Tea Garden Workers Protest

প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন মোগলকাটার চা শ্রমিকরা

জেলা

উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অনিশ্চয়তা ও শোষণের বিরুদ্ধে নতুন করে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠল। বন্ধ চা বাগান দ্রুত খোলা, শ্রমিকবিরোধী শ্রমকোড বাতিল এবং রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের শ্রমিকবিরোধী নীতির প্রতিবাদে মঙ্গলবার বানারহাট ব্লকের মোগলকাটা চা বাগানে গর্জে উঠলেন শত শত চা শ্রমিক। জয়েন্ট ফোরামের উদ্যোগে এদিন বাগানের গেটে এক বিশাল গেটমিটিং অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনকে আরও তীব্র করার লক্ষ্যে আগামীকাল সরকারি দপ্তর অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে।

এদিনের সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জয়েন্ট ফোরামের আহ্বায়ক ও সিআইটিইউ’র রাজ্য সম্পাদক জিয়াউল আলম। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা তিলক ছেত্রী, সুখমইত ওঁরাও, অজয় মহালী সহ একাধিক শ্রমিক নেতৃত্ব। সভাস্থল জুড়ে ছিল শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল পরিবেশ বন্ধ বাগান খোলার দাবি, বকেয়া মজুরি ও বোনাস প্রদান এবং শ্রমকোড প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার হন শ্রমিকরা।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ ও সরকার পরস্পরের যোগসাজশে চা শ্রমিকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। একদিকে বাগান বন্ধ করে শ্রমিকদের অনাহার ও চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন শ্রমকোড চাপিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের বহু বছরের অর্জিত অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। এই দ্বিমুখী আক্রমণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’’ তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন,‘‘ ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ থেকে শুরু করে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির টাকা আত্মসাতের চক্রান্ত চলছে।বাগান মালিকরা বকেয়া মজুরি, বোনাস ও সামাজিক সুরক্ষার টাকা না দিয়েই বাগান ছেড়ে পালাচ্ছে, আর প্রশাসন কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এই পরিস্থিতিতে সংগঠিত আন্দোলন ছাড়া শ্রমিকদের বাঁচার আর কোনো পথ নেই’’।

বক্তাদের বক্তব্যে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকারের শ্রমিকবিরোধী ভূমিকার তীব্র সমালোচনা উঠে আসে। বলেন, রাজ্য সরকার মুখে চা শ্রমিকদের উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবে বন্ধ বাগান খোলা কিংবা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেয়নি। অন্যদিকে, কেন্দ্র সরকারের শ্রমকোড মালিকদের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যা শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা ধ্বংস করছে।
গেটমিটিং থেকেই আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জয়েন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আন্দোলন কেবল গেটমিটিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আগামীকাল এলাকার সরকারি দপ্তরে বৃহত্তর অভিযানের মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি তুলে ধরা হবে। বন্ধ বাগান অবিলম্বে খোলা, বকেয়া মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, পরিচয়পত্র প্রদান এবং শ্রমকোড বাতিল এই দাবিগুলিকে সামনে রেখেই এই অভিযান সংগঠিত হবে।

মোগলকাটা চা বাগানের শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ স্পষ্ট করে দিয়েছে, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে পাহাড়-সমতলের চা শ্রমিকরা আজ ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যই আগামী দিনে শ্রমিক আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠবে এমনই বার্তা এদিন মিলল মোগলকাটার গেটমিটিং থেকে।

Comments :0

Login to leave a comment