধ করলেও, দলবদ্ধ ধর্ষণ-খুন করলেও শাসক দলের ঘেরাটোপে তাদের নিরাপত্তা নি‍‌শ্চিত হয়ে যায়। পুলিশের দায় তাদের অপরাধযোগ অপ্রমাণিত থাকার ব্যবস্থা করা।
সেই হাথরাসেই এবার এক স্বঘোষিত স্যুটেড বুটেড আধুনিক ধর্মগুরু ভোলে বাবার এক ধর্ম সমাবেশে পুরুষদের চরণ স্পর্শ করে এবং চরণের ছোঁয়ালাগা মাটি সংগ্রহ করে জীবন ধন্য করার তাগিদে প্রবল হুড়োহুড়ির মধ্যে পায়ের তলায় চাপা পড়েই মারা যায় অন্তত ১৩০ জন ভক্ত। তাতে মহিলারাই বেশি। আছে কিছু শিশু-কিশোর-কিশোরীও। এতবড় জমায়েত, ৮০ হাজারের অনুমতি থাকলেও জড়ো হয় লক্ষাধিক। পুলিশ অনুমতি দিয়েই খালাস। ফিরেও দেখেনি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকাঠামো আছে কি না। অ্যাম্বুলেন্স বা আপতকালীন চিকিৎসারও কিছু ছিল না। ট্রাক-‍টেম্পোতেই আহতদের নিয়ে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। ফলে বিস্তর বিলম্ব হয়। আবার স্থানীয় হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় যেতে হয়েছে দূরের হাসপাতালে। সেখানেও কোথাও চিকিৎসক ছিল না, কোথাও ছিল মাত্র একজন। ফলে চিকিৎসা শুরু করতেই কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। ফলে বিনা চিকিৎসাতেই মরতে হয় অনেককে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেমন কয়েক মাস আগে নিজেকে স্বঘোষিত পরমাত্মার প্রেরিত বলে ঘোষণা করেছিলেন তেমনি স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবাও আগে ধর্মগুরু ছিলেন না। ২০ বছর উত্তর প্রদেশ পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি করার পর চাকরি ছেড়ে তিনি ধর্মগুরুর পেশা বেছে নেন। গত ২৭ বছর ধরে তিনি উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, রাজস্থান সহ বিভিন্ন রাজ্যে ধর্মসমাবেশ করে ধর্মী‌য় জ্ঞান ও উপদেশ বিতরণ করছেন। লক্ষ লক্ষ তার ভক্ত। সবচেয়ে বেশি ভক্ত পশ্চিম উত্তর প্রদেশে। তাঁর আয়োজিত ধর্মসমাবেশে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা হাজির হন। ভোলে বাবাকে ধরে দেবতার কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করেন। অন্ধ ভক্তি আর অন্ধ বিশ্বাসের তাড়নায় ভক্তরা এতটাই হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েন যে গুরুদেবের চরম স্পর্শকেই মোক্ষলাভের উপায় মনে করেন। তার জন্যই পড়ি কি মরি বলে দৌড়। পায়ের তলায় পিষে অন্য ভক্তরা মরছে দেখেও কারও হুঁশ নেই। ১৩০ ভক্তকে পায়ের তলায় পিষে মেরে ফেলেছে অন্য ভক্তরা। ভোলেবাবা কিন্তু নির্লিপ্ত।

Comments :0

Login to leave a comment