Medinipur Medical

স্ত্রীকে হত্যা করেছে, বলছেন স্যালাইনে মৃতের স্বামী

রাজ্য জেলা

জাল স্যালাইনে মৃত প্রসূতি মামনি রুইদাসের স্বামী ওপরিবার।

চিন্ময় কর- মেদিনীপুর
মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে জাল ওষুধ ও স্যালাইনে মৃত প্রসূতির একদিন বয়সী শিশুকে তড়িঘড়ি  হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের জানাচ্ছে সেই শিশু এখন অসুস্থ। সোমবার ভোর রাত থেকে অসুস্থ  শিশুটি। তাকে যাত্রীবাহি বাসে করে চিকিৎসার জন্য আসা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে। জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিম্নমানের স্যালাইনে প্রসূতি মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয় শুক্রবার ভোরে। তারপর  হাসপাতাল থেকে কেনো তড়িঘড়ি সেই শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া উঠেছে প্রশ্ন। সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ সেই শিশু অসুস্থ হয়ে পুনরায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে আসে পরিবারের সঙ্গে। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার দিনই রাত আটটায় যেমন যাত্রীবাহি বাসে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলো পরিবার, আর সেই যাত্রীবাহি বাসেই অসুস্থ শিশুকে নিয়ে এলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালে। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে বলছেন শিশুর পরিবার। 
মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী বলেন, ‘‘মামনির সন্তান আজ এসেছে। ডিহাইড্রেশন আছে বলে ওকে ভর্তি করিয়েছি আমরা। পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে। খুব গুরুতর কিছু না। খাওয়াদাওয়া করছে, অ্যাক্টিভিটিও ঠিক আছে।’’ কিন্তু শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি চেয়ার ছেড়ে চলে যান।
শুক্রবার ভোরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে এক প্রসূতি মৃত্যু হয়। ৩ জন প্রসূতিকে রবিবার গ্রীন করিডরে  কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ৩ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। একজনের নাম মাম্পি সিং(২২) নাসরিন খাতুন(২০-২৩) ও মিনারা বিবি(৩২-৩৩)। 
রোগীর পরিবারের দাবি মেদিনীপুর হাসপাতালে থাকাকালীন তাদের সঙ্গে চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ ছিল না। তাদের পুরো অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। তাদের বক্তব্য তিনজন রোগীকেই রক্ত দিতে হয়েছে, সেই রক্ত পর্যন্ত কলকাতা থেকে এসে নিয়ে যেতে হয়েছে। সেখানকার চিকিৎসক যে ওষুধ লিখেছিলেন এই ওষুধ পর্যন্ত পেশেন্ট পার্টিকে কিনে দিতে হয়েছে, একটা ওষুধের দাম তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। রোগীদের এই মেদিনীপুর হাসপাতাল থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়ার যে সিন্ধান্ত চিকিৎসকরা নিয়েছিলেন তা একপ্রকার রোগীর পরিবারকে অন্ধকারে রেখেই। প্রসূতিদের পরিবারের দাবি সবকিছুই গোপন করেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতাল।  
এদিন মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু বিভাগের সামনে মৃত মামনির স্বামী দেবাশিস রুইদাস স্ত্রী বিয়োগের বিষয়ে  বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রীকে ওরা হত্যা করেছে। সঠিক তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই। এখন এই একরত্তি ছেলেকে লালন পালন করবো কি ভাবে। আমার পরিবার ও আত্মীয়দের অনেকেরই  সিজার করা হয়েছিল। তখন  তো এইসব ভেজাল জিনিসপত্র ছিলো না। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল। মা নেই। ৫ দিনের শিশু এখন প্যাকেটের দুধে বাঁচছে। ডাক্তার প্যাকেট দুধ লিখে দিয়েছেন। এদিন শরীরটা বিশেষ ভালো না হওয়ায় শিশুটিকে সেই হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে। দিনমজুরি করে দিনে ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। কাজ পেলে তবেই  টাকা। না হলে হাত ফাঁকা।’’ তাঁর বক্তব্য মামনি সেই অভাবও ঠিক সামলে নিতেন। এ বার কী হবে? ছোট ছোট দুটো মা-হারা ছেলেমেয়ের। 

Comments :0

Login to leave a comment