রবিবার বর্ণময় উদ্বোধনে দোহা যখন উচ্ছ্বাসে ভাসছে, প্যারিসে ঘনিয়ে এল বিষাদের ছায়া।
শুরু হলো কাতার বিশ্বকাপ। কে প্রতিযোগিতা জিতবে, তাই নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তর্কবিতর্ক। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর দিনই দুঃসংবাদ। মাঠে বল গড়ানোর আগেই ছিটকে গেলেন এবছরের ব্যালন ডি’অর বিজেতা। শনিবার অনুশীলন করার সময় উরুতে গুরুতর চোট পেয়েছেন করিম বেঞ্জিমা। চোটের জন্য তিনি সরে দাঁড়ালেন বিশ্ব ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে। গত বারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বড় ভরসা ছিলেন তিনি। দলের স্বার্থেই নিজেকে প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে নিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার।
তাঁর এমআরআই করা হয়েছে। মাঠে ফিরতে তাঁর অন্তত তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। ফ্রান্সের ফুটবল সংস্থা সরকারিভাবে বেঞ্জিমার ছিটকে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। অনুশীলনের সময় বাঁ পায়ের থাইয়ে চোট পান বেঞ্জিমা। মাঠেই যন্ত্রণা অনুভব করেন। দ্রুত দোহা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। করা হয় এমআরআই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর ‘ফেমোরাল রেকটাস ইনজুরি’ হয়েছে। এই চোট নিয়ে খেলা সম্ভব নয়।
মেসি, রোনাল্ডোকে নিয়েও সংশয় ছিল। মেসি শুক্রবার অনুশীলনে আসেননি, শনিবার নামলেও একা একা অনুশীলন করেছেন। দেখে মনে হয়েছে বল নিয়ে অনুশীলনের পরিবর্তে পায়ের ব্যয়ামই করছেন বেশি। তাঁর টেন্ডনে আঘাত রয়েছে। আর্জেন্টিনা দলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, মেসি মঙ্গলবার নামবেন। রোনাল্ডোর আবহাওয়াজনিত সংক্রমণ হলেও রবিবার অনুশীলন করেছেন। আগেই ছিটকে গেছেন আরেক আকর্ষণ সেনেগালের সাদিও মানে। এর মধ্যেই বেঞ্জিমার আঘাত বিশ্বকাপের রঙ অনেকটা হলেও আবছা করে দিল।
১৯৮২ থেকে যারা ব্যালন ডি’অর পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে এই প্রথম কেউ যিনি বিশ্বকাপ খেলতে পারছেন না। শেষ বিশ্বকাপের ফ্রান্সের দলে আইনী জটিলতায় জায়গা হয়নি বেঞ্জিমার। এবারও তাঁর ছিটকে যাওয়ায় হতাশ আবিশ্ব ফুটবলপ্রেমীরা। হতাশ ফ্রান্স শিবির। তিনি নিজেও। ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ মরসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১৩১ গোল করেছেন। গত মরসুমে প্রায় একাই রিয়ালকে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন করেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে জিতিয়েছেন। ৪৪ গোল করেছেন ক্লাবের হয়ে। চলতি মরসুমেও দারুণ ছন্দে ছিলেন বেঞ্জিমা। নিষেধাজ্ঞার পর্ব পেরোতে নেশন কাপে দেশাঁর ডাক পেয়েছিলেন। এমবাপের সঙ্গে জুটিতে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। তাঁর এ বছরের ব্যালন ডি’অর পাওয়া ছিল প্রশ্নাতীত।
এই নিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ লড়াই থেকে ছিটকে গিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ৩৪ বছর বয়সি বেঞ্জিমা। তিনি বলেছেন, ‘দল যাতে বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে পারে, তাই নিজেই জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছি। আমার জায়গায় অন্য কেউ এলে দলকে সাহায্য করতে পারবে। কঠিন সময়ে পাশে থাকার জন্য এবং সমর্থন করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।’ বেঞ্জিমা আরও বলেছেন, ‘জীবনে কখনও হাল ছেড়ে দিইনি। কিন্তু এ বার আমি দলকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। দলের কথা আগে ভেবেছি।’
গত বারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স খেতাব ধরে রাখার পথে একের পর এক বাধার সম্মুখীন। শুরু হওয়ার আগে একের পর এক চোট নিয়ে জর্জরিত তারা। এনগোলো কান্তে, পল পোগবার মতো তারকারা আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন। স্কোয়াডেই রাখা হয়নি তাদের। কাতারে পৌঁছেই চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিমপেম্বে। এবার আক্রমণভাগের মূল কারিগরের ছিটকে যাওয়ায় বিষন্ন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশাঁ বলেছেন, ‘খুবই হতাশাজনক ঘটনা। ওকে না পাওয়া আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। বেঞ্জিমা খুব ভাল ছন্দে ছিল। দারুণ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল ওকে। এ বারের বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে মুখিয়ে ছিল। আমাদের পরিকল্পনা ধাক্কা খেল।’
রিয়াল মাদ্রিদ স্ট্রাইকারের পরিবর্তে দলে ডাক পেয়েছেন অ্যান্টনি মার্শিয়াল। অ্যান্টনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লেফট উইঙ্গার। তিনি ও করিম বেঞ্জিমা দু’জনেই ২০২১ উয়েফা নেশনস লিগের বিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন।
World cup
ছিটকে গেলেন বেঞ্জিমা
×
Comments :0