কলকাতার স্টেট অব এক্সেলেন্স সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমের আগুন চোখে আঙুল দিয়ে ফের দেখিয়ে দিল নির্বাপণ ব্যবস্থার দারিদ্রতা। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার ওই মাল্টি সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লাগা আগুনের আতঙ্ক শুক্রবারেও ছাড়েনি। আগুনে অল্পবিস্তর ক্ষতি হলেও সেখানে ভর্তি রোগী ও পরিজনদের মনে আতঙ্ক যেন কিছুতেই যাচ্ছে না। রাতের আগুনের জেরে শুক্রবার সকাল থেকে সেখানকার রোগীদের হয়রানিও হচ্ছে চূড়ান্ত।
রাতের আগুনে হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন পুড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক ইউএসজি মেশিনের। কোনও হতাহত না হলেও আগুন নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য সচিবের মন্তব্য মারাত্মক চিন্তায় ফেলেছে পরিজনদের। শুক্রবার এসএসকেএম পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে না কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য আগুন লেগেছে। এই কথা বলেই বৃহস্পতিবার রাতের আগুনে অন্তর্ঘাতের তত্ত্বকে জুড়ে দিলেন নিগম। এবিষয়টি তেমন খোলসা করেননি তিনি। তবে পুলিশ-দমকলের পাশাপাশি আগুন লাগার প্রকৃত কারণ নিয়ে নিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি কিন্তু অন্য বার্তা দিচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার কিছু আগে এসএসকেএম হাসপাতালের নিউরোসার্জারি জরুরি বিভাগে আগুন লাগে। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় ওই আগুন নিভিয়ে দেয়।
সরকারি হাসপাতালে দমকলের গাড়ি রেখে দেওয়াটা এযাত্রায় কাজে এসেছে। তবে আগুনের বীভৎসতা প্রথমযাত্রায় ভালোই ছিলো। আর সেইজন্য জরুরি বিভাগে থাকা ৪৫ জন রোগীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রমা ডিজাস্টার ওয়ার্ডে। কোনোমতে রাতটা কাটিয়ে দেওয়ার পর সকাল হতেই বোঝা যায় ক্ষয়ক্ষতির বহরটা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুক্রবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেন সেখানকার মূল্যবান সিটি স্ক্যান মেশিন পুড়ে গেছে। দুটি ইউএসজি মেশিন আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি, রামরিক ও ট্রমা কেয়ারে নিয়ে গিয়ে সিটি স্ক্যান করতে হচ্ছে। ইউএসজি মেশিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় অত্যন্ত জরুরি ক্ষেত্রে রোগীদের ইউএসজি করতে হচ্ছে ট্রমা কেয়ার, স্ত্রীরোগ বিভাগ ও মেন বিল্ডিংয়ে থাকা মেশিনে। বহিরাগত রোগীদের ক্ষেত্রে এদিন কোনও সুবিধা মেলেনি বলে জানা গেছে।
তিন মাস পরে স্ক্যানের ডেট পেয়েও শুক্রবার অনেকে স্ক্যান করাতে পারেননি বলে অভিযোগ। ঠিক কী করে আগুন লাগলো তা খুঁজে বার করতে পাঁচ সদস্যের কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন হাসপাতালের সুপার। শুক্রবার ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করেছেন ছয় সদস্যের রাজ্য ফরেনসিক দল। তবে এদিন খোদ স্বাস্থ্য সচিবের এসএসকেএম হাসপাতালে যাওয়াটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ শেষে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
তিনি বলেন, ‘এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কী কারণে এমনটা হলো। সবদিক আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে না যে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটা হয়েছে। আমাদের এখানে ফায়ার অডিট, ফরেনসিক অডিট সব হয়।’ যে হাসপাতালে নিয়মিত ফায়ার অডিট বা ফরেনসিক অডিট হয়, সেখানে হঠাৎ বড় আগুন ঘটে যাওয়াটা অন্তর্ঘাত ছাড়া কী হতে পারে, সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি।
রাতে বন্ধ স্ক্যান মেশিন থেকে আগুন লাগার বিষয়টিও বেশ বেমানান। পুলিশের তরফেও আলাদা তদন্ত করার হচ্ছে। তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের মতে, তদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কোনও কিছু নিয়ে মন্তব্য করাটা শুধুই অনুমান। আর সেই অনুমানের কোনও ভিত্তি থাকতে পারে না।
Comments :0