Sunil Chhetri

আশা, অবসর জীবনেও স্বমহিমায় থাকবেন সুনীল

খেলা

দেড়শো ম্যাচ, চুরানব্বই গোল। অজস্র খেতাব। ঠিক কী চোখে ভারতীয়রা দেখেন সুনীল ছেত্রীকে? ক্রীড়াবিদের সংজ্ঞা ছাড়িয়ে জনমানসে দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতের প্রতিনিধি ঠিক কোন জায়গায় আছেন?  একথা সত্যি, ভারতের মাটিতে অজস্র তারকা ও খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদের জন্ম হয়েছে। হকিতে ধ্যানচাঁদ, ফুটবলে চুনী-পিকে-বলরাম, ক্রিকেটে সুনীল গাভাসকার-সচিন তেন্ডুলকার। সর্বশ্রেষ্ঠ না হলেও শ্রেষ্ঠদের তালিকায় থাকতেই পারে সুনীল ছেত্রীর নাম।  ভারতে ক্রীড়াবিদদের সামাজিক সম্মান ও গুরুত্ব অনেক বেশি যে কোনও সাধারণ ব্যক্তির তুলনায়। তাঁরা জনতার চোখের মণি, বহু মানুষের ব্যক্তি জীবনে ক্রীড়াবিদদের প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। সুনীল তাঁর বাইরে নন।  ১৯ বছর ধরে জাতীয় দলে তাঁর নজরকাড়া সাফল্য আগামী দিনে যে বহু তরুণের পথচলার পাথেয় হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আজ এআইএফএফ, বিভিন্ন ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রিকেট ফ্রাঞ্চাইজিরা পর্যন্ত সে কথা এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন। 
এমনিতেই ভারতীয় ফুটবলের মান বিগত প্রায় অর্ধ শতক ধরে অবনতির পথে। ’৬২-র  এশিয়া জয়ের পরে যুব এশীয় পর্যায়ে সাফল্য এলেও তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।  নেহেরু কাপের অগ্রগতিও উধাও হয়ে যায়।  এর পরেও আইএম বিজয়ন ও বাইচুং ভুটিয়ার মতো আন্তর্জাতিক মানের স্ট্রাইকারের যোগ্য উত্তরসুরি হিসাবে সুনীলের নাম করা যায় অনায়াসে। তাঁকে ঘিরেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানোন্নয়নের পথে হাঁটার চেষ্টা করেছে ভারতীয় ফুটবল। তাই যখন আজ তিনি ঘোষণা করছেন দুই দশকব্যাপী আন্তর্জাতিক ক্রীড়াজীবনের অবসানের কথা, তখন প্রায় সমাজের সর্বস্তরে ফুটে উঠেছে এক নির্ভরযোগ্য স্বপ্নের ফেরিওয়ালার বিদায়ের বেদনা। যাঁকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল পুনরুত্থানের স্বপ্ন। 
একসময় এই শহরে মোহনবাগান থেকে পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু সুনীলের।  সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় চুনী গোস্বামী ও সুকুমার সমাজপতির উত্তরসুরি হিসাবে আশুতোষ কলেজকে বিজয়ী করেন তিনি ফাইনালে গোল করে।  এরপর রাজ্য ছাড়েন। পরে দুই প্রধানে এসে খেলে গেলেও জীবনের সিংহভাগ কাটান বেঙ্গালুরুতে খেলে। অবশ্য বিয়ে করেছেন কলকাতারই বিখ্যাত এক ফুটবল পরিবারে। সেই শহরেই শেষ করবেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া জীবন। ৬ জুন যুবভারতীতে শেষ বার দেশের জার্সিতে কুয়েতের বিরুদ্ধে খেলেই বুটজোড়া তুলে রাখবেন তিনি।
তবে ফুটবল জীবনের বাইরেও ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ভাবনা তাঁর ছিল। তিনি ও নীরজ চোপড়া একসঙ্গে দিল্লিতে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রকাশ্যে সমালোচনা করে বলেছিলেন ‘কুস্তিগিরদের সঙ্গে এই ব্যবহার উচিত হয়নি। তাঁদের কথা ভাবা উচিত ছিল। আমি মনে করি অবস্থার পরিবর্তন ঘটবেই।’ অজস্র বিখ্যাতরা যখন কুস্তিগীরদের প্রতিবাদ-আন্দোলন এড়িয়ে গিয়েছেন, তখন চুপ করে থাকেননি ভারতীয় দলের অধিনায়ক। ক্রীড়াবিদ হিসেবে তাঁর সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন অকপটে। তাই তাঁর খেলোয়াড় জীবন থেকে সরে আসার ঘোষণায় ব্যথিত ক্রীড়াবিদরাও। অলিম্পিক পদকজয়ী নীরজ চোপড়া বলেছেন, “ক্যাপ্টেন, তুমি অনুপ্রেরণা। ভারতীয় ক্রীড়াজগতে তোমার প্রভাব কখনও মুছবে না।” ব্যাডমিন্টন তারকা পিভি সিন্ধুও ‘ক্যাপ্টেন’কে অবসর জীবনের শুভেচ্ছা জানান।
আশা করাই যায় মাঠের বাইরে অবসর জীবনেও একই মহিমায় নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে যাবেন সুনীল ছেত্রী, থাকবেন সামনের সারিতেই।    

Comments :0

Login to leave a comment