TMC RSS

তৃণমূলের কৃষ্ণের জন্য সঙ্ঘের প্রার্থী বলরাম

রাজ্য

রায়গঞ্জ উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আরএসএস’র এক স্বয়ংসেবক। তবে বিজেপি’র হয়ে নয়। অন্য একটি দলের হয়ে। 
আগামী ১০জুলাই রাজ্যে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। তার অন্যতম রায়গঞ্জ। ৯জন প্রার্থী হয়েছেন সেখানে। আছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত। আছে বিজেপি এবং তৃণমূলের প্রার্থী। তৃণমূল প্রার্থী করেছে সদ্য হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে হেরে যাওয়া কৃষ্ণ কল্যাণীকেই। বিজেপি’র প্রার্থী হয়েছেন কিছুদিন আগে তৃণমূল থেকে বিজেপি’তে যোগ দেওয়া মানস ঘোষ। তাঁরা ছাড়া কোনও প্রার্থী হিসাবে আছেন আর একজনই। তিনি বলরাম চক্রবর্তী। প্রার্থীর হলফনামা জানাচ্ছে তাঁর দলের নাম ‘নর্থ বেঙ্গল পিপল্‌স পার্টি’। 
বলরাম চক্রবর্তীর দাবি,‘‘আমিই প্রকৃত বিজেপি। বিজেপি যাকে প্রার্থী করেছে তিনি জিতলে ফের তৃণমূলেই ফিরে যাবেন। কিন্তু ভোটের পরে আমি আবার বিজেপি-ই করব।’’ চক্রবর্তী জানান,‘‘আমি আরএসএস-এ আছি। আমি স্বয়ংসেবক। তবে এই নির্বাচনে আরএসএস তো সরাসরি নামেনি। ওরা নির্বাচনে নামে না। তবে তাদের সহায়তা আমি পাব।’’ 
প্রশ্ন উঠেছে এখানেই। আরএসএস তার এক স্বয়ংসেবককে উপনির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিল কেন? বিজেপি’র উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির এক নেতার কথায়,‘‘তৃণমূলের লোক এসে আমাদের দলে ঢুকে পড়ছে। তারা দলকে গ্রাস করছে। কলকাতা থেকে রায়গঞ্জ, সর্বত্র এই কাণ্ড চলছে। মানুষ অনেক জায়গাতেই কে তৃণমূল, কে বিজেপি আলাদা করতে পারছে না। তাই আলাদা প্রার্থী হয়েছে বিক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে।’’ প্রার্থী বলরামও নিজের ‘বিক্ষুব্ধ বিজেপি’ হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ বিধানসভা এলাকায় বিজেপি প্রথম স্থানে ছিল। এই পরিস্থিতিতে দলের বিরুদ্ধে ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে তিনি কী তৃণমূলের সুবিধা করে দিতে চাইছেন? এই প্রশ্নের জবাব দেননি বলরাম চক্রবর্তী। তবে ২০১৪-১৫ থেকে উত্তরবঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠা আরএসএস নিশ্চই তাদের স্ববংসেবক বলরাম চক্রবর্তীকে প্রার্থী হওয়ার অনুমোদন দিয়েছে সেই সব অঙ্ককে হিসাব করেই।  
কিন্তু নির্দল হিসাবে না দাঁড়িয়ে ‘নর্থ বেঙ্গল পিপল্‌স পার্টি’র নামে কেন প্রার্থী দিল বিজেপি’র বিক্ষুব্ধরা? আরএসএস’ই বা কেন ২০২১-এ তৈরি এই দলটিকে বেছে নিতে বলল? নর্থ বেঙ্গলের জন্য গড়ে ওঠা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চক্রবর্তী অবশ্য সঙ্ঘের কোনও যোগাযোগের কথা স্বীকার করেননি। তবে তিনি বলেছেন,‘‘জেলায় বিজেপি’র যিনি কিছুদিন আগেও সভাপতি ছিলেন, পরে দল থেকে বের করে দেওয়া হয় তাঁকে, তিনি এবং আরও কয়েকজন মিলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন সমিতি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। আমি সেই উন্নয়ন সমিতিতে আছি। আমাদের দল সেই সংগঠনের সঙ্গে মিলিত ভাবে নানা কর্মসূচি করেছি। আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। তারাই নির্দল প্রার্থী দিতে চেয়েছিল। আমরা বলি আমাদের দলের হয়ে প্রার্থী হোক।’’ সেই প্রার্থী স্বয়ংসেবক বলরাম চক্রবর্তী।
‘নর্থ বেঙ্গল পিপল্‌স পার্টি’ হঠাৎ ২০২১-এ তৈরি করতে হলো কেন? এই দলটির লক্ষ্যই বা কী? এরা কী উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য কিংবা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করতে চান? অনিমেষ চক্রবর্তী দাবি করেন,‘‘না, আমাদের তেমন কোনও লক্ষ্য এখন নেই। আমরা উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক উন্নতি চাই। উত্তরবঙ্গকে আলদা করার দাবি পরে বিবেচনা করা যাবে।’’ সিপিআই(এম)’র উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সম্পাদক আনওয়ারুল হকের কথায়,‘‘বিজেপি’র গোষ্ঠীকোন্দল প্রবল। মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতি, অপশাসনেও বীতশ্রদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে আমরা মানুষের জীবন যন্ত্রণার কথাই প্রচারে তুলে ধরছি।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment